শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা ৩০০ কারখানায়

নির্ধারিত সময়ের আগেই বেতন-বোনাস হবে : বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

ঈদুল ফিতরের বাকি আছে ছয় থেকে সাত দিন। এখনও মার্চের বেতন পাননি অন্তত ৩০০ পোশাক কারখানার শ্রমিক। এতে ঈদের আগে বেতন ও বোনাস নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
অন্যদিকে ৬৭ ভাগ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বোনাস হয়েছে। আবার অনেকে শুধু বেতন পেয়েছেন, যা ৬০ শতাংশ। শিল্প পুলিশ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ মে’র মধ্যে সদস্যভুক্ত সব কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের চেষ্টা চলছে। ঈদের আগেই সব কারখানা শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা হবে। এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ বছর কারখানার বেতন-বোনাস নিয়ে কোন সমস্যাই হবে না।
আশুলিয়া-সাভার এলাকার মোট ১ হাজার ৩২১টি কারখানার মধ্যে ১৪১টি কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৫৫, বিকেএমইএ’র ১৭ ও বিটিএমএ পাঁচটি কারখানা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায় থাকা কারখানার সংখ্যা আটটি এবং অন্যান্য ৪৫টি কারখানায় বেতন বোনাস নিয়ে শঙ্কা দেখা রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃতে এ বছর কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে যাতে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য একটি মনিটরিং টিম সবকিছু তত্ত্বাবধান করছেন। তাই অন্যান্য বছরের মতো বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছে মনিটরিং টিম।

ঢাকা, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামকে শ্রমঘন এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা তদারকির দায়িত্বে রয়েছে শিল্প পুলিশ।
সংস্থাটির তথ্য মতে, এসব এলাকায় বস্ত্র, তৈরি পোশাকসহ মোট ৭ হাজার ৯৮২টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানাসহ অন্তত ৩শ’ কারখানার শ্রমিকদের ঈদের আগে এপ্রিল মাসের বেতন বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরে দুই শতাধিক কারখানা রয়েছে। একই সঙ্গে আশুলিয়া-সাভার এলাকার কিছু কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ঈদের আগে নারায়ণগঞ্জের ৬০টি কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে জটিলতায় পড়তে পারে। এর মধ্যে বিজিএমইএর ১০, বিকেএমইএর ২৫, বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে পাঁচটি। এছাড়াও অন্যান্য কারখানা রয়েছে ১৭টি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, এবার করোনার কারণে পোশাক শ্রমিকদের ঈদ আনন্দ নেই। কারণ এবার শ্রমিকদের ছুটি দেয়া হচ্ছে না। ফলে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।

তিনি বলেন, আমরা সরকার ও পোশাক মালিকদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকের বেতন ও বোনাস দেয়ার জন্য। কিন্তু সরকার আমাদের কথা রাখেনি। সরকার ঘোষণা দিয়েছে ১০ মে অর্থাৎ ২৭ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে। তাতে অনেক শ্রমিক বেতন ভাতা পাবেন না বলেই শঙ্কা করছি। শ্রমিকরা যাতে আন্দোলন করতে না পারেন সেজন্য বলবে বেতন ও বোনাস দেবো। ২৭ রমজানের দুদিন পরেই ঈদ। ফলে বেতন বোনাসের জন্য আন্দোলনে নামতে পারবেন না শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, প্রত্যেকটি কারখানা কর্তৃপক্ষকে ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা উচিত।

গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক ও গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি শহিদুল ইসলাম সবুজ বলেছেন, দেশে মহামারি সময় যাচ্ছে। পাশের দেশ ভারতে বিপুল মানুষ মারা যাচ্ছে। এই করোনা মহামারির মধ্যে সরকার যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, অনেকেই নিরাপদে অবস্থান করছে। কিন্তু গার্মেন্টস খোলা। শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের পাওনা ঠিকমতো কেন বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তাদের ন্যায্য ছুটিও দেয়া হয় না। এমনকি গার্মেন্টস শ্রমিকদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করিয়ে নিলেও তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।

তবে শ্রমিকদের কথার সঙ্গে একমত নন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। তিনি বলেন, আমরা মাসের শুরু থেকেই বেতন বোনাস দিচ্ছি। গত শনিবার পর্যন্ত বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১ হাজারের অধিক কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়েছে। যা পরিমাণে বোনাস ৬৭ শতাংশ, বেতন ৬০ শতাংশের বেশি। বাকি কারখানাগুলোও সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে। শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে হিসেবে আছে তাতে ৯৪-৯৫ শতাংশ কারখানার বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হবে না। বাকী ৫/৬ শতাংশ কারখানা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন দেয় যে, কোন কারখানা বেতন-বোনাসের জন্য ব্যাংকে অগ্রিম প্রণোদনা ঋণ চায়, তা যাতে দেয়া হয়। আর এটা হলে আশাকরি এ বছর বেতন-বোনাস নিয়ে কোন সমস্যাই হবে না।

বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিচ্ছি। সবাই যাতে দ্রুত পরিশোধ করে এ জন্য মনিটরিং করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির ৬৭তম সভা ও তৈরি পোশাক খাতের টিসিসি কমিটির অষ্টম সভা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ১০ মের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।

ওই দিন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে করোনার মধ্যে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলকারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। যদি কোনো কারখানার শ্রমিকদের মার্চের বেতন বকেয়া থাকে সেগুলো ঈদের আগেই পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া সুবিধা মতো জোনভিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতেও মালিকদের পরামর্শ দেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Md Bodiuzzaman ১০ মে, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
আমরা এখনও কিছুই পাই নি
Total Reply(0)
Sbm Abu Sayed Rana ১০ মে, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 0
Thanks for Updates
Total Reply(0)
Uttam Singha ১০ মে, ২০২১, ১:৪৫ এএম says : 0
সরকারি তদারকি অবশ্যই বেশি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি, আর তা না হলে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে
Total Reply(0)
R S Roton ১০ মে, ২০২১, ২:৫০ এএম says : 0
আমি একজন প্রশাক শ্রমিক বোনাস তো দুরের কথা বেতনও এখন চোখে দেখিনি
Total Reply(0)
Fahaduzzamañ Ñur ১০ মে, ২০২১, ২:৫০ এএম says : 0
amadet factory ase na tara
Total Reply(0)
Md Rumanur Rahman ১০ মে, ২০২১, ২:৫১ এএম says : 0
Allah Tumi hefajot koro
Total Reply(0)
হাসান সোহাগ ১০ মে, ২০২১, ২:৫২ এএম says : 0
শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের পাওনা ঠিকমতো কেন বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না।
Total Reply(0)
গিয়াস উদ্দিন ১০ মে, ২০২১, ২:৫২ এএম says : 0
প্রত্যেকটি কারখানা কর্তৃপক্ষকে ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা উচিত।
Total Reply(0)
মনিরুজ্জামান ১০ মে, ২০২১, ২:৫৩ এএম says : 0
মুখে নয় কাজে দেখতে চাই
Total Reply(0)
Jahirul Islam Nibir ১০ মে, ২০২১, ২:৫৪ এএম says : 0
বেশিরভাগ মানে কি তার মানে সবাই না কেন এমন হল। আজকাল গরিব মানুষেরও টাকা মেরে খাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
Total Reply(0)
Dadhack ১০ মে, ২০২১, ১:৫২ পিএম says : 0
Without Quranic rule we will be oppressed by the rule in every sphere in our life.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন