শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

করোনা ঢেউ প্রতিরোধে করণীয়

| প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহার জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে, কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোভিড-১৯ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই অঞ্চল মহামারির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে দীর্ঘদিন। এক বছরে করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ আমাদের ছিল। সেদিক থেকে আমরা খুব একটা সফল হইনি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন তাও বাস্তবায়িত হয়নি। এক বছরের বেশি হয়ে গেলেও করোনা সতর্কতার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তেমন কোনো প্রচারণা নেই। বিশেষ করে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণায় উদাসীনতা স্পষ্ট।

সাধারণ মানুষও সব ভুলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া শুরু করেছিল। তাতে আবার সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে প্রতিদিন সংক্রমণ আর মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হল। কিন্তু জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাস্তব চিত্রটা এখনো অজানা।

‘সীমিত’ লকডাউনের সময় ঢাকা ও বড় বড় শহর ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন আবার তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সরকার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছিল। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। জনসচেতনতামূলক প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য বিতরণেও ঘাটতি ছিল। ফলে জনমানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বজুড়েই এই মুহুর্তে সংক্রমণ বাড়ছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ একটি আরএনএ ভাইরাস। প্রকৃতিগতভাবেই এটি নিজের রূপান্তর ঘটায় (মিউটেশন)। নিজে থেকেই নতুন ধরণের জন্ম দেয়। নতুন ধরণগুলো হয় আরও বেশি শক্তিশালী। ক্রমাগত নিজেদের রূপান্তর ঘটিয়ে ভাইরাসগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, বাড়াচ্ছে সংক্রমণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিকোণ থেকে জনসমাগম সংক্রমণ ছড়াতে সহায়তা করে। আমাদের দেশেও তাই হয়েছে। তাছাড়া করোনার মধ্যেও গণজমায়েত করা, গণপরিবহন ব্যবহার, বাজার-রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য স্থানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে না পারা, সুযোগ থাকার পরও করোনা মোকাবেলায় সঠিক প্রস্তুতি না নেওয়া সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। করোনার এই সংক্রমণ থামাতে না পারলে বড় স্বাস্থ্য বিপর্যয় হতে পারে। অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে মানুষের ঘরে থাকাই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ। এদিকে গণটিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া চলছে। কিন্তু এই কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ সময়ে দরকার দ্রুততম সময়ে একাধিক টিকা নিয়ে আসা। পাশাপাশি দেশেই টিকা তৈরির পরিকল্পনা করা উচিত। সবার টিকা নেওয়ার বিকল্প নেই। রোগী ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালগুলোতে আরও শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রন্টলাইনাদের প্রস্তুত রাখা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ এই কাজগুলো আগে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সকলের অংশগ্রহন ও আন্তরিক প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। বিশেষ করে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সকলকে উৎসাহিত করতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কার ভয়, উৎকণ্ঠা ও পরিস্থিতির উন্নতি স্বাভাবিক না হতেই দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ তীব্রতর হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে এর প্রভাব লক্ষণীয়। বাংলাদেশেও দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, কোভিড-১৯ বিদায় হওয়ার এখনো অনেক দেরি। কিন্তু এই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ আসলে কতটা প্রস্তুত? সরকারের নো মাস্ক নো সার্ভিস নীতি কতটা মানছে দেশের জনগণ? মাস্ক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় নিত্যদিনের সঙ্গী করোনা মহামারির এই সময়ে। বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই মাস্ককে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অন্যতম সুরক্ষাকবচ বলে আসছেন। এরই মধ্যে সরকারিভাবে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হলেও স্বাস্থ্যসম্মত মাস্কের ব্যবহারে আমরা অতটা সচেতন হচ্ছি না। পুলিশ ও প্রশাসনের লাঠিচার্জের ভয়ে কিংবা সরকারি বিধিমালার কারণে অনেকে জোর করে মাস্ক পরেন। তাও দেখা যায়, বেশির ভাগ সময় মাস্কটা পুলিশের ভয়ে পকেটে নিয়ে বের হচ্ছে, পুলিশ দেখলে মুখে দেয়, নয়তো পকেটেই থাকে। কেউ কেউ মাস্ক পরছেন ঠিকই, কিন্তু যখনই কারও সঙ্গে কথা বলতে যাবেন, তখনই মাস্কটা থুতনিতে নামিয়ে কথা বলেন। অর্থাৎ, সারা দিন মুখে মাস্কটা পরে থাকেন, কিন্তু যেই কারও সঙ্গে আলাপ করছেন, মাস্কটা মুখ থেকে নামিয়ে নিচ্ছেন। তাহলে মাস্ক ব্যবহারের উদ্দেশ্য কতটা সফল হলো? অথচ দরকারই ছিল কথা বলার সময় মাস্কটি আরও সতর্কতার সঙ্গে মুখে সুন্দরভাবে পরা। গণমানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা না এলে করোনার মতো মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ, বা আরও কোন ঢেউ এলে তা মোকাবিলা নিশ্চিত কঠিন হবে।

তাই আসুন, আমরা পরিস্থিতির নাজুকতা মোকাবিলায় আরও সচেতন হই, নিজেকে বাঁচাতেই মাস্ক ব্যবহারে নিজে আগ্রহী হই, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করি। কথা বলার সময় মুখের মাস্ক না নামিয়ে কথা বলি।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
শিক্ষক-কলামিস্ট, মোবাইল : ০১৭১৬ ২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন