লোকসান হলেও ন্যূনতম কর কেন দিতে হবে সে প্রশ্ন তুলেছেন বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটরদের লোকসান হলেও সেবা বিক্রি করে পাওয়া মোট টাকার ওপর ২ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হচ্ছে। এ হার মদ বিক্রেতাদের ওপর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, তামাকে ১ শতাংশ। মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বিশেষ কোনো দাবি করছি না। করব্যবস্থায় ন্যায্যতা চাই। লোকসান হলেও কর দিতে হবে, এটা অসাংবিধানিক। নীতিনির্ধারকেরা এটা জানেন, বোঝেন। কিন্তু কিছু হচ্ছে না।
গতকাল বুধবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে রবির প্রস্তাব তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, রবির মূল হতাশা ন্যূনতম কর নিয়ে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট থেকে সরকার মোবাইল অপারেটরদের ওপর ন্যূনতম ২ শতাংশ কর আরোপ করে। অর্থাৎ সেবা বিক্রি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ টাকা অপারেটর আয় করবে, তার ২ শতাংশ আয়কর হিসেবে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে লাভ লোকসান বিবেচনা করা হবে না। এই কর গ্রামীণফোনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। কারণ, গ্রামীণফোন আয় করে বেশি, করপোরেট কর আসে ন্যূনতম করের চেয়ে বেশি। ন্যূনতম করের কারণে ভুগতে হয় রবি, বাংলালিংক ও টেলিটককে।
শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার পরও রবি কোনো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে না উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ৫০০ কোটি টাকা আজিয়াটার কাছে এমন বড় কিছু নয়। আমরা পুঁজিবাজারে গিয়েছিলাম সংশ্লিষ্টদের আশ্বাসের ভিত্তিতে। দিনের পর দিন যাচ্ছে, আমাদের দেওয়া কথা পূরণ করা হচ্ছে না। রবির সঙ্গে কী করা হচ্ছে, তা বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও দেখছে।
অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরগুলোর ওপর করহার সবচেয়ে বেশি জানিয়ে রবির সিইও বলেন, গুটিকয়েক দেশে ন্যূনতম কর রয়েছে, তবে তা সমন্বয়যোগ্য। মানে লোকসান হলে ফেরত পাওয়া যায়।
অন্যখাতের তুলনায় মোবাইল অপারেটর ওপর কর নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশের প্রধান বলেন, মোবাইল অপারেটরদের লোকসান হলেও সেবা বিক্রি করে পাওয়া মোট টাকার ওপর ২ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হচ্ছে। এ হার মদ বিক্রেতাদের ওপর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, তামাকে ১ শতাংশ ও কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। তিনি বলেন, মদ ও তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অন্য দিকে মুঠোফোনসেবা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। সেখানে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কী দোষ করল যে তাদের ন্যূনতম কর মদ–তামাকের চেয়ে বেশি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ন্যূনতম করের কারণে রবির কার্যকর করপোরেট করহার দাঁড়াচ্ছে ৮৯ শতাংশ। মানে হলো, ১০০ টাকা মুনাফা করলে ৮৯ টাকাই আয়কর হিসেবে নিয়ে নিচ্ছে সরকার। তিনি জানান, ২০২০ সালে রবি ৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। এর মধ্যে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা যায় সরকারের কোষাগারে, যা মোট আয়ের প্রায় ৫৬ শতাংশ। এ টাকা বিভিন্ন ধরনের কর, মাশুল ও তরঙ্গ ইজারার মূল্য বাবদ দেওয়া যায়। বিপুল টাকা বিনিয়োগের পর ২০২০ সালে রবির মুনাফা ছিল মাত্র ১৫৫ কোটি টাকা।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, এখন ন্যূনতম করের কারণে পকেট থেকে আয়কর দিতে হচ্ছে।
দেশে সাধারণ কোম্পানির ওপর করপোরেট কর সাড়ে ৩২ শতাংশ। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তা ২৫ শতাংশ। মোবাইল অপারেটরদের করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ। একই হারে কর আদায় করা হয় তামাক কোম্পানির কাছ থেকেও। পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত মোবাইল অপারেটরের ক্ষেত্রে করপোরেট কর ৪০ শতাংশ। বিশেষ বিশেষ খাতে সরকার করপোরেট করে বড় ছাড় দিচ্ছে। যেমন পোশাক খাতে করপোরেট কর মাত্র ১২ শতাংশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন