শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

করোনায় বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ, নিরাপদ পানি, অস্বাস্থকর পরিবেশ ইত্যাদি কারণে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত। করোনার তান্ডবে দরিদ্রদেশগুলোর পাশাপাশি উন্নতদেশগুলোও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশে মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।
দিবসটির এবারে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘সকলের জন্য বৈসম্যহীন ও স্বাস্থ্যকর বিশ্বগড়ি’। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র প্রতিকারমুলক চিকিৎসায় বিনিয়োগ না করে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে সচেতন করতে হবে। সংক্রামক রোগের পাশপাশি অসংক্রামক রোগের মহামারী থেকে বাচাতে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ। করোনাভাইরাসের মহামারির শুরু পরে ৩১ মে নাগাদ এক লাফে ওই দরিদ্র শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখে। অর্থাৎ করোনার কারণে মাত্র দুই মাসে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ।
এ প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বদ্যিালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, যত তাড়াতিড় সম্ভব দেশের সব মানুষের টিকা নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি যতটা সম্ভব বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত বা স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশপাশি শ্রমিকদের বা বেসরকারি পর্যায়ে চারকীজীবীদের চাকরির বা কাজের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় নজর দিতে হবে। সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতাদের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নয়তো এ ধরনের মহামারীর আসলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এ্যাপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চ বিভাগের প্রফেসর ড. সোহেল রেজা চৌধুরী ক বলেন, কোভিডকালীন আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের দূর্বলতাগুলো বুঝতে পেরেছি। এক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে পেক্ষাকৃত বেশি অর্থ বরাদ্ধ দিতে হবে। তাছাড়া সরকারের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগ্রহী হতে হবে। যেমন খাদ্যে ট্রান্স ফ্যান নিয়ন্ত্রন করতে পারলে এবং তামাকমুক্ত দেশ গড়তে পারলে অসংক্রমক রোগের মহামারী নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ এন্ড সোশাল মেডিসিন-নিপসমের পরিচালক প্রফেসর ডা. বাায়েজিদ খুরশিদ বলেন, আমাাদের স্বাস্থ্য প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিকারমুলক চিকিৎসা নির্ভর। এ ধনের ব্যবস্থায় হাসপাতাল নির্মাণ, যন্ত্রপাতি কেনাটা ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু যে কোন ধরনের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় প্রতিরোধে প্রতিরোধমুলক চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া দরকার। সুন্দর পরিবেশ, নিরাপদ পানি এবং বিষমুক্ত খাদ্যর নিশ্চয়তা নিরোগ জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রক্কালে ওয়াটারএইড বিশ্ব নেতাদের কাছে কমপক্ষে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিলের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, করোনাসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে অধিক ঝুঁকিতে আছে বিশ্বের ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মানুষ। এর কারণ তারা যে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান বা কাজ করেন, সেখানে প্রাথমিক পানি পরিষেবার অভাব রয়েছে। রোগের বিস্তার ঠেকনোর অন্যতম কার্যকর উপায় চিকৎসক, নার্স এবং রোগীদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা। সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে, বিশেষত যেসব দেশে পরিষ্কার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়েলেট এবং হাত ধোয়ার যথাযথ ব্যবস্থার জন্য সহায়তা প্রয়োজন, তাদের সাহায্যার্থে এই অর্থ প্রয়োজন।
দিবসটি উপলক্ষে আজ স্বাস্থ্য অধিদফতর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আলোচনা সভায়র আয়োজন করেছে। তবে করোনা মহামারির কারনে আড়ম্বরপূর্ণ কোন অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চরম রক্তক্ষয়ী ও প্রাণঘাতী অভিজ্ঞতার ফলে বিশ্বের প্রায়-সকল রাষ্ট্রই একমত হয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালে আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘ গঠন করে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৪৬ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রূপরেখা তৈরির জন্য একটি অন্তর্র্বতীকালীন কমিশন গঠন করা হয়। অন্তর্র্বতীকালীন এই কমিশনের মতামতের আলোকে ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল গঠন করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)। বিশ্বের মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করা এবং জীবন রক্ষার শপথে পরিচালিত হতে থাকে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠার দুই মাসের মাথায়, ১৯৪৮ সালের ২৪ জুন। নির্ধারিত দিনে জেনেভায় সংস্থাটির প্রথম সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৪৬টি সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধিদের আলোচনার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের কথাটি উঠে আসে এবং সেই সম্মেলন থেকেই সিদ্ধান্ত হয় যে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হবে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন