ভারতে ছড়িয়ে পড়া নতুন রোগ ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ঠেকাতে ও নিয়ন্ত্রণে গাইডলাইন দেয়া হবে। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা কেমন হবে, ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল রোববার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি জানান, এই সপ্তাহের পর টিকার মজুদ একেবারেই শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে ভারতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাকের সংক্রমণ। এরইমধ্যে দেশটিতে এই রোগে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৯ হাজার (৮ হাজার ৮০০ জন)। তুলনামূলক বিরল এই রোগের নাম মিউকোর্মিকোসিস। এতে মৃতের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। করোনার মধ্যেই প্রতিবেশী ভারত নতুন ভাইরাস ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কবলে পড়ে গেছে।
ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে এই রোগ গুজরাট থেকে এসেছে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৫ জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তার মধ্যে একজন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস করোনা মহামারির মধ্যেই রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, দিল্লিতে বিপদের সম্ভাবনাকে প্রবল করে তুলেছে।
মূলত করোনা থেকে সেরে ওঠাদের মধ্যেই এই রোগ দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে এই রোগের উপসর্গ দেখা যায় শরীরে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে যত ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগি পাওয়া গেছে তার অর্ধেকের বেশিই পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে। আরো অন্তত ১৫টি প্রদেশে ৮০০ থেকে ৯০০ জনের বেশি মানুষের এই রোগ ধরা পরেছে। ফলে দেশটির ২৯টি প্রদেশেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এরইমধ্যে এই রোগের জন্য হাসপাতালগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এসব ওয়ার্ড দ্রুত ভরে উঠছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ইন্দোরের একটি হাসপাতালে ১১০০টি বেড রয়েছে। এরইমধ্যে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেখানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ৮ থেকে ১৮৫ জনে পৌঁছেছে।
এ অবস্থায় পাশের দেশ ভারতের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ঠেকাতে বাংলাদেশ কী ভাবছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, এ বিষয়টি নিয়ে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি যেটি আছে তারা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করেছেন। তারাই একটি পরামর্শ চূড়ান্ত করবেন। তা ছাড়া, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেরা কথা বলেছি। আমরা বিভিন্ন জেলাগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা কেমন হবে, ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আমরা দেব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র আরো বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত করোনার ৯টি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি একেবারে নিশ্চিত। জিনোম-সিকোয়েন্সিং চলছে। আমরা মনে করি, রিপোর্ট হাতে এলে সংখ্যাটি বেড়ে যাবে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ করার সক্ষমতা অনেক বেশি। কাজেই সাধারণ করোনায় আমরা যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছি, হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা এই কাজগুলো আমাদের আরো জোরে-সোরে করতে হবে। অন্যদের করার জন্য আরো বেশি করে মনে করিয়ে দিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে মিক্সড ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ অন্য কোম্পানির নেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথম ডোজ নেয়া সবাই এখনই দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারছেন না। ১৫ লাখের কাছাকাছি মানুষের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকা পেতে দেরি হবে বলে। টিকার মজুদ এই সপ্তাহের পর শেষ হওয়ার কারণেই দেরি হবে বলে জানানো হয়। তবে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়ে যাবে বলেও আশাবাদী অধিদফতর।
কবে নাগাদ টিকা শেষ হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নে ডা. নাজমুল বলেন, এই সপ্তাহের পর টিকার মজুদ একেবারেই শেষ হয়ে যাবে। তবে সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছে থাকা বাড়তি মজুদ থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রেজেনেকার এই টিকা আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আলোচনা চলছে। আমরা আশাবাদী, কোনো না কোনোভাবে এই উৎসগুলো থেকে দেশের চাহিদা অনুযায়ী এই টিকা সংগ্রহ করতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের কাছে আর খুব বেশি টিকা নেই। যেসব কেন্দ্রে টিকার জন্য কম মানুষ নিবন্ধন করেছে তারা হয়তো কয়েকদিন টিকা দেয়া চালিয়ে যেতে পারবে, কিন্তু যেসব কেন্দ্রে নিবন্ধন অনেক বেশি ছিল সেই কেন্দ্রগুলোতে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন