শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কুষ্টিয়ায় ঝুঁকি জেনেও কমছেই না তামাক চাষ

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২১, ৪:৪৪ পিএম

কুষ্টিয়ায় কোনোভাবেই কমছে তামাক চাষ। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রলোভনে জীবনের ঝুঁকি জেনেও, তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। ফলে তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং ফসল আবাদ কমে যাচ্ছে।

জেলার মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর উপজেলার ফসলি জমিতে শুধু তামাকের ক্ষেত। তবে ঝুঁকি জেনেও সকাল থেকেই এর পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা।

অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ফলে ফসলি জমি দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। জেলার তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় প্রস্তাবে তামাক চাষ করে সর্বশান্ত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা। আর লাভবান হচ্ছে তামাক কোম্পানি এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞের মতে, তামাক চাষ বন্ধ না হলে এ জেলায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। আর কৃষি বিভাগ বলছে, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে অন্য ফসল চাষে। ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে কুষ্টিয়ায় তামাকের আবাদ।

তামাক চাষিরা জানান, তামাক লাগানোর শুরু থেকেই বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা আমাদের সহায়তা করে থাকে। সার-বীজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করে এবং ভালো দামেরও নিশ্চয়তা দেয়। তাছাড়া টার্গেটের জন্য আলাদাভাবে কার্ড তৈরি করে দেয়। যার ফলে চাষিরা তামাক চাষে উৎসাহিত হয়। বিক্রিতেও কোনও ঝামলা হয় না।


সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, তামাক কোম্পানিগুলো তামাক চাষের উপকরণ কৃষকদের বাড়ি বাড়ি সরবরাহ ও তামাক বিক্রি করে নগদ অর্থ দেয়ায় তামাক চাষ কমছে না। কোম্পানির লোক বাড়িতে এসে সার বীজ সব রকম সুবিধা দেয়। তামাক আবাদ করলে চাষিরা কিছু টাকা বেশি পায়।

কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করার ফলে ভালো ফলন হয়। ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) সহ বিভিন্ন কোম্পানি চাষিদের সহায়তা করে থাকে। আবার বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। অথচ, টমেটো বা সবজির আবাদ বেশি হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিংবা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দাম পাওয়া যায় না। তাই ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকলে এবং চাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা না গেলে কৃষকরা অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হবেন না।

তামাক চাষের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে জানিয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ গৌতম কুমার রায় বলেন, 'তামাকের চাষ করতে যেয়ে মাটি নষ্ট হচ্ছে, ফসল হচ্ছে না। বাচ্চাদের লেখাপড়া হচ্ছে না। মেয়ে ও শিশুরা রোগাক্রান্ত হয়েছে। বন উজাড় হচ্ছে বায়ু দূষণ হচ্ছে।'

জেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও সাফ'র নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গ্রামে তামাক চাষের জন্য কৃষকের পাশাপাশি ঘরের বৌ-ঝিদের (নারী) এ কাজে সহায়তা করা লাগে। তামাক ভাঙার পর জ্বালানো এবং প্রসেসিং করতেও নারীদের দিয়ে এসব কাজ করা লাগে। অনেক সময় গর্ভবতী মহিলারাও এসব কাজের ফলে তাদের ভুমিষ্ট সন্তানরা বিকলাঙ্গ হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলার সবচেয়ে বেশি তামাকের চাষ হয় মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলায়। আর এই দুই উপজেলাতেই সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধীর জন্ম হয়। আসলে কি পরিমান তামাকের চাষ হয় এ জেলায় তার সঠিক নিরুপন তথ্য নেই কারও কাছে। তবে কৃষি অফিস কেবল মনগড়া একটা তথ্য দিয়ে থাকে।

এদিকে তামাকের পরিবর্তে বিকল্প রবি শস্য চাষে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এ মৌসুমে কুষ্টিয়া জেরার ৬টি উপজেলায় মোট ১০ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ২ হেক্টর, কুমরাখালী উপজেলায় এক হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৬৩২ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ৮১০ হেক্টর ও দৌলতপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন