শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উৎপাদন বাড়লেও চা রফতানি কঠিন হবে : বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ৩:৫৯ পিএম

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশের মানুষের চা খাওয়ার অভ্যাস বেড়েছে। ফলে উৎপাদন বাড়লেও চা রফতানি করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, আমরা সবাই চা এক্সপোর্ট করতে চাই, সেটা আমাদের খুব ইচ্ছা। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সেটা খুব কঠিন হবে। চা উৎপাদন বাড়বে। বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনা কাজ করছে, আমাদের প্রচেষ্টা আছে। ৯৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের রেকর্ড করেছি। হয়তো এ বছর কিংবা আগামী বছর এটা ১০০ ক্রস করবে। বছর বছর হয়তো ৫ পারসেন্ট বা ৭ পার্সেন্ট আমরা বাড়াতে পারব। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা হয়তো এক সময় চাহিদা মিটিয়ে ১১ মিলিয়ন কেজি এক্সপোর্ট করতে পারব। আমার ধারণা সেটা কঠিন হবে। কারণ আমাদের দেশের মানুষ তো চা খেতে শুরু করেছে। এখন সাধারণ মানুষ চা খাচ্ছে। যে মানুষ কোনো দিন চা খেতো না, সে এখন তিন কাপ চা খায়। যে মানুষ বাড়ির বাইরে নাস্তা করতো না, সে এখন সকালে বাড়ির বাইরে মোড়ের দোকানে নাস্তা খাবে, সাথে চা খাবে টেলিভিশন দেখবে পরে আরেক কাপ চা খাবে। তাহলে কনজামশন (ব্যয়) কোথায় গেল। এর মাধ্যমে এটাও বোঝা যায়, তৃণমূলের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন।

শুক্রবার (৪ জুন) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চা দিবসের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার’ সেøাগানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপােষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে প্রথম জাতীয় চা দিবস উদযাপিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ চা বোর্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিটিআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত উন্নত জাতের ক্লোন বিটি-২২ ও বিটি-২৩ অবমুক্ত করেন।

টিপু মুনশি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্পর্শে চা শিল্প উজ্জীবিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালীন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন বিষয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন, যা চা সেক্টরকে সমাদৃত করেছে। বাজেট অধিবেশনের আগে কেবিনেট মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী চায়ের বিষয়েও কথা বলেছেন। চা পাতার নতুন নতুন আইটেম আনা, বাস্কেট বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সাধারণ মানুষ চা খাওয়া এফোর্ট করতে পারছে। ভাত-রুটি খাওয়ার অভ্যাস তো মানুষের আগেই ছিল। এখন চা খাওয়ার অভ্যাসটা গড়ে উঠেছেভ তারা এখন ৩ টাকা, ৫ টাকা বা ১০ টাকায় চা খাচ্ছে। একটা হলো ব্যবহারের পরিধি বাড়ছে, পাশাপাশি একটা রিফ্লেকশন সমাজে মানুষের তৃণমূলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। তাই সময় যতো যাবে চা উৎপাদন বাড়বে, আবার ভোক্তাও বাড়বে। তাহলে এক্সপোর্ট করবো কী করে? তারপরও এক্সপোর্টের চেষ্টা করতে হবে। এখানে শুধু টাকা ফ্যাক্ট না, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চা গেলে আমাদের জন্য বিষয়টি গর্বের হবে।

বিশেষ অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমি জন্ম থেকেই চার সাথে আছি। বাবার চা বাগান, এরপর চা সেক্টরে চাকরি, এছাড়া সব সময় চায়ের সাথেই আছি। কখনো বিচ্ছিন্ন হইনি। চা শিল্প নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মাঝে কিছুদিন গ্যাপ ছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় আসার পর আবার নতুন করে গতি পেয়েছে চা সেক্টর। এ খাত নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিতে হবে, নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। চা শিল্পের সাথে যুক্ত সবার প্রচেষ্টায় এই শিল্প আরেও প্রসারিত হবে বলে আশা করছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, বর্তমান সরকার চা শিল্পের উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ বহুল অংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭১ সালের তুলনায় চায়ের উৎপাদন বেড়েছে ২১০ ভাগ। আর ২০১৯ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে।

 

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘােষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বাের্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাে. জহিরুল ইসলাম। এছাড়া বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম, টি ট্রেডার্স অ্যাসােসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাহ মঈনুদ্দীন হাসান ও এফবিসিসিআইরর সভাপতি মো. জসিম উদ্দীন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও চা শিল্পের উন্নয়ন শীর্ষক একটি ডকুমেন্টারি এবং বঙ্গবন্ধু ও চা শিল্প শিরােনামে একটি লেজার শো প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটির চেয়ারম্যান, শ্রীলংকা টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, চাইনিজ টি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক, টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএর সভাপতির শুভেচ্ছা ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।

আলোচনা সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথিরা চা প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। এতে বঙ্গবন্ধু প্যভেলিয়ন, শ্রীমঙ্গলের টি মিউজিয়ামে রক্ষিত চা শিল্পের দুর্লভ জিনিসপত্র প্রদর্শন, চা শ্রমিকদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি উপস্থাপন করা হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ চা বাের্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিটিআরআই কর্তৃক বিভিন্ন ভ্যালু এডেড টি প্রদর্শন করা হয়। দেশের শীর্ষ স্থানীয় চা কোম্পানিসমূহও তাদের চায়ের ব্র্যান্ড প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করে।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে ৪ জুন হতে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। জন্মশতবার্ষিকীতে চা শিল্পে তার অসামান্য অবদান ও চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তার যােগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে চা শিল্পের ভ‚মিকা বিবেচনায় গত বছরের ২০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ জুনকে ‘জাতীয় চা দিবস’ ঘােষণা করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন