সাধারণ মানুষ পায়ুপথের সব রোগকেই পাইলস বলে জানে। পায়ুপথের সব রোগই পাইলস নয়। কোনটা ফিশার, কোনটা ফিষ্টুলা, কোনটা পাইলস, ফোঁড়া, প্রোলাপস, রক্তজমাট, পলিপ বা টিউমার। সবগুলোর সঙ্গেই কোষ্ঠকাঠিন্য কমবেশি সবচেয়ে বড় কারণ। ফিশারে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের সামনে অথবা পেছনে ফেটে গিয়ে ক্ষত তৈরি হয়। বাংলায় কেউ কেউ ভগন্দর অর্থাৎ ভাঙ্গাঅন্দর বলেও জানেন। প্রচন্ড অথবা মাঝারি রকমের ব্যথা অথবা জ্বালাপোড়া হয়। মলত্যাগের সময় সামান্য রক্ত যায়। পায়ুপথ সরু হয়ে আসে। অনেকদিন ধরে যারা ভুগছেন তাদের জন্য চিকিৎসা অপারেশন। দক্ষ হাতে চিকিৎসায় আরোগ্য শতকরা একশ’ভাগ। প্রাথমিক অবস্থায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে বা ওষুধের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, কিছু মলম ব্যবহার করে ও আয়োডিনের লোশন মেশানো কুসুম গরম পানিতে সেক দিয়ে কেউ কেউ সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে পারেন।
পাইলস শব্দটা সাধারণ মানুষের কাছে সুপরিচিত। ডাক্তাররা বলেন হেমোরয়েড। বাংলায় অর্শ। পাইলিংয়ে যেমন ক্রমান্বয়ে কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করানো হয়, পাইলস ক্রমান্বয়ে আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নিচে নেমে আসে। পায়ুপথকে ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করলে ৩টা, ৭টা ও ১১টার কাঁটার জায়গা তিনটি রক্তের শিরা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে চাপ খেয়ে ফুলে ক্রমশ নিচের দিকে নামতে থাকে। এর চারটি পর্যায় আছে। ১০ পাইলস পায়ুপথের ভিতরে থাকে, ২০ মলত্যাগের সময় বেরিয়ে আসে কিন্তু পরে নিজেই ভিতরে ঢুকে যায়, ৩০ পাইলস ভিতরে ঢুকাতে হয় ৪০ সবসময় বাইরে বের হয়ে থাকে। ভিতরে ঢুকানো যায় না। ৫০ জটিল : রক্তজমাট, সংক্রমণ, ক্ষত কিংবা রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় বা পচন ধরে। পাইলসের কারণে রক্তপাত ব্যথাহীন ও প্রচুর পরিমাণে হয়। জটিল পাইলসে ব্যথা হয়। জটিল পাইলসে প্রথমে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক, মল নরম করার ওষুধ ও কুসুম গরম পানির সেকের মাধ্যমে জটিলতা সারিয়ে তারপর অপারেশন করতে হয়। ১০ পাইলসে খাদ্যাভ্যাস বদলিয়ে, মল নরমের ওষুধ দিয়ে শুকানো করা গেলে সেরে যায়। ২০ পাইলসে ব্যান্ড লাইগেশন খুবই কার্যকরি অপারেশন। ৩০ ও ৪০ পাইলসে পাইলসগুলো বেঁধে কেটে ফেলার অপারেশন, তবে অপারেশনের পর কিছুটা ব্যথা হয়। তবে ব্যথামুক্ত খুব কার্যকরি অপারেশন হচ্ছে মেশিনের মাধ্যমে, যার নাম লংগো। তবে একবারই ব্যবহারের জন্য মেশিনটির মূল্য প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা হওয়ায় অনেকের সামর্থ্যে কুলায় না।
পায়ুপথের ভিতরে বাইরে ছোট বড় নানা ধরনের ফোঁড়া হতে পারে। ডায়াবেটিস অন্যতম বিশেষ কারণ। চিকিৎসা অপারেশন। অপারেশন না করলে ফিষ্টুলা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে অপারেশন করা হলে ফিষ্টুলা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন প্রয়োজন।
ফিষ্টুলা হলো একটি ঘা যার একটি মুখ পায়ুপথের বাইরে, অপরটি ভিতরে থাকে। ফোঁড়া হওয়ার কারণে এটি হয়। বাংলায় নালী ঘা, কেউ ভগন্দরও বলেন। ওষুধে ভালো হয় না। চিকিৎসা অপারেশন। তবে নালীর ভিতরের মুখ যদি খুব উপরে হয়/আঁকাবাঁকা হয় তবে অপারেশন ব্যর্থ হতে পারে। সুতরাং, অপারেশনের পূর্বে ফিষ্টুলোগ্রাম (এক্সরে), এমআরআই করে রাস্তাটি বুঝে নিতে হয়। জটিল ফিষ্টুলার বার বার অপারেশন লাগলে ডাক্তারের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। ফিশার, ফিষ্টুলা অনেকসময় ক্রোনস বা টিবি’র কারণে হতে পারে। সে জন্য বায়োপসি করানো জরুরি।
পায়ুপথ দিয়ে অনেকসময় বৃহদান্ত্রের কোন অংশ আংশিক বা পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারে একে প্রোলাপস বলে। অনেক সময় এর অপারেশন ল্যাপারোসকপির মাধ্যমে পিছনের হাড্ডির সাথে জালি বসিয়ে ফিক্স করে দিলে পেট কাটার প্রয়োজন হয় না।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের রক্তনালী ফেটে রক্তজমাট বাঁধতে পারে। কখনও কখনও প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। সেক্ষেত্রে অপারেশনও লাগতে পারে।
রেকটাল পলিপ সাধারণত : কিশোর বয়সে হয়। মলত্যাগের সময় বের হয়ে আসে, রক্ত যায়। লোকজন একে হালিশও বলে। অপারেশনে ভালো হয়ে যায়।
পায়ুপথের বা রেকটামের টিউমার সাধারণত : ক্যান্সার হয়ে থাকে। অপারেশনের আগেই বায়োপসি করে নিশ্চিত হওয়া যায়। ল্যাপারোস্কোপি ও স্ট্যাপলিং মেশিনের কল্যাণে পেট না কেটে ও পেটের উপর কৃত্রিম মলদ্বার না করে অপারেশন করা সম্ভব।
সব অপারেশনের পূর্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অপারেশন করা উচিত হবে কিনা কিংবা ঝুঁকি কতখানি তা জেনে নেয়া একান্ত আবশ্যক। ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন একমাত্র সেই হাসপাতালেই করা উচিত যেখানে সিসিইউ, আইসিইউ আছে।
আজকাল অপারেশনগুলো অত্যন্ত চড়াদামে কিছু হাসপাতালে করা হচ্ছে। যার তুলনায় মাত্র পাঁচ ভাগের একভাগ মূল্যেই অত্যন্ত দক্ষতা ও যতেœ বারডেম জেনারেল হাসপাতালে বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন করা হয়।
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।
Email: azhar.birdem@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন