চলতি এপ্রিল মাসের ১০ এপ্রিল রাতে সিকিম ও ভুটান সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চল এবং একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে সংঘটিত দুটি রিখটার স্কেলের পরিমাপে ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞদের ধারণা হিমালয়ান বেল্টে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরী হয়েছে। ২৮ এপ্রিল ফের আসামে রিখটার স্কেলের ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভুমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন উত্তরের বৃহত্তর দিনাজপুর ও রংপুর এবং বরেন্দ্র অঞ্চল যেহেতু হিমালয়ান বেল্টের কাছাকাছি সেহেতু উত্তর জনপদে ভুমিকম্প ঝুঁকি তৈরী হয়েছে।
এদিকে উত্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং কুষ্টিয়ায় ১৬ টি আবহাওয়া অফিসের ১৫ টিতেই ভুমিকম্প পরিমাপক রিখটার স্কেল নেই বলে জানা গেছে। এগুলোতে রিখটার স্কেল এবং গবেষক সহ প্রয়োজনীয় লোকবল থাকলে ভুমিকম্প সহায়ক অনেক সহায়ক গবেষনা তথ্য সরকার তথা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রনালয় সময় মত যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে পারতো বলে অভিমত পর্যবেক্ষক মহলের ।
বিশেষজ্ঞরা ইতিহাসের রেফারেন্স টেনে জানাচ্ছেন, ১৮৮৭ সালের প্রলয়ংকর ভুমি-কম্পে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানীর পাশাপাশি হিমালয়ের কৈলাশ থেকে নেমে আসা ব্রম্ভপুত্রের গতিপথ পাল্টে যাওয়া এবং একই অঞ্চল থেকে প্রবাহমান করতোয়ার বিশাল প্রবাহ আজকের বিদ্যমান রুপ ধারনের মত নতুন এক ভুমিকম্প ঝুঁকির আশংকা জোরদার হচ্ছে ।
বগুড়া জেলা প্রশাসক অফিসের মোহাফেজ অফিসের তথ্যানুযায়ি, ১৮৮৭ সালের ভয়াবহ ভুমিকম্পে ব্রম্ভপুত্র ও করতোয়া নদীর গতিপথ ও প্রবাহ ধারা পাল্টে বর্তমান রুপ ধারন করে। এর একশ’ বছর পর উত্তরাঞ্চলে ১৯৮৮ সালে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তৎকালীন সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। ১৮৮৭ সালের ভুমিকম্পে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয় ।
এদিকে আবহাওয়া দফতরে যোগাযোগ করে জানা যায় , উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে এখন ১৬ টি আবহাওয়া অফিস রয়েছে। এগুলো হল পঞ্চগড়,দিনাজপুর,সৈয়দপুর,রংপুর,নীলফামারী,ডিমলা,কুড়িগ্রামের রাজারহাট,নওগাঁর বদলগাছি,বগুড়া,সিরাজগঞ্জের তাড়াশ,পাবনার ঈশ^রদী ও বাঘাবাড়ি, রাজশাহী এবং কুষ্টিয়া। এরমধ্যে কেবল রংপুরেই রয়েছে ভুমিকম্প পরিমাপক রিখটার স্কেল। এছাড়া ভ-ুতত্ত¡ জরীপ অধিদপ্তরের একটি অফিস রয়েছে বগুড়ায় ।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে উত্তরের আবহাওয়া অফিস গুলোতে যতদ্রæত সম্ভব রিখটার স্কেল স্থাপন সহ ভুমিকম্প বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ , পর্যবেক্ষন এবং গবেষনা পরিচালনার মত জনবল নিয়োগ সময়ের দাবি। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগকে আরো শক্তিশালী উদ্ধার সরঞ্জাম সরবরাহ করাও জরুরী। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যক্রমে,রেডক্রিসেন্ট , স্কাউট ও ক্যাডেটদের সম্পৃক্ত করে মাঝে মাঝেই মহড়ার ব্যবস্থা করলে দুর্যোগ মোকাবেলায় একটা সক্ষমতা তৈরী হত বলে তাদের অভিমত ।
বগুড়ার ইতিহাস গবেষক আব্দুর রহীম বগরা তাঁর সংগৃহিত তথ্য থেকে উদ্ধৃত করে জানান, ২০১০ থেকে চলতি ২০২১ সাল পর্যন্ত উত্তর জনপদ তথা হিমালয়ান বেল্টের সিকিম, ভুটান ,অরুনাচল ও আসাম অঞ্চলে প্রায় দেড় শতাধিকবার ভুমিকম্প অনুভুত হয়েছে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ৩ বার শক্তিশালী ভুমিকম্প অনুভুত হয়েছে উত্তরাঞ্চলে।
উত্তরের আবহাওয়া অফিস গুলোতে ভু-কম্পন পরিমাপক রিখটার স্কেল না থাকায় মৃদুলয়ের অনেক ভুকম্পন ধরা ও পড়েনা আনেক সময়। তার মতে দীর্ঘদিন ধরে ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলশ্রæতিতে উত্তর জনপদে মাটির নীচে যে ভ্যাকুম তৈরী হয়েছে। সেটা ভুমিকম্পের সময় মারাত্মক ভুমি ধ্বসের কারন হতে পারে ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন