রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

পোখরায় আরচ্যার সোমার স্বর্ণালী সকাল

জাহেদ খোকন, নেপাল থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:২০ পিএম

নেপাল সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের আরচ্যারি ডিসিপ্লিন থেকে আগের দিন ছয়টি স্বর্ণপদক জিতেছিল বাংলাদেশ। সোমবারও আরচ্যারি থেকেই আসে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। এদিন চার স্বর্ণ জিতে লাল-সবুজের আরচ্যাররা হাসলো সোনালী হাসি। এদিনের শুরুতে সকালে পোখরার রঙ্গশালা রেঞ্জে আরচ্যারির কম্পাউন্ড নারী এককে বাংলাদেশের সোমা বিশ্বাস শ্রীলঙ্কার অনুরাধা করুনারতেœকে হারিয়ে সোনা জিতে নেন। ফাইনালে তিনি প্রথম সেট ২৮-২৬ পয়েন্টে জিতেন। দ্বিতীয় সেট ২৮-২৮ পয়েন্টে ড্র করলে তৃতীয় সেট জিতে নেন ৩০-২৮ পয়েন্টে। পরের সেট ২৯-২৫ পয়েন্টে জেতার পর শেষ সেট ২৭-২৭ পয়েন্টে ড্র করে সব মিলিয়ে ১৪২-১৩৪ পয়েন্টের ব্যবধানে লঙ্কান আরচ্যার করুনারতেœকে হারিয়ে সেরা সাফল্য তুলে নেন সোমা।

পোখরায় আরচ্যার সোমার স্বর্ণালী সকালে তখন রঙ্গশালা আরচ্যারি রেঞ্জে এক আনন্দঘন মূহূর্ত। লড়াইয়ের শেষ তীরটি লক্ষ্যভেদ হওয়ার পর স্কোর বোর্ডের দিকে তাকান বাংলাদেশের স্বর্ণকন্যা। দেখেন সবার উপরে তার নাম। পরক্ষণেই মাইকে ভেসে আসলো ঘোষকের কন্ঠস্বর, কম্পাউন্ড নারী ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন বাংলাদেশের সোমা বিশ^াস। এ আওয়াজ কানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সোমা। অঝোরে কান্না শুরু করেন মাগুরার এই তীরন্দাজ। কান্নার কারণে ঠিক মতো কথাই বলতে পারছিলেন না। এবারের এসএ গেমসে যার খেলার কথাই ছিল না, দলে যিনি ছিলেন স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড় হিসেবে। সেই সোমাই কিনা জিতলেন স্বর্ণ! দেশের সেরা আরচ্যার রোমান সানার হাত ধরে অনেকবারই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উড়েছে লাল-সবুজ পতাকা। টেলিভিশনে সেই দৃশ্যগুলো দেখে সোমা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন একদিন তিনিও দেশের পতাকা গায়ে জড়াবেন। স্যালুট জানাবেন জাতীয় পতাকাকে। কিন্তু এত সহজেই যে তার সেই স্বপ্নপূরণ হবে তা ভাবতে পারেননি সোমা। তাই তো এক সময়ের খো খো ও ক্রিকেট খেলোয়াড় মিরপুর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী সোমা সোমবার বিজয়মঞ্চে দাঁড়ানোর পর যখন বেজে ওঠে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’-তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। পতাকাকে স্যালুট জানিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছিলেন না। চোখে অশ্রু নিয়েই সোমা বলেন,‘আমার এই পর্যায়ে আসার পেছনে চপল স্যার, জিয়া স্যার এবং কোচ মার্টিন স্যারের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাদের সাপোর্টে আজ আমি এতদূর আসতে পেরেছি। দেশকে এনে দিতে পেরেছি সম্মান।’

বাংলাদেশ আরচ্যারির কম্পাউন্ড ইভেন্টে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বন্যা আক্তার, শ্যামলী রায় ও সুস্মিতা বনিক। এ ত্রয়ীর পরই স্থান সোমা বিশ্বাসের। স্ট্যান্ডবাই আরচ্যার হিসেবে নেপালে খেলতে এসেছিলেন। তাই স্বর্ণ জয়ের প্রত্যাশাটাও ছিল না তার। সোমার কথা,‘আমার প্রত্যাশা ছিল না এই ইভেন্টে স্বর্ণ জেতার। কেউ আশাও করেননি। আর আমি ছিলাম টিমের চার নম্বর প্লেয়ার। কারণ নেপালে খেলতে আসার আগের দিনও আমাকে পরীক্ষার হলে বসতে হয়েছিল। তার আগে পাঁচদিন অনুশীলন করতে পারিনি টানা দু’টি পরীক্ষা থাকার কারণে। আরচ্যারি এমন একটি খেলা যেখানে একদিন অনুশীলন না করলেই ফিটনেস থাকে না। সবকিছু মিলিয়ে আমার কনফিডেন্ট শতভাগ ছিল না। দলের সদস্য এবং কোচেরও আতœবিশ্বাস কম ছিল আমাকে নিয়ে। আমি মনে করছি হয়তো বা কিছু একটা হবে। তবে আমি যে টিমে সুযোগ পাব, সেটা যেমন ভাবতে পারিনি তেমনি সুযোগ পেয়ে ফাইনালে উঠব তাও ভাবিনি। সবকিছু আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’

এসএ গেমস আরচ্যারিতে খেলার জন্য ১ ডিসেম্বর নেপালে আসার কথা ছিল বাংলাদেশ আরচ্যারি দলের। কিন্তু সোমার ডিগ্রি পরীক্ষার কারণে ফ্লাইট দু’দিন পিছিয়ে দেয় ফেডারেশন। চাপটাও বেড়ে যায় সোমার। এরপর এসএ গেমসে খেলতে আসলেও পদক পাওয়ার ব্যাপারে কোনো বিশ^াসই ছিল না তার। এসব কথা বলতে গিয়ে আবারও সোমার কান্না,‘একদম সত্যি কথা আমার নিজের প্রতি কোনো আতœবিশ^াস ছিল না। কারণ আমার পরীক্ষা ছিল। আমার পরীক্ষার কারণে ফেডারেশন কর্তারা জাতীয় দলের ফ্লাইট দু’দিন পিছিয়ে দেন। আমি তাদের মানসম্মান রাখতে পারেছি বলে আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’

এক সময়ের ক্রিকেট ও খো খো খেলোয়াড় সোমা তার বড় ভাই আনোয়ার হোসেনের হাত ধরেই আরচ্যারিতে আসেন। আনোয়ার সাবেক আরচ্যার ও বর্তমানে কোচ। সেই বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালে তীর ধনুক হাতে নেন সোমা। কলেজে পড়ার সময় কোচ ফারুক ঢালির মাধ্যমে আরচ্যারিতে প্রবেশ সোমার। প্রথমে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে সাত দিন অনুশীলন করেছিলেন। শুরুটা ব্যাম্বু দিয়ে। আস্তে আস্তে নিজের পারফরম্যান্সের উন্নতি করতে থাকেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুযারির শেষ দিকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পান তিনি। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে গত বছর দলীয় ইভেন্টে স্বর্ণ জিতলেও এককে ছিল রৌপ্য। ঘরোয়া আসরে স্বর্ণ পদক না পাওয়া মেয়েটাই আজ আন্তর্জাতিক আসরের স্বর্ণকন্যা।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন