কাঙ্খিত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবের মধ্যে মধুমাস জৈষ্ঠের শুরুতেও অব্যাহত তাপ প্রবাহে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। গত কয়েকমাস ধরেই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের অনেক নিচে। সাথে তাপমাত্রার পারদও অনেক ওপরে। ফলে স্বাভাবিক জনজীবনে অস্বস্তি সহ জনস্বাস্থ্যে বিপত্তি ঘটছে। বাড়ছে ডায়রিয়া সহ পেটের পীড়া। ফসল উৎপাদনেও বিপত্তি অব্যাহত রয়েছে। সোমবারেও বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৩৬.৮ ডিগ্রীতে উঠে যায়। যা ছিল স্বাভবিকের ৩.৮ ডিগ্রী বেশী। এমনকি আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে যে মৃদৃ তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকা সহ দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে।
বৃষ্টির অভাব সহ অব্যাহত তাপ প্রবাহে সূর্যমুখি, মুগ, ভুট্টা ও সয়াবিন সহ বেশীরভাগ শাক-সবজীর উৎপাদনে মারাত্মক সংকট চলছে দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে। পানি সংকটে বরগুনা এলাকায় বোরো ধানে সেচ ব্যবস্থা পর্যন্ত ব্যহত হয়েছে এবার। লাগাতর অনাবৃষ্টিতে উজানের প্রবাহ সংকটে নদ-নদী সহ অভ্যন্তরীন জলাশয়ে সাগরের নোনা পানির অধিক্যের পাশাপাশি অব্যাহত তাপ প্রবাহে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া অব্যাহত রয়েছে। সোমবার পার্যন্ত সরকারী হিসেবেই দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার। মারা গেছেন ২১ জন। সোমবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায়ই নতুনকরে প্রায় সাড়ে ৫শ ডায়রিয়া আক্রান্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
চলতি মে মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এর স্থলে সোমবারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে স্বাভাবিকের ৩.৮ ডিগ্রী বেশী, ৩৬.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এমনকি আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল সহ সন্নিহিত এরাকায় মৃদু তাপ প্রবাহের কথা জানিয়ে তা অব্যাহত থাকার কথাও বলা হয়েছে সোমবারে। গত শনিবারেও বরিশালে ৩৬.৬ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ফলে জনজীবনে চরম অস্বস্তি অব্যাহত রয়েছে।
এমনকি সর্বকালের রেকর্ড ছাপিয়ে গত ২৫ এপ্রিল বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়সে উঠে যায়। অথচ আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে এপ্রিল মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ৩৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পরেরদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রীতে নামলেও তা ছিল স্বাভাবিকের ৪.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী। গত কয়েকমাস ধরেই বৃষ্টির অভাবের সাথে মৃদু থেকে মাঝারী তাপ প্রবাহে দক্ষিণের জনজীবনে অস্বস্তি আর দূর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে।
গত জানুয়ারীতে স্বাভাবিক ৮.৯ মিলিমিটারের স্থলে বরিশাল অঞ্চলে কোন বৃষ্টি হয়নি। ফেব্রুয়ারীতে অবহাওয়া বিভাগের হিসেবে স্বাভাবিক ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা থাকলেও তার পরিমান ছিল ১ মিলিমিটার। এমনকি মার্চে ৫৭.১ মিলিমিটারের স্থলে স্বাভাবিকের ৯৯.৫% কম বৃষ্টি হয়েছে। আর গতমাসে বরিশাল অঞ্চলে ১৩২.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা থাকলেও আবহাওয়া বিভাগের মতে তা ছিল স্বাভাবিকের ৯৯.৬% কম। এমনকি চলতি মাসে অবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদী বুলেটিনে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ১৭৫ মিলিমিটারের স্থলে কিছুটা কম বৃষ্টিপাতের পূর্বভাস দেয়া হলেও ১৭ মে পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২১.৬ মিলিমিটার। গত মাসে দক্ষিণাঞ্চলে দুদফায় কাল বৈশাখী আঘাত হানলেও তার সাথে কোন বৃষ্টি ছিলনা। সর্বশেষ গত ৭ মে বরিশালে ২৫ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়ার সাথে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছ ।
এদিকে এবারের নজিরবিহীন অনাবৃষ্টির সাথে সীমান্তের ওপারে অভিন্ন নদ-নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের ফলে গত ডিসেম্বর থেকেই সাগরের নোনা পানি উজানের নদ-নদীতে উঠে আসতে শুরু করে। গত মার্চে থেকে পরিস্থিতি যথেষ্ঠ জটিল হয়েছে। ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগর থেকে ১১০ কিলোমিটার উজানে বরিশালের কির্তনখেলা অতিক্রম করে চাঁদপুরের ভাটিতে হিজলা মোহনার মেঘনায় সাগরের লবনাক্ত পানি পৌছে গেছে। বরিশালের কির্তনখোলায়ই লবনাক্ততার মাত্রা ১২শ পিপিএম অতিক্রম করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, অভিন্ন নদ-নদীর পানির একতরফা প্রত্যাহার বন্ধ সহ স্বাভাবিক বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রার পারদ নিচে নামার যেমনি সম্ভবনা নেই, তেমনি সাগরের লবনাক্ত পানি উজানে উঠে আসাও বন্ধ হবেনা।
সোমবার দিনের বেলা আবহাওয়া বিভাগের পূর্বভাসে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের কোন পূর্বাভাস ছিলনা। তবে দিনভরই ছিল ভ্যাপসা গরম। আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল অঞ্চলে প্রবাহমান মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি , আগামী ৩দিন উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তনের সম্ভবনা নেই বলে জানিয়ে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করার কথা বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন