শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

শবে বরাতের আমল

জহিরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০৯ এএম

শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বারাত’ অর্থ সৌভাগ্য। এ দুটি শব্দ নিয়ে ‘শবে বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী। হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি বিশ্ব মুসলিম সমপ্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মহান আল্লাহ এ রাতে বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আল্লাহর দরবারে সকাতরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
নফল নামাজ, জিকির-আজকার, কোরআন মজিদ তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য। একইসঙ্গে মরহুম আত্মীয়-স্বজনসহ চিরবিদায় নেয়া মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতেও সন্ধ্যার পর থেকেই মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থেকে শেষ রাতে সেহরি খেয়ে পরদিন নফল রোজা রাখেন। শাবান মাসের পরেই আসে পবিত্র মাহে রমজান। তাই শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। শবে বরাতের মধ্য দিয়েই শুরু হয় রমজান মাসের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি।
হযরত আয়শা (রা.) বলেন, শবে-বরাতে চলতি বছরে জন্মগ্রহণকারী আদম সন্তানদের নাম এবং চলতি বছরে মৃত্যুবরণকারী আদম সন্তানদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রাতে আদম সন্তানদের আমল উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তাদের রিযিক অবতীর্ণ হয়। (বায়হাকী)
মহানবী (সা.) শবে-বরাত অর্থাৎ ১৫ শা’বানের দিনে রোজা রাখা এবং রাতে ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। মিশকাত শরীফে হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত, হুজুর (সা) ইরশাদ করেন, শা’বানের ১৫ তম রজনী উপনীত হলে তোমরা সে রাতে অধিক হারে আল্লাহর ইবাদত করো। অতঃপর দিনের বেলা রোজা পালন করো। সেদিন আল্লাহ্ তায়ালা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হন এবং আহবান করতে থাকে আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করবো; আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী, আমি তাকে রিজিক দান করবো; আছে কি কোন বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন। (মিশকাত)।
এ রজনীতে আল্লাহ তায়ালা কিছু সংখ্যক মানুষ ছাড়া সমস্ত ঈমানদার ব্যক্তির গুনাহ ক্ষমা করেন। পরিপূর্ণ তওবা ব্যতীত এ রাতে যাদের গুনাহ মাফ করা হবে না তারা হলো : ১. মুশরিক ২. হিংসুক ৩. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ৪. পায়ের নিচের গিরা ঢেকে কাপড় পরিধানকারী ৫. মদ্যপানকারী ৬. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ৭. যাদুকর ৮. গণক-ঠাকুর ৯. হস্তরেখা দেখে ভাগ নির্ণয়কারী ১০. গায়েবের সংবা“াতা ১১. অন্যায়ভাবে ট্যাক্স আদায়কারী ১২. জালিম সৈনিক ১৩. ঢোল, তবলা হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদক ১৪. গায়ক-গায়িকা, বিদআতী ১৫. জুয়াখেলায় অভ্যস্ত ব্যক্তি।
হাদিস শরীফে শবে-বরাতের (নিন্মোক্ত পালনীয় আমল উল্লেখ রয়েছে : ১) কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বা আয়োজন না করে সাধারণভাবে এ রাতে কবরস্থানে যাওয়া এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্যে দোয়া করা, দরুদ-ইস্তেগফার পাঠ করে দোয়া করা।
২) এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত তথা কুরআন তেলাওয়াত করা, অধিকহারে দরুদ শরীফ পাঠ করা এবং নফল নামাজ পড়া। তবে নামাজের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বরং সামর্থানুসারে জামাত ব্যতীত অনির্দিষ্টভাবে নামাজ পড়া এবং নিজের জন্য ও সকল মুসলমানের জন্য রোজা রাখা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
হাফেজ আইয়ুব আনসারী ২৮ মার্চ, ২০২১, ৬:০৯ পিএম says : 0
ধন্যবাদ ইনকিলাব পরিবার
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন