চট্টগ্রামের বাজারে পবিত্র মাহে রমজানের আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ভোজ্যতেল, রসুন, আদা, গুঁড়ো দুধ ও সব রকমের ডালের দাম বাড়ছে। শাক-সবজি ছাড়াও চাল, আটা-ময়দার দাম স্থিতিশীল। মুরগির দাম কমছে, তবে চড়া মাছ ও গরু-খাসির গোশতের দাম। সব মিলিয়ে স্বস্তি নেই রোজার বাজারে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ছুটির দিনে বাজারে ক্রেতার বেশ ভিড়ও দেখা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এবারও বাজারে রমজানে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি সব ধরণের ভোগ্যপণ্যের আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। লকডাউনের মধ্যে সচল আছে পণ্য এবং মালামাল পরিবহন। আগের বছরের তুলনায় কিছু কিছু পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে।
আবার গত বছর আমদানিকৃত অনেক পণ্যও মজুত রয়েছে। বিশ্ববাজারে দরপতন হওয়ায় কিছু পণ্যের দামও এবার কম। এই অবস্থায় সিন্ডিকেটের কারসাজি না হলে এবার রোজার বাজারে দাম বাড়ার কোন কারণ নেই।
আর মাত্র তিন দিন পর রমজান। এরমধ্যে জমে উঠেছে কেনাকাটা। লকডাউন ঘোষণার পরপরই নগরবাসী বাজারমুখী হন। তবে গতবছরের মতো অতিরিক্ত পণ্য কিনে মজুদ গড়ার প্রবণতা এবার তেমন প্রকট ছিলো না। এই কারণে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল বলে জানান, রেয়াজুদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর রোজার আগে বাজারে দাম কিছুটা বাড়ে। এবারও কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। তবে এ হার তেমন বেশি নয়।
রেয়াজুদ্দিন বাজার ও চকবাজার ঘুরে দেখা যায় ভাল মানের ছোলা ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা কম মানের ছোলা ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পর্যাপ্ত খেজুর আছে। দামও নাগালে। মান ভেদে আড়াইশ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চিনি গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে দুই টাকা কমে ৬৫-৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে বোতল ১৩৫ টাকা আর খোলা ১৩০ টাকা। সব ধরনের ডালের দাম উর্ধ্বমুখী। সরু দানার মসুর ডাল ১০০-১১০ টাকা, মোটা দানার মসুর ৬৭-৭০ টাকা, চনার ডাল ৭০-৯০ টাকা, বুটের ডাল ৪৫-৫০ টাকা, খেসারি প্রতি কেজি ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রসুন প্রতিকেজি ১০০-১১০ টাকা, আদা ৯০-১২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুঁড়ো দুধের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চিড়া এবং নারকেলের দামও বাড়তি। প্রতিকেজি চিড়া ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের একটি নারকেলের দাম ৮০-১০০টাকা। শাক-সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে রোজায় বেশি আলোচিত বেগুনের দাম কিছুটা বেড়ে প্রতিকেজি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করোনাকালে লেবুর দাম বেজায় চড়া। প্রায় রসহীন লেবুর ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকা। তবে টমেটো, কাঁচা মরিচ, শসার দাম স্থিতিশীল আছে।
লকডাউনের পর ফার্মের মুরগির দাম কিছুটা কমে প্রতিকেজি ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালিকা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। প্রতিকেজি দেশি মুরগির দাম ৪৫০-৫০০ টাকা। গরুর গোশত হাড়সহ ৬০০ টাকা আর হাড় ছাড়া ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
খাসির গোশতের কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা। বাজারে মাছের সরবরাহ ভাল। সামুদ্রিক মাছের সাথে বাজারে আছে প্রচুর দেশি মাছ। তবে লকডাউনের অজুহাতে দাম বাড়তি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার শুরুতে বাজার কিছুটা চড়া থাকলেও সপ্তাহ ঘুরতে মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারির উপর জোর দিয়েছেন কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, সঠিকভাবে বাজার তদারক করা না হলে সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু হবে। করোনাকালে এমনিতেই আয়-রোজগার কমে গেছে। তার উপর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি হলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস বাড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন