সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ক্যাচ মিসের আক্ষেপে পোড়া একটি দিন

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

টস হেরেও শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। বদলে যাওয়া উইকেটে নিয়ন্ত্রিত বোলিং দিয়ে দিনটি শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দুর্দান্ত প্রথম ঘন্টা পার করে বাংলাদেশের বোলররা। তাসকিন আমহেদ, আবু জায়েদ রাহী আর অভিষিক্ত শরিফুল ইসলামদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৪ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলতে পারে কেবল ২২ রান। চাপে পড়া স্বাগতিক দুই ওপেনার দিমুথ করুণারত্নে আর লাহিরু থিরিমান্নে ঐ সময়ে খেলতে পেরেছেন কেবল একটি চারের মার। উইকেট পাওয়ার অবস্থাও তৈরি হয়েছিল একাধিকবার। যেই না টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ৫ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁলেন অধিনায়ক করুণারত্নে, আম‚লে বদলে গেল খেলার ধরণ। তাতে তরতরিয়ে বাড়লো দলের রান। দ্বিতীয় ঘণ্টায় ১৩ ওভারে রান হয় ৪৪, বাউন্ডারি ৮টি। সময়ের সাথে সাথে হাত খুলে মারতে থাকা দুজনেই পেলেন তিন অঙ্কের দেখা, জুটিতে হলো রেকর্ড।
আগের ম্যাচে ভালো করা তাসকিন আহমেদই ছিলেন সবচেয়ে তেতে। গতকাল হতাশায় পুড়েছেন তিনিও। তার বলে পড়েছে করুনারত্নের সহজ ক্যাচ। শেষ পর্যন্ত কাছে গিয়েও তাই শুরুতে উইকেট পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। পরে সুযোগ দিয়েছিলেন থিরিমান্নেও। তবে সেটিও হেলায় হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফল, রেকর্ডময় একটি দিন পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। যেদিনে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য, অভিষিক্ত শরিফুল ইসলামের উইকেট প্রাপ্তি।
যেখানে দিনটি হতে পারতো বাংলাদেশের, উল্টো দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে এগিয়ে থাকলো শ্রীলঙ্কাই। করুণারত্নে আর থিরিমান্নের সেঞ্চুরিতে পাল্লেকেলেতে খেলা ৯০ ওভারের দিনটিতে ঐ এক উইকেট খুইয়ে স্বাগতিকদের ঝুলিতে ২৯১। দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে শরিফুলের বলে করুণারত্নে (১১৮) বিদায় নিলেও কাঁটা হয়ে উইকেটে পড়ে আছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া থিরিমান্নে (১৩১)। ৪০ রান নিয়ে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন ওশাদা ফার্নান্দো।
প্রথম টেস্টে ১১৪ রানেই থেমেছিল দিমুথ করুনারত্নে ও লাহিরু থিরিমান্নের জুটি। এবার থামার নামই নেই! দুজনের জুটি পেরিয়ে গেছে ২০০ রানের মাইলফলক। তাতে ধরা দিয়েছে রেকর্ডও। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে করুনারত্নে ও থিরিমান্নের জুটি ২০০ স্পর্শ করে তৃতীয় সেশনের শুরুতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে এই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পেল শ্রীলঙ্কা। দুজনে ছাড়িয়ে গেছেন প্রায় ২০ বছর আগের জুটিকে। ২০০১ সালে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ১৪৪ রানের জুটি গড়েছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া ও মারভান আতাপাত্তু। সেটিই ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কান উদ্বোধনী জুটির আগের সেরা।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কানদের এটি নবম ডাবল সেঞ্চুরি জুটি। এখানে শ্রীলঙ্কা স্পর্শ করেছে একটি রেকর্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে নয়টি দ্বিশতক জুটি আছে দক্ষিণ আফ্রিকারও। চারটি করে দুইশ রানের জুটি আছে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের। এসবের আগে সেঞ্চুরি হওয়ার সময়ই এই জুটি গড়েছে আরেকটি কীর্তি। এই নিয়ে টানা তিন ইনিংসে শতরানের জুটি গড়লেন তারা দুজন। একই উদ্বোধনী জুটিতে টানা তিন শতরানের নজির টেস্ট ইতিহাসে আছে মাত্র ১১ জুটির, শ্রীলঙ্কার হয়ে তারাই প্রথম। দিনের শেষ ওভারে শরিফুলের বলে থিরিমান্নেকে আউট দেন আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। বাংলাদেশের সেই আনন্দও মিলিয়ে যায় দ্রুত। রিভিউ নিয়ে ঠিকই টিকে থাকেন থিরিমান্নে। সেটিই জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশের অপেক্ষায় আরও কঠিন সময়।
তবে এর পুরো ‘কৃতিত্ব’ দিতে হবে বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংকে। ২৮ রানে তাসকিনের বলে মিড অফে ক্যাচের মতো দেন করুনারত্নে। কিন্তু শুরুতে বুঝে উঠতে একটু দেরি করায় বলের কাছে সময়মতো যেতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনলি হক। দুই বল পরই স্লিপে তুলনাম‚লক সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত। একটু পর সুযোগ দেন থিরিমান্নে। তাসকিনের বলেই গালি দিয়ে বল বেরিয়ে যায় বাউন্ডারিতে। মেহেদী হাসান মিরাজ ঝাঁপিয়েও পারেননি। এটা যদিও ছিল অনেক কঠিন। সা¤প্রতিক সময়ে ক্যাচ ছাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডারদের মধ্যে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ থেকে নিউজিল্যান্ড সফর এবং শ্রীলঙ্কায় প্রথম টেস্টেও ক্যাচ ছেড়েছেন ফিল্ডাররা। আজ কঠিন একটি দিনই অপেক্ষা করছে মুমিনুল হকের দলের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ২৯১/১ (করুনারত্নে ১১৮, থিরিমান্নে ১৩১*, ওশাদা ৪০*; আবু জায়েদ ১৬-৩-৪৭-০, তাসকিন ১৭-৩-৬৯-০, মিরাজ ২২-৪-৬৭-০, শরিফুল ১৬-৩-৫২-১, তাইজুল ১৯-২-৫৬-০)। প্রথম দিন শেষে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন