নজরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ থেকে : হঠাৎ করেই বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের আওতাধিন রাজবাড়ী জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়টি ফরিদপুরে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে কার্যালয়টি হস্তান্তরের তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ওই কার্যালয়টি স্থানান্তর করা হলে এ জেলার চারটি উপজেলার ২৬টি গ্রামে থাকা তিন শতাধিক কৃষককে দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। যে কারণে এ জেলায় দিন দিন বিকাশমান রেশম চাষ কার্যক্রম ব্যাহত হবার আশংঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সাথে রেশম গুটির উৎপাদনও হ্রাস পাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই রেশম চাষীরা বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে এ কার্যালয়টি স্থানান্তর না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজবাড়ীতে প্রায় দশ বছর আগে কয়েকটি এনজিও রেশম গুটি উৎপাদনের প্রধান উপকরণ তুঁত গাছ লাগানো, পোকা পালন এবং গুটি উৎপাদন কাজ শুরু করে। তবে কয়েক বছরের মধ্যে এনজিও গুলো তাদের কার্যক্রম থেকে সড়ে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীতে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে। সম্প্রসারিত কার্যক্রম আশানুরুপ হওয়ায় বোর্ড ২০১১ সালে রাজবাড়ী জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় স্থাপন করে। ওই কার্যালয়টি রাজবাড়ীতে স্থাপন হবার পর আরো বেগমান হয় রেশম চাষ কার্যক্রম। স্বল্প সময়ের মধ্যেই জেলা সদরের গন্ডি পেড়িয়ে অন্যান্য উপজেলা এলাকাতেও ছড়িয়ে পরে। বর্তমানে জেলা সদরের রামকান্তপুর, মুরারীপুর, ভান্ডারিয়া, মূলঘর, দর্পনারায়নপুর, আলীপুর, ভগিরথপুর ও মাটিপাড়া, জেলার কালুখালী উপজেলার সূর্যদিয়া, মোহনপুর, বোয়ালিয়া, মাঝবাড়ী, দয়রামপুর ও খামারবাড়ী, পাংশা উপজেলার মৈশালা, নারায়নপুর, চরচিলকা, সত্যজিৎপুর ও বৃত্তিডাঙ্গা, বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুরের নারায়রপুর, সেখআড়া, খালকুলা, গোবিন্দপুর, বাত্তিমারা, বারমল্লিকা ও জিয়েলগাড়ি গ্রামের এ কার্যক্রম চলছে। বছরে তিন বার উৎপাদন হয় রেশম গুটি। অথচ তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয়না। স্বল্প ব্যয়ে ছোট্ট একটি ঘরের তার মধ্যে চন্দ্র ঢালায় তুত গাছের পাতা খাইয়ে পোকা পালন এবং রেশম গুটি উৎপাদন করা হয়। বিষয়টি এলাকার দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা লুফে নেয় এবং তারা উৎপাদিত গুটি বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ আয় করে আসছেন।
শহরের শ্রীপুর এলাকায় থাকা জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে জানা যায়, বর্তমানে এ জেলার ২৬টি গ্রামে চলছে রেশম চাষ কার্যক্রম। এ সব গ্রামে থাকা তিন শতাধিক চাষী প্রতিবছর ১১ হাজার ডিম পালন করে প্রায় চার হাজার কেজি রেশম গুটি উৎপাদন করছেন। যে গুটির বাজার মূল্য দশ লক্ষাধিক টাকা। জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের মাধ্যমে উপজেলা ম্যানেজারের কার্যালয় এবং পাঁচটি উপকেন্দ্রের সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরলশ পরিশ্রম করে ওই কাজ পরিচালনা করছেন। যার কারণে সুফলতা এসেছে, রাজবাড়ীতে বিস্তৃতি ঘটছে রেশম চাষ কার্যক্রম। সাম্প্রতিক সময়ে ওই কার্যক্রম আরো বেশি বেগমান হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছিল নতুন নতুন গ্রাম, লাগানো হচ্ছিল তুঁত গাছ। উজ্জলতম এমনি সময়ে হঠাৎ করেই জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়টি ফরিদপুরের স্থানান্তরের হটকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ওই কার্যালয়টি ফরিদপুরে চলে গেলে এ জেলার চাষীদের পোহাতে হবে চরম দুর্ভোগ। জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে চাষীদের মাঝে রেশম ঘর দেয়া, ঋণ দেয়া, চাষী বা বসমি প্রশিক্ষণ দেয়া, সর্বপরি চাষীদের উৎপাদিত রেশম গুটি ক্রয় ও নগদ অর্থ সরবরাহ করা হয়। তবে এ কার্যালয়টি ফরিদপুরে চলে গেলে চাষীদের সেখানে গিয়ে এ কাজগুলো করতে হবে। যা কি না এ জেলার রেশম চাষ সম্প্রসারণে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
জেলা সদরের রামকান্তপুরের চাষী আব্দুল গফুর জানান, রেশম গুটি উৎপাদনের সকল উপকার হাতে নাগালে পাওয়া এবং উৎপাদিত গুটি বিক্রি ও টাকা প্রাপ্তিতে কোন রকম সমস্যার সৃষ্টি না হওয়ায় দ্রæত সময়ের মধ্যেই তাদের গ্রামে রেশম চাষী বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এমনই একটি সময়ে জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়টি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। কার্যালয়টি চলে গেলে নতুন চাষী তো বাড়বেই না বরং যারা রেশম আবাদ করছেন তারাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। কারণ তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো পাওয়া হবে বিলম্বিত এবং উৎপাদিত গুটি বিক্রি করতে যেতে হবে ফরিদপুরে। তিনি মনে করেন বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের এই হটকারী সিদ্ধান্ত পরিহার করা প্রয়োজন। ফরিদপুরে এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে এ কার্যালয় স্থানান্তরের কি প্রয়োজন। সেখানে নতুন কার্যালয় স্থাপন করলেই তো হয়।
অপর চাষী আছিরন নেছা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে আবেদন তিনি যেন রাজবাড়ীর এ কার্যালয়টি স্থানান্তর না করেন। রেশম চাষ বাড়–ক এটা তারও চাওয়া। তবে এ জেলার চাষীদের ক্ষতি করে নয়।
বাংলাদেশ রেশম বোর্ড রাজবাড়ী সদর উপজেলা কার্যালয়ের ম্যানেজার পরিমল কুমার দে বলেন, এখন খুব সহজে এ জেলার রেশম চাষীদের সহযোগিতা করা সম্ভব হয়। তবে জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়টি অন্যত্র চলে গেলে চাষীদের সেখানেই যেতে হবে। এতে করে তারা দুর্ভোগের শিকার হবে। তারা যেহেতু বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের কর্মকর্তা তাই বোর্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে তার কিছু বলার সুযোগ নেই।
জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ রেশম বোর্ড নিয়েছে। এখানেই তার কিছুই করার নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন