শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জনশক্তি রফতানি নিরাপদ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অনুপ্রবেশ রুখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারত ছাড়াও এ অঞ্চলের নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। অন্যান্য দেশেও পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলের বাইরেও নানান দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। দ্রুত সংক্রমণশীল ও ভয়ঙ্কর এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপীই নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অনুপ্রবেশ রোধে একের পর বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশী নাগরিকদের ওপর প্রবেশনিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে বাংলাদেশ এক বড় ধরনের দুর্বিপাকের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরা এবং প্রত্যাশীদের নতুন করে কর্মসংস্থান লাভ করার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা উপস্থিত হয়েছে। যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আরো কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে, ওইসব দেশ বাংলাদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের কথা বলা যায়। বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির প্রধান বাজার সউদী আরব এখনো এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলেও সম্প্রতি যেসব শর্ত দিয়েছে তাতে দেশে থাকা কর্মীদের সেখানে ফেরা এবং অন্যদের কর্মংস্থানের সুযোগ লাভ করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। কর্মীদের নিজ খরচে বাধ্যতামূলকভাবে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা, সেখানে দু’দফা করোনা টেস্ট, বাধ্যতামূলক মেডিক্যাল ইনসিউরেন্স, করোনা ছড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিপুল অংকের জরিমানা, জেল ইত্যাদি শর্ত মানা অসম্ভবপর। তারপরও চাকরি হারানোর ভয়ে প্রবাসী কর্মীরা কর্মস্থলে ফেরার জন্য উদগ্রীব। ফ্লাইট সংকট এক্ষেত্রে প্রবল বাধা হিসাবে দেখা দিয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক রুটের সকল ফ্লাইট প্রথমে বন্ধ এবং পরে সীমিত আকারে খুলে দিলেও ফ্লাইট সংকট প্রকট।

বলার অপেক্ষা রাখেনা, করোনার বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। এদেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, কর্মপ্রবাহ, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। অর্থনীতির প্রধান দুটি স্তম্ভ রফতানি ও প্রবাসী আয় ব্যহত হয়েছে। করোনাকালের আগে যেখানে প্রতি মাসে অন্তত ৬০ হাজার লোকের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে সেখানে করোনাবছরে তা তলানিতে নেমেছে। উপরন্ত এ সময়ে অন্তত ৫ লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছে। করোনাকারণে বিদেশে জনশক্তি আমদানি সংগতকারণেই কমেছে। এর মধ্যেও যতটা সুযোগ ছিল বা আছে, তাও আমরা ঠিকমত কাজে লাগাতে পারিনি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে প্রবল হলেও আস্তে আস্তে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্যেসহ সব দেশেই সব কিছু ধীরে ধীরে খুলে দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। অথচ আমরা আছি পিছিয়ে। ৩০টির অধিক দেশের সঙ্গে আমাদের যাতায়াত বন্ধ। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে ভারত যতটা বৈরী প্রভাবের মুখে না পড়েছে, আমরা যেন তার চেয়েও বেশি শিকার হয়েছি। এখন করোনার টিকার সনদ ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। অথচ, আমাদের টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ হতে বসেছে টিকার অভাবে। ভারত চুক্তি অনুযায়ী টিকা না দেয়ার এ অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষীয় ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত এখন গোটা জাতিকে দিতে হচ্ছে। টিকার ক্ষেত্রে ভারতনির্ভরতা যে মোটেও ঠিক হয়নি, এখন সবাই সেটা স্বীকার করছেন। টিকার অভাবে প্রবাসী কর্মীরা বিপাকে পড়েছে। জানা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ হাজার কর্মীর ভিসা প্রসেসিংয়ের পর্যায়ে আছে। এদের বেশিরভাগ টিকা নেয়নি। তাদের টিকাপ্রাপ্তি অনিশ্চিত পরিস্থিতি যেমন, তাতে প্রতীয়মান হচ্ছে, ভবিষ্যতে টিকার সনদ ছাড়া কোনো কাজেই কারো বিদেশে যাওয়া যাবে না। তেমন হলে কোনো কর্মীরই টিকার সনদ ছাড়া বিদেশে কর্মসংস্থান হবে না। এখন বিদেশে কর্মী পাঠাতে করোনার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক। আবার টিকার সনদও চাওয়া হচ্ছে।

এমতাবস্থায় প্রত্যেকের টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় টিকা ক্রয় বা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে টিকা পাওয়া যায়, সেখানে থেকেই তা আনতে হবে। করোনা থেকে মুক্ত থাকার উপায় হিসাবে টিকা অবিকল্প। সিদ্ধান্তগত ত্রুটির কারণে যে মূল্য এখন দিতে হচ্ছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন কোনোভাবেই আর না হয়। টিকা প্রাপ্তির সহজ সুযোগ আমরা নিতে পারিনি। শুরু থেকেই চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি বা সমঝোতায় আসতে পারলে এখন এই দুর্ঘটে পড়তে হতো না। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো টিকা পাওয়ার ব্যাপারে তার তৎপরতা সন্তোষজনক নয়। আবার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অনুপ্রবেশ রোধে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা আরোপ কতটা যৌক্তিক তার ব্যাখ্যা ওইসব দেশের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঠিকমত তুলে ধরতে পারেনি। এক্ষেত্রেও তার ব্যর্থতা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো তাহলে কী জন্য আছে? এর মধ্যেও ভারতীয় ও পাকিস্তানী দূতাবাসগুলো খুবই সক্রিয়। তাদের মন্ত্রীরা নিয়মিত ট্যুর করছেন। এর ফল দু’দেশেই পাচ্ছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ। তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন দীর্ঘদিন। তার কন্ট্রাক্ট ও কানেকটিভিটি সম্পর্কে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি কেন তা ব্যবহার করছেন না, এই প্রশ্ন অনেকের মনেই। মোটকথা: টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে জনশক্তি রফতানির বিষয়টিও বাধামুক্ত করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন