শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

এগারোয় সৌরভ ছড়ানো ‘প্রথম’

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

অফ স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার অফ স্টাম্পের একটু বাইরের ডেলিভারি। তুলনাম‚লক দ্রুতগতির বলটি জায়গা করে নিয়ে খেললেন মুমিনুল হক। কাট করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পাঠালেন সীমানার বাইরে। তাতে অবসান ঘটল দীর্ঘ অপেক্ষার। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অষ্টম বছরে এসে বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের আগের সবগুলো সেঞ্চুরি ছিল বাংলাদেশের মাঠে। বিদেশে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা তিনি পেলেন ৪৩ নম্বর টেস্টে। তাকে খেলতে হলো ৭৯টি ইনিংস।

সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে একটু যেন ছটফট করছিলেন মুমিনুল। শরীরী ভাষায় ফুটে উঠল অস্থিরতা। মাইলফলকের দুয়ারে দাঁড়িয়ে হয়তো অনুভব করছিলেন পেটে প্রজাপতির নাচন। ডি সিলভাকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়ে ঠিকঠাক পারলেন না। তবে বিপদও হলো না। পরের বলেই এই অফ স্পিনারকে চার মেরে তিনি পেয়ে গেলেন সেই অনির্বচনীয় স্বাদ। দেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরি!
টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড আগে থেকেই মুমিনুলের। ১০ থেকে বেড়ে সেঞ্চুরি এবার হলো ১১টি। তবে আগের সবকটিই ছিল দেশের মাঠে। তিন অঙ্কের জাদুকরি ছোঁয়া বিদেশের মাঠে তিনি পেলেন এই প্রথমবার। ৬৪ রান নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলে টেস্টের প্রথম দিন শেষ করেছিলেন মুমিনুল। গতকাল লাঞ্চের আগে শতরানের বহু কাক্সিক্ষত সেই মাইলফলকে পা রাখেন ২২৪ বল খেলে। অনায়াসেই এটি মুমিনুলের মন্থরতম টেস্ট সেঞ্চুরি। আগের সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরিটি ছিল ১৭৩ বলে। ধৈর্যের পরীক্ষায় উতরে পাওয়া এই অর্জনে মুছে গেল তার ক্যারিয়ারের একটি কালো দাগ। বিদেশের মাঠে কোনো সেঞ্চুরি না করে দেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি বিশ্বরেকর্ড এতদিন ছিল তার। এমন রেকর্ড কে চায়!
দেশের মাটিতে মুমিনুলের সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়মিত দৃশ্যের একটি। সবশেষ ৬ ইনিংসে তৃতীয় সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের সবশেষ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ১১৫ রান করেছিলেন তিনি। তার আগে গত বছর ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ১৩২ রান। তবে দেশের বাইরে গেলে সেই তিনিই হয়ে ওঠেন অচেনা। এবারের আগে ছিল কেবল ছয়টি ফিফটি। ঘরের মাঠে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের গড় সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের মতোই- ৫৬.৩৯। কিন্তু প্রতিপক্ষের মাঠে গড় ছিল কেবল ২২.৩০। এই টেস্টের আগে দেশের বাইরে মুমিনুলের সর্বোচ্চ ছিল ৭৭। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় সেই ইনিংস খেলার পর ১৭ ইনিংসে পাননি কোনো ফিফটি, এর মধ্যে চল্লিশ ছুঁতে পারেন কেবল একবার। শ‚ন্য রানে আউট পাঁচবার।
যদিও দেশের বাইরে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের শুরুটা বেশ ভালো হয়েছিল। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কাতেই প্রথম টেস্টে করেন ৫৫, পরের টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬৪। কিন্তু সেই ধারা আর ধরে রাখতে পারেননি পরে। অবশেষে দেশের বাইরে ১৭ টেস্ট ও ৩৩ ইনিংসের অপেক্ষা অবসান ঘটিয়ে সেঞ্চুরির আবিরে নিজেকে রাঙাতে পারলেন তিনি। ৬৪ রান নিয়ে এদিন খেলতে নেমেছেন মুমিনুল। প্রথম দিন হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে তার লেগেছিল ১১৭ বল। আর কাক্সিক্ষত তিন অঙ্ক তিনি স্পর্শ করলেন ২২৪ বলে। তার ইনিংসে বাউন্ডারি মাত্র ৯টি। অর্থাৎ দৌড়ে রান নিয়ে এবং স্ট্রাইক বদলে রানের চাকা সচল রাখছেন তিনি। সেঞ্চুরি করতে এই প্রথম ২০০ বা তার চেয়ে বেশি বল ব্যবহার করলেন তিনি।
এই শ্রীলঙ্কাতেই রচিত হয়েছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দুঃখজনক এক অধ্যায়। ২০১৭ সালের সফরে গলের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আউট আউট হন কেবল ৭ ও ৫ রান করে। তাতে জায়গা হারান কলম্বো টেস্টে, যেটি ছিল বাংলাদেশের শততম টেস্টে। বাইরে বসে দেখেন বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়। এবার সেই শ্রীলঙ্কাই তিনি গেছেন অধিনায়ক হয়ে। কাঁধে দায়িত্ব অনেক। দলের সা¤প্রতিক বাজে পারফরম্যান্সে চাপও চেপে বসেছিল ভীষণ। প্রথম ইনিংসেই দেখিয়ে দিলেন, চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে তিনি তৈরি। সবশেষ ছয় ইনিংসে এটি তার তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের বড় এক আক্ষেপ ঘোচানো সেঞ্চুরিও হয়ে গেল। মুমিনুল যেন ছড়িয়ে দিলেন বার্তা, অধিনায়কত্বের ভার তার কাছে এখন উপভোগ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন