শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দাম কমানোর অভিযোগ কুমিল্লায় চামড়াবাজারে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হাহাকার

প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : বিকেল সাড়ে পাঁচটা। সিএনজি অটোরিকশায় করে সতেরটি গরুর চামড়া নিয়ে কুমিল্লা নগরীর ঋষিপট্টিতে আসে দুই মৌসুমি ব্যবসায়ী। নগরী ও বাইরের এলাকার কুরবানীদাতাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে লাখ টাকা বা তারও বেশি মূল্যের গরুর ওই ১৭টি চামড়া তারা এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় কিনেছেন। কিন্তু ঋষিপট্টির চামড়ার আড়তে বিক্রি করতে এসে প্রতি চামড়ার গড় দাম উঠে মাত্র ৫শ’ টাকা। দাম শুনে মৌসুমি দুই ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত চামড়া নিয়ে ফিরে যান অন্যত্র। গরুর চামড়াই নয়, ১৪ হাজার টাকা মূল্যের ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে নগরীর চর্থার এক যুবক ঋষিপট্টিতে এসেছিল। অনেকক্ষণ ঘুরে সেই ছাগলের চামড়া সে মাত্র ৫০ টাকায় বিক্রি করেছে। আক্ষেপ করে ওই যুবক বললো, ‘বাড়ি থেকে রিকশাযোগে চামড়া নিয়ে এসেছি। বিক্রি করলাম ৫০ টাকা। এখন আসা-যাওয়ায় রিকশা ভাড়া দিতে হবে ৬০ টাকা।’ কেবল ঋষিপট্টিই নয়, নগরী ও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য স্থানেও চামড়া কেনা নিয়ে মূল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তোলায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে শেষ পর্যন্ত কুরবানীর গরুর চামড়া কিনে ধরাশায়ী হয়েছেন কুমিল্লার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এবারে ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে এবং রাস্তার পাশে টেবিল-চেয়ার বসিয়ে যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গরুর চামড়া কিনেছেন তারা পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে এসে লোকসানের মুখে পড়েন। চামড়ার মূল ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এবারে লোকসানে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কুমিল্লা নগরী এবং উপজেলা পর্যায়ের পাইকারদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে এসে হাহাকার ফুটে ওঠে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে। এবারে চামড়ার দর অকল্পনীয় হারে কম হওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লা থেকে ভারতে পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর জন্য বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন থেকে চামড়ার যে দর নির্ধারণ করে দেয়া হয় তা কোনবারেই মানা হয় না। এবারেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এমনটি ভেবে গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন। দুপুরের পর থেকে পাইকারী স্থানে বিক্রি করতে এসে লাভ তো দূরের কথা কেনা দর পেতেও হিমশিম খেয়েছেন তারা। কারণ ঢাকায় ট্যানারিগুলোর সাথে কুমিল্লার যেসব পাইকাররা ব্যবসা করেন তারা চামড়ায় লবণের খরচ, শ্রমিকের পারিশ্রমিক, পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে এবারে কমদামে চামড়া কিনেছেন। ফলে ধরাশায়ী মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
ঈদের দিন সকাল থেকেই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রিকশা-ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, মিনি ট্রাক নিয়ে নগরী ও বাইরের এলাকা এবং বিভিন্ন উপজেলায় বেরিয়ে পড়েন। বেশি দরে চামড়া কিনে তা দুপুরের পর থেকে কুমিল্লার পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে এসে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হার্টব্রিট বেড়ে যায়। বিক্রিদর শুনে তারা হতাশ হয়ে পড়েন। একরকম হাহাকার দেখা দেয় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ, ‘ঢাকার ট্যানারি মালিকদের যোগসাজশে এখানকার পাইকারী চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেই চামড়ার দাম কমিয়ে বাজারের এ হাল সৃষ্টি করেছে। ফলে চামড়া সংরক্ষণ তাদের পক্ষে অসম্ভব হওয়ায় রাতের মধ্যেই কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটধারীরা ভারতে চামড়া পাচারের অসৎ উদ্দেশ্যেই এবারে চামড়ার দর নিয়ে এমনটি করেছেন।’
এবারে ঈদের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় আর ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকার উপরের মূল্যের গরুর চামড়া ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় কিনেছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। দুপরের পর চামড়ার দর আরও কমতে শুরু করে। চামড়ার পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয়ার পরও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যে যার মতো চামড়া কিনেছেন। যার ফলে কেনার ক্ষেত্রে চামড়ার দর না বুঝার কারণে এবারে তারা ধরাশায়ী হয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন