দিনাজপুর জেলা কারাগারে স্ত্রী হত্যার দায়ে আদালতের দন্ডপ্রাপ্ত আব্দুল হক নামে এক আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। দিনাজপুর জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন এ বিষয়ে জানান, আব্দুল হকের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আব্দুল হক রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভক্তিপুর চৌধুরীপাড়া এলাকার মৃত আছির উদ্দীনের ছেলে। ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট থেকে আব্দুল হক কারাগারে বন্দি ছিলেন। এর আগে বিকেলে আব্দুল হকের পরিবারের ১৫ জন সদস্য তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাত করেন এবং খাবার খাইয়ে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে চলে যান। পরে রাতে তার ফাঁসি কার্যকর হয়, এ সময় রংপুর ডিআইজি (প্রিজন) আলতাফ হোসেন, জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ, চিকিৎসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলা কারাগারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আব্দুল হক তার স্ত্রীকে হত্যা করেন। ৯ ফেব্রুয়ারি আব্দুল হকের শাশুড়ি বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় হত্যা মামলা করেন। পাঁচ বছর পর সাক্ষ্য প্রমাণাদির পর ২০০৭ সালের ৩ মে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালত আব্দুল হককে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। পরে আব্দুল হকের পরিবার হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলেও সেখানে সাজা বহাল থাকে। সর্বশেষ আব্দুল হক প্রসিডেন্টের কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন। গত বছরের ১৮ মে মামলাটির যাবতীয় বিবেচনায় প্রেসিডেন্টের প্রাণভিক্ষার আবেদন না মঞ্জুর করলে ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সে হিসেবেই রাজশাহী থেকে ওহিদুল ইসলাম নামে একজন জল্লাদের মাধ্যমে বুধবার দিবাগত রাতে আব্দুল হকের ফাঁসি কার্যকর হয়।
দশ বছরের সংসার জীবনে আবদুল হক নিঃসন্তান ছিল। পালিত এক কন্যাকে নিয়েই তাদের সংসার চলছিল। ২০০০ সালের কোন এক সময় তার বাড়ীর ঘরে স্ত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তার শশুর বাদি হয়ে জামাই আবদুল হকসহ ৪ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতনসহ হত্যা মামলা দায়ের করে। চার্জ থেকে অপর তিন আসামি মুক্ত হলেও আবদুল রব একমাত্র আসামি হিসেবে থাকে।
বুধবার জেল গেট এলাকায় পুলিশের আনাগোনা দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। রাতে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় ফাঁসি কার্যকরের ব্যাপারে। তবে কি তার পরিচয় এবং কোন মামলায় ফাঁসি হচ্ছে তা কেউ বলতে পারে না। খবর পেয়ে ইনকিলাব প্রতিনিধিসহ হাতে গোনা কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী মধ্যরাতে জেলগেটে অপেক্ষা করতে থাকে। এ সময় জেলা প্রশাসক ও জেল কর্তৃপক্ষের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন লাভ হয় না। অবশেষে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি জানান। অনেকের মতে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দিনাজপুরে এই প্রথম কোন ফাঁসি কার্যকর হলো।
আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন শেষে রাত ১টা ১৪ মিনিটে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। রাত ১টা ৪০ মিনিটে আবদুল হকের লাশ নিয়ে এম্বুল্যান্স বেরিয়ে আসে এবং অপেক্ষামান আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে মিঠাপুকুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন