শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রাজাপুরে প্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা, টাকার বিনিময়ে রফাদফা

ডেলিভারির পরে শিশু বিক্রয়ের চুক্তি!

রাজাপুর (ঝালকাঠি) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২১, ৬:৪৮ পিএম

ঝালকাঠির রাজাপুরে স্বামী পরিত্যক্তা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি চক্র রফাদফা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাচ্চা ডেলিভারির পরে বিক্রয়ের চুক্তিও করেছে এ চক্রটি। উপজেলার সদর ইউনিয়নের আংগারিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। লাইজুর পক্ষে অভিযোগ দেয়ার মতো কোন আপনজন না থাকায় ভুক্তভোগীর আইনি সহায়তা প্রাপ্তিতে দেখা দিয়েছে জটিলতা।

সরেজমিনে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, স্বামী পরিত্যক্তা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী লাইজু তার আট বছরের ছেলে নাঈমকে নিয়ে আংগারিয়ার একটি নির্জন নদীর চরে মা-বাবার সাথে বসবাস করতেন। ৭ বছর পূর্বে মা ও দেড় বছর পূর্বে বাবা মারা যাওয়ার পরে লাইজু তার ছেলেকে নিয়েই বসবাস করেন। পাশে লাইজুর বড় বোন থাকলেও সে তার কোন খোঁজ খবর রাখে না। নির্জন চরে লাইজুর বাড়িতে রাজাপুর ও সাউথপুর এলাকার ১৫/১৬ জন যুবক বিভিন্ন সময় জোড় করে অবৈধ কাজে বাধ্য করতো। এদের অনেকের নাম না জানলেও দেখলে লাইজু চেনে। এতে লাইজু এক সময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বর্তমানে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে।

এ নিয়ে এলাকার রোজীনা, সরোয়ার, লাইজুর খালু তোফাজ্জেল, লাইজুর বড় বোন সুখি বেগম ও দুলাভাই লিটন হাওলাদার অর্থ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক এক সময় এক এক জনের নাম বলে লাইজুর স্বীকারোক্তি মোবাইলে ধারণ করে সেই ভিডিও ঘটনার সাথে জড়িতদের দেখিয়ে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয় এ চক্রটি। শেষে লাইজুর অবৈধ অন্তঃসত্ত্বার বিষটি ধামাচাপা দিয়ে বৈধ করতে এ চক্রটি ঘটনার সাথে জড়িতদের কাছ থেকে পুনরায় ৮০ হাজার টাকা লাইজুকে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয়। কিন্তু লাইজুকে দেয়া হয় মাত্র ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন খাবার। এমনকি লাইজু বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার সাথে সাথে রাজামিয়া নামে এক রিক্সা চালক দম্পতির কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এই চক্রটি। এজন্য রিক্সা চালক দম্পতির কাছ থেকে আগাম ৩০ হাজার টাকা নিয়ে রোজীনা ও সরোয়ার রিজিয়া নামের এক দাইকে নিয়োগ করেন।

এলাকায় পুরো ঘটনাটি জানাজানি হলে গত বুধবার বিকালে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনা স্থলে যায়। চক্রটি সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে লাইজুকে লুকানোর চেষ্টা করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ও সদর চেয়ারম্যানের সহায়তায় স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য নাজমা ইয়াসমিন মুন্নি অন্তঃসত্ত্বা লাইজুকে উদ্ধার করে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার সকালে লাইজু একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। বাচ্চার জন্ম হওয়ার খবর পেয়ে বাচ্চা বিক্রয়ের চক্রটি মেডিকেল থেকেও বাচ্চা নেয়া চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
ভুক্তভোগী লাইজু জানায়, তাকে রোজিনা, সরোয়ার বিভিন্ন সময় পুলিশের ভয় দেখিয়ে বাহিরে বের হতে বা ঘটনা কারো কাছে না বলতে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছিল।
অভিযুক্ত লাইজুর বড় বোন সুখি বেগম জানায়, লাইজু একটা পাগল কখনই আমাদের কথা শোনেনা। ওর ব্যাপারে আমরাও কোন খবর রাখি না। অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি আমরা জানিনা।
অভিযুক্ত রোজিনা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, বাচ্চা কেনা-বেচা নিয়ে আমি কিছুই জানিনা। বাচ্চা ডেলিভারির জন্য রিজিয়া নামে একজন দাই নিয়োগ করেছিলাম।

রাজাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ঘটনা শুনে লাইজুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ থানায় কোন অভিযোগ পায়নি। মা ও নবজাতক শিশুটি সুস্থ্য আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন