নাছিম উল আলম : ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত প্রথম ফিরতি ট্রিপেই বিআইডবিøউটিসি’র শ্বেতহস্তি এমভি মধুমতি প্রায় ৪ লাখ টাকা লোকসান গুনল। মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটি খনন করে চালু করার ফলে সংস্থাটি গত বুধবার থেকে সপ্তাহে একদিন ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিস পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। কিন্তু সব মহলের অনুরোধ উপেক্ষা করেই ব্যয়সাশ্রয়ী প্যাডেল স্টিমারের পরিবর্তে বিআইডবিøউটিসি তার সদ্য সংগৃহীত স্ক্রু-হুইল নৌযান এমভি মধুমতিকে এ রুটের জন্য বেছে নেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিপুল অংকের লোকসানের বোঝা চেপেছে সংস্থাটির ঘাড়ে। গত দু’বছরে সংগ্রহ করা এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী জাহাজ দু’টির জ্বালানী ব্যয় প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২শ’ লিটার। অথচ প্যাডেল জাহাগুলোতে ওই ব্যয় ৮৬ থেকে ৯২ লিটারের মধ্যে।
দীর্ঘ ৬১ মাস পরে ঢাকা-বরিশাল-খুলনা নৌপথে পুনরায় ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিসটি চালু করা হয় গত বুধবার। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিআইডবিøউটিসি’র নৌযান ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে খুলনা টার্মিনালে নোঙর ফেলে। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর রাত ৩টায় খুলনা থেকে পিএস অষ্ট্রিচ শেষবারের মত বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছিল।
কিন্তু রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ মহল অজ্ঞাত কারণেই ব্যয়সাশ্রয়ী নৌযানের পরিবর্র্তে অধিক পরিচালন ব্যয়ী নৌযান এ রুটের জন্য বেছে নিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, আমরা পরীক্ষামূলকভাবে নৌপথটি পুনরায় চালু করছি। পরিচালন ব্যয় সাশ্রয় করে যা করতে হয় তাই করব আগামীতে। সংস্থাটির পরিচালক-বাণিজ্যও প্রায় একই কথা বলেছেন। তার মতে, প্যাডেল জাহাজগুলো ব্যয়সাশ্রয়ী হলেও কারিগরি ত্রæটির কারণে তা সব সময় নির্ভরযোগ্য নয়। তাই আপাতত আমরা নতুন জাহাজ দিয়ে সার্ভিসটি চালু করছি। ভবিষ্যতে সব কিছু বিবেচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গত বুধবার ঢাকা থেকে যাত্রা করে পরদিন সকালে বরিশাল হয়ে এমভি মধুমতি ঐদিন রাত ৮টার পরে খুলনায় পৌঁছে। পথিমধ্যে নৌযানটি ঝালকাঠী-পিরোজপুরের হুলারহাট, চরখালী, বড় মাছুয়া-সন্যাসী-মোড়েলগঞ্জ ও মোংলায় থামে। রাত ৩টায় নৌযানটি খুলনা থেকে ফিরতি নৌপথে যাত্রা করে বিকেল সাড়ে ৫ টায় বরিশাল হয়ে গতকাল (শনিবার) সকাল ৬টার কিছু আগে ঢাকায় নোঙর করে। পুরো এ যাত্রা পথে নৌযানটি জ্বালানী বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকার মত। কিন্তু সর্বসাকুল্যে আয় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯০ হাজার টাকারও কম। ফলে শুধু পরিচালন লোকসানের পরিমাণই দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার মত।
সংস্থাটির মাঠ পর্যায়ের একাধিক সূত্রের মতে, নতুন সংগৃহীত এসব নৌযানের জ্বালানী ব্যয়সহ পরিচালন ব্যয় প্যাডেল নৌযানগুলোর দ্বিগুণেরও বেশী। ফলে এসব নৌযান যত চালানো হবে, তত লোকসান বাড়বে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বরিশালের পরে মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত এতদিন যে নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিসে এসব নৌযান চলেছে তাতেও প্রতিট্রিপে গড়ে ২ লাখ টাকার মত লোকসান গুনেছে। ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ রুটে এসব নৌযানের ফিরতি ট্রিপে জ্বালানী পুড়তো ৬ হাজার ৮শ’ লিটার আর খুলনা পর্যন্ত প্রথম ট্রিপে মধুমতির জ্বালানী প্রয়োজন হয় ৯ সহস্রাধিক লিটার। অথচ প্যাডেল জাহাজগুলোতে ওই ব্যয় অর্ধেকেরও কম।
এমভি মধুমতি খুলনা পর্যন্ত নিয়ে যেতে বিআইডবিøউটিসি’র কারিগরি, বাণিজ্য ও মেরিন বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ নৌযানটিতে ছিলেন। তারা সব দিক বিবেচনা ও পর্যবেক্ষণ করে আজ সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ে একটি প্রতিবেদন প্রদান করবেন বলে জানা গেছে। এর প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে এ রুটটি পরিচালন-এর ব্যাপারে ছক চূড়ান্ত করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল যাত্রী পরিবহনে দেয়ার পরে এমভি বাঙালী চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত সোয়া ৩ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। আর একই মাপের অপর নৌযান এমভি মধুমতি গত বছর ১৪ জুলাই চালু হবার পরে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান গুনেছে। এর সাথে দু’টি নৌযানের প্রায় ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদও আরো সাড়ে ৩ কোটি টাকা গুনতে হয়েছে সংস্থাটিকে। ফলে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সংগৃহীত এ দু’টি নৌযান চালু হবার পর থেকে সংস্থার নিট লোকসানের পরিমাণ ইতোমধ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকা ছুঁয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যাত্রী বান্ধব না হওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামোগত ত্রæটির কারণে পরিচালন ব্যয় বেশী হওয়ায় নৌযান দু’টি না লাভ না লোকসান ভিত্তিতেও পরিচালনা দুরূহ ব্যাপার।
এরপরও গত বছরাধিক কাল যাবৎ সংস্থাটির ৪টি ব্যয়সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজের পরিবর্তে ব্যয়বহুল নতুন এসব নৌযান পরিচালনে কতিপয় কর্মকর্তার আগ্রহ বেশী। শ্বেতহস্তী বলে কথিত নতুন দুইটি স্ক্রু-হুইল নৌযানের জ্বালানী ব্যয় প্রতি ট্রিপে প্যাডেল জাহাজের তুলনায় ৩ হাজার লিটার বেশী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন