নেপালে রাজনীতিতে নাটকীয় মোড় দিয়ে শনিবার ভোর রাতে সংসদ ভেঙে দিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবীভা-ারী। কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ক্যাবিনেট সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব দেন। ফলে ফের নির্বাচনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট। আগামী নভেম্বর মাসের ১২ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে হতে পারে ভোট গ্রহণ। কয়েক দিন আগেই পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পরাজিত হন ওলি। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বিরোধীরা। প্রেসিডেন্টের দেয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বে নেপালি কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়। ফলে ফের ওলিকেই কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবীভা-ারী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার তোড়জোড় করছিল বিরোধী দলগুলো। ফলে সংসদ ভেঙে দেয়ার নেপথ্যে নিজের পিঠ বাঁচানোর তাগিদও রয়েছেভা-ারীর বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সংসদের আস্থাভোটে পরাজিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী কে পিশর্মাওলি। তারপর থেকেই নেপালে তুঙ্গে রাজনৈতিক টানা পোড়েন। পরবর্তী সরকার গড়া নিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এহেন পরিস্থিতিতে নতুন সরকার গড়তে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবীভা-ারী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন নেপালি কংগ্রেসের নেতা শের বাহাদুর দেউবা। কিন্তু নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ‘প্রচ-’ওরফে পুষ্প কমল দহলের সমর্থন পেলেও জনতা সমাজবাদী পার্টির সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন তিনি।
প্রসঙ্গত, সংসদে নেপালি কংগ্রেসের ৬১ এবং প্রচ-ের দলের ৪৯ জন সদস্য ছিলেন। তবে এদের সম্মিলিত ১১০টি আসন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। ২৭৫ আসন বিশিষ্ট নেপালি সংসদে বর্তমানে ২৭১ জন সদস্য রয়েছেন। ফলে ম্যাজিক ফিগার ছিল ১৩৬। ওলকে সমর্থন জানান ১২১ জন সদস্য। কিন্তু সংসদ ভেঙে নির্বাচন ঘোষণা করায় আপাতত এই সমীকরণ অর্থহীন।
নেপালের সংসদ ভেঙে দেয়ার ফলে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটলো। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট তখন তাদের সেই সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিয়েছিল। নেপালের দ্য হিমালয়ান টাইমসের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পিশর্মা অলি শনিবার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়কে সংসদ ভেঙে দেওয়ার এবং শিগগির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সুপারিশ করেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আজ এক বিবৃতিতে ঘোষণা করে যে, সংবিধানের ৭৬ (৭) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, আগামী ১২ নভেম্বর এবং ১৯ নভেম্বর আগাম নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন প্রেসিডেন্ট।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী অলি ও বিরোধী নেতা শের বাহাদুর দেউবা প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবি উত্থাপন করলে কারও প্রতি আস্থা অর্জনের পর্যাপ্ত কারণ নেই উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট তা প্রত্যাখ্যান করেন।সূত্র :টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিমালয়ান টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন