বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

করোনায় বিদেশফেরত কোয়ারেন্টিন না মানলে মামলা

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২১, ১২:১৫ এএম

বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। আর ভারত থেকে ফিরলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার এবং ভারতের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে পালানোর ঘটনাও ঘটেছে। আর তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাই কোয়ারেন্টিন থেকে পালালেই কিংবা কোয়ারেন্টিন না মানলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এ কিংবা পেনাল কোডের ২৬৯ ধারায় মামলা করার সুযোগও আছে।
ইতোমধ্যে যশোরে কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে ভারত ফেরত ১০ জন পালানোর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ওই ১০ করোনা রোগীর বিরুদ্ধে গত ৮ মে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এ এই মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর গত সোমবার সকালে তাদের আটক করা হয়। বর্তমানে ৮ জন জামিনে আছেন, আর দুজন চিকিৎসাধীন আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন।
যশোরের হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ভারত থেকে ফিরে আসা ৭ করোনা রোগী ও স্থানীয় তিন করোনা রোগী যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেড জোন থেকে পালিয়ে যায়। রেড জোন থেকে ১০ করোনা রোগী পালিয়ে যাওয়ার খবর জানাজানি হলে এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ২৬ এপ্রিল পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের আটক করে ফের যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ এই ১০ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে সংক্রমণ রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এর ২৫(২) ধারায় মামলা দাখিল করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এর ২৪ ধারায় বলা আছে, যদি কোনও ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন, জ্ঞাত থাকা সত্তে¡ও অপর কোনও ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তার নিকট গোপন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। একই ধারার দ্বিতীয় উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন কোনও অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদÐে বা অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা অর্থদÐে বা উভয় দÐে দÐিত হবেন।
আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার ওপর অর্পিত কোনও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনও নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ হবে একটি অপরাধ। এই ধারায় যদি কোনও ব্যক্তি অপরাধ সংঘটন করেন তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদÐে, অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদÐে বা উভয় দÐে দÐিত হবেন। এই আইনের অধীনে সব অপরাধ অ-আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং আপসযোগ্য হবে।
পুলিশ সদর দফতরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেনাল কোডের ২৬৯ ধারা অনুযায়ী সংক্রমণ ঠেকাতে মামলা করার সুযোগ আছে। দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে যশোর ছাড়াও কুমিল্লা, মৌলভীবাজার জেলায় মামলা হয়েছে আগেও।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশি নাগরিক যারা আসছেন তাদের সীমান্ত অতিক্রম করার পর আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠাচ্ছি। তারপরও আমরা দেখেছি যে যারা রোগী কিংবা রোগীর এটেনডেন্টসহ অনেকেই এই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এটি একেবারেই যৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, কোয়ারেন্টিন থেকে চলে গেলে সেখানে যদি সম্ভাব্য কোনও রোগী থাকে, যাদের ভারত থেকে সংক্রমণ নিয়ে আসার আশঙ্কা আছে, তারা কিন্তু পুরো দেশবাসীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যারা পালিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ফেরত আনা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া কিন্তু চালু হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন