কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে রাশেদ (২৮) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে কল্যানপুর দরবার শরীফের তাছের ফকিরের ভক্তরা। গতকাল রবিবার দুপুরে মোবাইলফোন চুরির অভিযোগে কল্যানপুর দরবার শরীফের ভেতরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত যুবক দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের হরিনগাছী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
নিহত যুবকের পিতা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, তার ছেলে রাশেদ ৫-৬ মাস ধরে কল্যানপুর দরবার শরীফে থাকতো এবং সে ওই দরবার শরীফের তাছের ফকিরের ভক্ত ছিল। রবিববার সকালে দরবার শরীফের লোকজন তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দরবার শরীফের ভেতরে ফেলে রাখে। পরে রাশেদের অবস্থা আশংকাজনক হলে দুপুরে দরবার শরীফের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেল যোগে কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভেড়ামারা বারমাইলে সে মারা যায়। এসময় পার্শ¦বতী ভেড়ামারা ষোলদাগ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিহত রাশেদকে রেখে মোটরসাইকেলে বহনকারী কল্যানপুর দরবার শরীফের লোকজন পালিয়ে যায়। হত্যার ঘটনায় তিনি দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
রিফাইতপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু জানান, মোবাইলফোন চুরির অভিযোগে কল্যানপুর দরবার শরীফের লোকজন তার ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে শুনেছি। পরে পুলিশ নিহত যুবকের লাশ ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে থেকে উদ্ধার করেছে বলে জেনেছি।
দৌলতপুর থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, আমি থানার বাইরে আছি, ঘটনাস্থলে ওসি তদন্ত আছে। তার সাথে কথা বলেন, বিস্তারিত জানতে পারবেন। ওসি (তদন্ত) শফিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মোবাইলফোন চুরির অভিযোগে কল্যানপুর দরবার শরীফের লোকজন রাশেদ নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহতের লাশ ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৪ জনকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কল্যানপুর দরবার শরীফের পীর তাছের ফকির ও তার পোষা ভক্ত বা ক্যাডারদের বিরুদ্ধে দরবার শরীফ সংলগ্ন সরকারী হিসনা নদী ও স্থানীয় লোকজনের জমি জোরপূর্বক দখল করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দরবার শরীফের সশস্ত্র ক্যাডারদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন ভয়ে মুখ খুলতেও সাহস পাইনা। কেউ মুখ খুললে বা জমি দখলের প্রতিবাদ করলে তার ওপর চালানো হয় অমানষিক নির্যাতন ও অত্যাচার।
হিসনা নদী দখল করে কল্যানপুর দরবার শরীফের জায়গা সম্প্রসারণের ঘটনায় সম্প্রতি দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. এজাজ আহমেদ মামুন, দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার, দৌলতপুর থানার ওসি নাসির উদ্দিন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিসনা নদী দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিলেও সে নির্দেশ অমান্য করে দরবার শরীফের ভক্তরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন