ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরাইল বর্বরোচিত হামলা অব্যাহত রেখেছে। এতে শিশু ও নারীসহ ফিলিস্তিনের দুই শতাধিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এতে তারা অবিলম্বে হামলা বন্ধের দাবি জানান। এছাড়া মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হওয়া ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নাগরিকদের উপর বিবেকবর্জিত কাপুরুষোচিত অবিরাম এই হামলার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এ হামলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের মাধ্যমে এই বর্বরোচিত হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় মানবাধিকার লংঘন ও যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য অবিলম্বে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। এবং এই আগ্রাসন বন্ধ ও মানবাধিকারের উপর সম্মান প্রদর্শন না করা পর্যন্ত ইসরাইলকে দেওয়া সামরিক সাহায্যসহ সব ধরণের সহযোগিতা বন্ধ রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি নাগরিকগণ যে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন তা থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অব বাংলাদেশের (এমলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক, মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, নারী নেত্রী ও নিজেরা করি সংগঠনের সমন্বয়ক খুশী কবির, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবি›র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী এডভোকেট জেড আই খান পান্না, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট তবারক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, রিব-এর নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ, বেলা-এর প্রধান নির্বাহী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্লাস্ট -এর অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে আরও বলা হয়, সপ্তাহব্যাপী উন্মত্ত যুদ্ধের নেশায় মত্ত দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে শত শত বোমা বর্ষণ করে ৫৮ জন শিশুসহ, দুই শতাধিক নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা এবং প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষকে আহত করেছে। অসংখ্য বাড়িঘর, ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র এমনকি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের অফিস ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। সংঘাতের স‚চনা হয়েছিল আল আকসা মসজিদে ধর্মপ্রাণ নিরস্ত্র নামাজরত মানুষের উপর আক্রমণের মাধ্যমে। জবাবে ফিলিস্তিনের মিলিশিয়া সংগঠন হামাস ইসরাইলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাতে বেশ কয়েকজন ইসরাইলি নাগরিকও নিহত হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, গত ১৫ মে প্রচলিত সকল আইন, রীতিনীতি ও প্রথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা ও এপি’র অফিস ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা, যেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের অফিসও ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল যখন পাশবিক উল্লাসে মেতে ফিলিস্তিনিদের হত্যা এবং তাদের সম্পদ, বাড়িঘর ধ্বংস করছে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে জোরাল কোনো প্রতিবাদ শোনা যাচ্ছে না। যদিও বিশ্বব্যাপী সকল মহাদেশের বড় বড় শহরে হাজার হাজার শান্তিকামী মানুষ ইসরাইলি বর্বরতাকে ধিক্কার ও নিন্দা জানাতে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষের সাথে পূর্ণ সংহতি ঘোষণায় করোনা পরিস্থিতির বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে। এতে আরও বলা হয়, গাজায় ইসরাইলের সহিংসতা বৃদ্ধির ফলে সেখানে মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে। জাতিসংঘের হিসাবে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যে ইসরাইলের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পেতে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন