শেষ ২৫ দিনে একটি ম্যাচ আর এক সেশনের অনুশীলন। বাদ বাকি সময় শুয়ে বসে ফিটনেস নিয়ে হালকা কাজ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে নিজের প্রস্তুতির বর্ণনা দিতে গিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের কণ্ঠে ঝরে পড়ল হতাশা।
করোনাভাইরাসের কারণে আইপিএল মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে ২ মে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন মুস্তাফিজ। এরপর হোটেল রুমেই কেটেছে বাঁহাতি পেসারের সময়। ৬ মে বাংলাদেশ ফেরার পর হোটেলে কড়া কোয়ারেন্টিনে ছিলেন আরও ১২ দিন। দু দিন আগে কোয়ারেন্টিন মুক্ত হয়ে মাঠে ফিরেও অনুশীলন করতে পারেননি বৃষ্টির কারণে। গতকাল তাই লম্বা সময় পর বল করতে পেরেছেন তিনি।
এদিন মূল মাঠে প্রথমে ফিল্ডিং দিয়ে শুরু হয় মুস্তাফিজের প্রস্তুতি। পরে ইনডোরে বল করেছেন কয়েক ওভার। তবে লম্বা সময় পর প্রথম দিনের অনুশীলনে বাড়তি চাপ নেননি। অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমে কথা বলতে এসেই প্রকাশ করলেন নিজের মনের ভেতরের খচখচানি, ‘ ‘আইপিএলে আর আমাদের দেশে রুম কোয়ারেন্টিন মিলিয়ে গত ২৫ দিনের মধ্যে আমি কেবল একদিন প্র্যাকটিস (করেছি) ও একটি ম্যাচ খেলেছি। এখন জানি না... আমি আর সাকিব ভাই, আমরা দুজনই ওরকমই প্রায় ছিলাম। এই তিন দিনে... প্রথম দিন তো বৃষ্টির কারণে আমরা প্র্যাকটিস করতে পারিনি, আজকে (গতকাল) করলাম, আরও দুই দিন সময় পাব। আল্লাহর ওপরে ছেড়ে দিলাম... দেখি চেষ্টা করে, কী হয়...।’
আইপিএলে পাওয়া আত্মবিশ্বাস আটকা পড়েছে চার দেয়ালে বন্দি জীবনে। বোলিংয়ের ধার, সুর-ছন্দ হারিয়েছে নিস্তরঙ্গ দিন-রাত্রিতে। লম্বা সময় কোয়ারেন্টিনে থেকে নিজের ভেতর তৈরি হয়েছে সংশয়। প্রস্তুতির ঘাটতিও প্রকট। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজে নিজের বোলিং নিয়তির হাতে ছেড়ে দিলেন মুস্তাফিজ। প্রস্তুতির ঘাটতি কতটা থাকবে, সেই প্রশ্নে মুস্তাফিজের সোজা-সাপ্টা উত্তর, ‘অনেক...।’
দীর্ঘদিন পর বোলিং করে নিজের অবস্থা যা বুঝলেন, সেখানেও খুব আশা জাগানিয়া কিছু খুঁজে পাননি তিনি, ‘একটানা ১৪ দিন আর ওদিকে ৫ দিন (ভারতে), ১৯ দিন যদি কিছু না করি... শুধু রুমের ভেতর টুকটাক যে কাজগুলো করা যায়, ওগুলো করে যদি প্রথম দিনেই অনেক কিছু ভাবি, তাহলে তো হওয়ার কথা নয়। আমি চেষ্টা করছি যেন আস্তে আস্তে... আজকে (কাল) যেমন প্রথম সুযোগ পেলাম, যেমন হাতে ব্যথা হতে পারে, এগুলো নরম্যালি দেখছি...।’
আইপিএলে এবার তার বোলিংয়ে বেশ কিছু বৈচিত্র্য দেখা গেছে। ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড স্লোয়ার করেছেন, স্লোয়ার ইয়র্কার করেছেন। প্রায় হারিয়ে ফেলা সেই ইয়র্কারের ঝলকও কিছুটা দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজে সেসবের কিছু দেখা যাবে? মুস্তাফিজের উত্তর আগের মতোই, ‘আগেই উত্তর দিলাম (বোলিং নিয়ে) বাদবাকি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিলাম... ২৫ দিন না করে আমি কীভাবে বলব!’
যাবতীয় সমীকরণ বলছে, কিছুটা এগিয়ে থেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ। সিরিজ পূর্ব সেই ভাবনার সঙ্গে দ্বিমত নেই মুস্তাফিজুর রহমানেরও। তবে মাঠের লড়াইয়ে কোনো দলকেই হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ দেখেন না এই বাঁহাতি পেসার। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ এখন আছে সাতে, শ্রীলঙ্কা নয় নম্বরে। নতুন অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের নেতৃত্বে তরুণ দল নিয়ে এই সিরিজ থেকে ওয়ানডেতে নতুন যাত্রা শুরু হচ্ছে লঙ্কানদের। বাংলাদেশ সেখানে পাচ্ছে পূর্ণ শক্তির দল, অভিজ্ঞতায় যারা এগিয়ে বেশ।
ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশ বরাবরই বেশ আত্মবিশ্বাসী দল। দেশের মাটিতে তাদের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ হার ছিল সেই ২০১৬ সালে। সব মিলিয়েই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখা যায়। মুস্তাফিজ অবশ্য শুরুতে তা মানতেই চাইলেন না। মাঠে বল হাতে তিনি যতটা প্রস্ফুটিত, সংবাদমাধ্যমের সামনে বরাবরই ততটাই গুটিয়ে রাখেন নিজেকে। লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজের সম্ভাবনার প্রসঙ্গে মুস্তাফিজ উত্তর দিলেন তার মতো করেই, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যারা খেলছে, কেউ ছোটখাটো নয়। আমার মনে হয়, আমরা দুই দল সমান। দল তো আমি কোনোটাই ছোট দেখি না। দিনশেষে তো আমাদের জিততেই হবে, না?’
দেশের মাঠের সমীকরণ মনে করানোর পর অবশ্য নিজেদের একটু এগিয়ে রাখলেন মুস্তাফিজ। তবে সেখানেও তিনি বেশ সতর্ক, ‘আমাদের দেশে আমরা বেশি ম্যাচ জিতেছি, অবশ্যই তাই আমরা এগিয়ে থাকব ওই দিক থেকে। (সিরিজ জয়) সম্ভব তো শতভাগ দেখছি। এখন পারফর্ম করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ দেশের মাঠে সবশেষ দুই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। লঙ্কানদের দিয়ে কি হোয়াইটওয়াশের হ্যাটট্রিক সম্ভব? মুস্তাফিজ মিলিয়ে দিলেন সরল অঙ্ক, ‘এটা খেলার পরে বলতে পারব, খেলার আগে বলতে পারব না।’
সিরিজের প্রতিটি ম্যাচ আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ। সুপার লিগের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ম্যাচ পন্ড হলে বা ফলাফল না এলে প্রতি দল ৫ পয়েন্ট করে পাবে। জয়ের জন্য প্রতিটি দলের জন্য বরাদ্দ থাকে ১০ পয়েন্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন