গত মাসে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফর যখন চলছিল, তখনই লঙ্কান ক্রিকেটে চুক্তি নিয়ে বোর্ড-ক্রিকেটারদের ঝামেলার কথা শোনা গিয়েছিল। লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি) পারফরম্যান্সভিত্তিক চুক্তির পদ্ধতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে আয় কমে যাওয়ার শঙ্কায় খেলোয়াড়দের ক্ষোভ জন্মেছিল। কিছু সংশোধনের পর এখন সেই পদ্ধতিই বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে এসএলসি, কিন্তু এ নিয়ে এখন দুই পক্ষের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
চুক্তির খুঁটিনাটি নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে ক্রিকেটারদের। চুক্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে পয়েন্টের ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করার কথা বলা আছে। কিন্তু পয়েন্ট কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, সেসব খুঁটিনাটি পরিষ্কার করা না হলে একযোগে অবসর নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা, এমনটাই জানাচ্ছে শ্রীলঙ্কান দ্য সানডে টাইমস। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার ক্রীড়ামন্ত্রীর নিয়োগ দেওয়া পাঁচ সদস্যের ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ব্যবস্থাপনা কমিটি’র সদস্য অ্যাশলি ডি সিলভা জানিয়েছেন, খেলোয়াড়দের এই চুক্তিতে সই করার জন্য এই মাসের শেষ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ দুই বছরে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স, ফিটনেস, শৃঙ্খলা, দলে অবদান, পেশাদারত্ব, নেতৃত্ব... এসব দিক বিবেচনা করে ক্রিকেটারদের চারটি গ্রেডে ভাগ করা হয়েছে। ক্রিকেট কমিটির দেওয়া মূল্যায়নের ভিত্তিতে ডিরেক্টর অব ক্রিকেট, প্রধান কোচ, ফিজিও ও নির্বাচকেরা মিলে সব পারফরম্যান্স দেখে এই শ্রেণিভেদ করবেন। ক্রিকেটাররা চাইছেন, প্রতিটি বিষয়ে পয়েন্ট কীভাবে ভাগ করা হয়েছে, সেটি যেন বোর্ড পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়। যাতে বোর্ডের ভাবনাটা তারা বুঝতে পারেন।
এসএলসির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলোচনায় খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি আইনজীবী নিশান সিডনি প্রেমাথিরত্নে সানডে টাইমসকে বলেছেন, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়ের এই ধারণাটা একেবারে সঠিক যে খেলোয়াড়দের র্যাঙ্কিংয়ের ভাগের ক্ষেত্রে পয়েন্ট কীভাবে ঠিক করা হচ্ছে, সেটা জানার অধিকার তাঁদের আছে।’ প্রেমাথিরত্নের কথা, খেলোয়াড়েরা বিশ্বাস করেন, পারফরম্যান্সভিত্তিক এই পদ্ধতি শুধু তখনই কাজ করবে, যখন সব দিক থেকে চূড়ান্ত স্বচ্ছতা থাকবে। ‘স্বচ্ছতা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাতে খেলোয়াড়েরা বুঝতে পারবেন তাঁদের মূল্যায়ন কীভাবে হচ্ছে এবং কোন দুর্বলতা নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হবে।’
আর ডেইলি এফটি নামের পত্রিকায় অ্যাশলি ডি সিলভা বলেছেন, ‘চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। খেলোয়াড়েরা একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছেন, কিছু অদলবদল চেয়েছেন যেটা আমাদের আইনজীবী করেছেন। এখন আমরা সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে সবকিছু ভাগাভাগি করব। এখন পর্যন্ত কেউ বলেননি যে তারা চুক্তিতে সই করবেন না।’ বাংলাদেশে লঙ্কান খেলোয়াড়েরা ‘সফরভিত্তিক চুক্তিতে’ এসেছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাশলি ডি সিলভা। বাংলাদেশে থাকা অবস্থাতেই এই চুক্তিতে সই করার সুযোগ আছে তাঁদের, না হলে সফর থেকে গিয়েও করতে পারবেন। পরে জানিয়েছেন, ‘নতুন চুক্তিতে সই করার জন্য খেলোয়াড়দের এই মাসের শেষ পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে।’
এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম, ওয়ানডেতে নবম। আর র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে যাওয়া মানে দেশটির সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ব্র্যান্ডের (ক্রিকেট) ম‚ল্যও কমে গেছে। তাতে টিভিস্বত্ব, স্পনসরশিপ থেকে বোর্ডের আয় কমেছে। তার প্রভাবে খেলোয়াড়দের আয় কমাতে চাইছে বোর্ড। এসএলসি চাইছে এভাবে করে ক্রিকেটারদের ওপর চাপ বাড়াতে, যাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার পারফরম্যান্স ভালো হয়। তাতে বোর্ডের স্পনসরশিপ-টিভিস্বত্ব আয় বাড়বে, খেলোয়াড়দের সেখান থেকে দেওয়া হবে পারফরম্যান্সভিত্তিক বোনাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন