বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাশের ভারনী টহল ফাঁড়ি এলাকার বনে আগুন লেগেছে। সোমবার (৩ মে) দুপুরে লাগা এই আগুন সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্বলছে। ধারনা করা হচ্ছে প্রায় পাঁচ একর বন ভূমি এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন লাগার কারণ উদঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক মো. মঈন উদ্দিন, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। বনের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়া এই আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বন বিভাগ, শরণখোলা মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ও সুন্দরবন সুরক্ষায় ভিটিআরসি টিমের সদস্যরা। আগুন যাতে বনে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ফায়ার লাইন কাটা হচ্ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আগুন যাতে বনে আরো ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ফায়ার লাইন কেটে তাতে পানি ভরে দেয়া হচ্ছে।
বন বিভাগ বলছে, আগুন লাগার যায়গাটা বেশ দুর্গম বনের মধ্যে সেখানে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এলাকাবাসী ও বন বিভাগের ধারনা মৌয়ালদের ফেলে দেয়া আগুন থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারী বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির কাছে ২৭ নম্বর কর্ম্পাটমেন্টের বনে আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৫ শতক বনের গাছপালা ও লতাগুল্ম। এই আগুন লাগার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ। শরণখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান ও ধান সাগর ষ্টেশনের কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম ও শরণখোলা ষ্টেশনের কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নাকে সদস্য করে গঠিত এই কমিটি আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এদিকে সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে ১৫ বছরে ২৮ বার আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৮০ একর বনভূমি। ২০১৭ সালের ২৬ মে পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন আবদুল্লাহর ছিলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
শরণখোলা উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মরা ভোলা নদী তীরবর্তী লোকজন জানায়, সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে তারা লোকালয় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ির আওতাধীন এলাকায় আগুনের ধোয়া দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে খবর দেন। এরপর বন বিভাগের শরণখোলা স্টেশন অফিস, মরাভোলা ও দাসের ভারানী টল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা এবং দক্ষিণ রাজাপুর, মাঝেরচর ও রসুলপুর গ্রামের শতাধিক গ্রামবাসী আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে রওনা দেয়। আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়া দক্ষিণ রাজাপুর, মাঝেরচর ও রসুলপুর গ্রামের আফজাল চাপরাশি রেজাউল, সালাম ও সুমন বলেন, সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা শতাধিক গ্রামবাসী সেখানে ছুটে এসেছি। আমরা বাড়ি থেকে কলসি, বালতি, জগ ও হাড়ি নিয়ে পাশের ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে একদল গ্রামবাসী আগুন নিভাতে চেষ্টা চালাচ্ছি। অন্য একটি দল আগুন যাতে সুন্দরবনের সব দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ফায়ার লাইন (আগুনের অংশের মাটি আলাদা করা) কাটার কাজ করছি।
তারা আরও জানান, মরা ভোলা নদী থেকে আগুন লাগার স্থানের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দূরে হওয়ায় পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে অন্য কোন পানির উৎস নেই। যার কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায় পাঁচ একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে তাদের ধারনা। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. সরোয়ার হোসেন সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানান, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেছে। আগুন লাগার যায়গাটা বেশ দুর্গম বনের প্রায় তিন কিলোমিটার মধ্যে হওয়ায় পানি বেশ খানিক দূরে। আমাদের কর্মীরা আগুন নেভাতে পানির পাইপ টানার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। পানির পাইপ টানার কাজ শেষ হলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করা হবে। আশাকরা হচ্ছে রাতের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে ফাঁড়ির অদূরে ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখতে পায় বনকর্মীরা। তারা সেখানে যেয়ে দেখে কোথাও কোথাও ধোঁয়ার কুন্ডলি আবার কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে। এই বনে বলা, গেওয়া ও লতাগুল্ম জাতীয় গাছপালা রয়েছে। আগুনের খবর স্থানীয়দের জানানো হলে তারা আমাদের সাথে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। আগুনের বিস্তৃতি যাতে সব এলাকায় ছড়িয়ে না পড়তে পারে সেজন্য স্থানীয়দের নিয়ে একদিকে পানি ছিটানো হচ্ছে অন্যদিকে ফায়ার লাইন কাটার কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার দমকল বাহিনীর দুইটি দল বনের ভিতরে পাইপ লাইন টানতে শুরু করেছে। পানির যোগান কম থাকায় আগুন নেভানোর কাজে দারুণ অসুবিধা হচ্ছে। জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের ফেলে দেয়া আগুন থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণ করছি। তবে কতটুকু এলাকায় আগুন ছড়িয়ে কি ধরনের গাছপালা পুড়ছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পরে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করে জানানো হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন