গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ইচ্ছা এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এই মডেল মসজিদ নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। ৫৬০টি মসজিদের মধ্যে ৫০টির নির্মাণ কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী এগুলো উদ্বোধন করেছেন। একসাথে এতগুলো মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস দেশের আর কোনো সরকারের নেই। মসজিদগুলো উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সচেতন করতে এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, লেবাসের ইসলাম নয়, আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাস করি। সারাদেশে ইসলামের চর্চা, প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে এর মর্মবাণী মানুষকে অনুধাবন করানোসহ নানা সামাজিক ব্যাধি দূরে রাখতেই জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ করেছেন। এজন্য আমরা তাকে মোবারকবাদ জানাই। উল্লেখ্য, ৪০ শতাংশ জায়গার উপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ৪ তালা, উপজেলা পর্যায়ে ৩ তালা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তালা বিশিষ্ট এসব মসজিদে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল পরিসরে এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের আলাদা ওজু ও নামাজ আদায়ের ব্যস্থাসহ লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, গণশিক্ষা কেন্দ্র ইত্যাদি থাকছে। এছাড়া প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা, ইসলামিক নানা বিষয়সহ ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও থাকছে।
পশ্চিমাবিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো যখন ইসলামকে কলুষিত এবং মুসলমানদের দমন করার জন্য নানা অপবাদ দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তখন আমাদের দেশে ইসলামের বাণী, এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারে মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্মরণে রাখতে হবে, মসজিদ এবাদতের স্থান। আল্লাহর নৈকট্য লাভে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করে। এখানে যাতে কোনো ধরনের রাজনীতি প্রবেশ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মসজিদে রাজনীতি প্রবেশ করলে এর পরিণাম ভাল হয় না। অপপ্রচারকারিরা এ সুযোগ নিয়ে ইসলামকে দোষারোপ ও বদনাম করে। দ্য ইকোনোমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে মৌলবাদী ওহাবীদের বিস্তার ঘটছে। এক্ষেত্রে মসজিদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানে মুসলমান সম্প্রদায় ব্রিটিশ সমাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে এবং তারা ইসলামের উগ্র সংস্করণে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। এভাবে তারা উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হওয়ায় পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের অপপ্রচারের সুযোগ পাচ্ছে। সউদী আরব এক সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওহাবী মতবাদ প্রচারের জন্য মসজিদ নির্মাণ ও সহযোগিতা করায় তার পরিণতি কি হয়েছে, তা প্রত্যক্ষ করা গেছে। ব্রিটেনে আজকে ওহাবী মৌলবাদীদের উত্থানের যে কথা বলা হচ্ছে, তার দায় সউদী আরব এড়িয়ে যেতে পারে না। অবশ্য সউদী আরব তার অতীতের ভুলভ্রান্তি এখন কিছু কিছু বুঝতে শুরু করেছে। ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, যেকোনো উগ্রবাদ ও রাজনীতি থেকে মসজিদগুলোকে দূরে রাখতে হবে। লেবাসের যে কথা বলা হয়েছে, তা মুসলমানদের প্রকৃত পরিচয় বহন করে না। মুসলমানদের পরিচিতি তার তাকওয়া, সদাচার ও মানবিক গুণাবলীর মধ্যে নিহিত। ইসলাম শুধু ইনসাফের কথাাু বলে না, এটি তার একটি দিক মাত্র। ইসলাম হচ্ছে, ‘কমপ্লিট কোড অফ লাইফ’ বা ‘পরিপূর্ণ জীবনবিধান’। ইসলামের এই বিধি-বিধানের বাইরে উগ্রবাদ থেকে শুরু করে সব ধরনের সন্ত্রাস, মূল্যবোধহীনতা, নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় সর্বোপরি মানুষের অকল্যাণকর কোনো কিছু সমর্থনীয় নয়। ইসলামের এই মৌল ও অন্তর্নিহিত চেতনা নিয়েই বিশ্বব্যাপী কাজ করছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রমুখ। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত নেতা হয়ে তারা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইসলাম শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ দেখায়। এখানে উগ্রবাদের কোনো ঠাঁই নেই। এসব নিয়েই তারা কাজ করছেন। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই শান্তিপ্রিয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য মডেল হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিত। এ দেশের মানুষ সবসময়ই উগ্রবাদকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতিরোধ করেছে। বর্তমান সরকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত যে মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং করছে, তা দেশের মুসলমানদের ইসলামের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য গভীরভাবে জানা ও বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। ইসলামের শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
নির্মিত এবং নির্মাণাধীন মডেল মসজিদগুলো প্রকৃত ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু হবে বলে আমরা আশা করি। এ ক্ষেত্রে, মসজিদগুলোকে পুরোপুরি রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। মসজিদের ইমাম নিয়োগ থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। ইসলামী ফাউন্ডেশনের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী মসজিদগুলো পরিচালিত হতে হবে। মসজিদগুলো যাতে প্রকৃতই ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতের স্থানে পরিণত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উল্লেখ করে বলতে চাই, ইসলামের চর্চা, প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে এর মর্মবাণী মানুষকে অনুধাবন করানোসহ নানা সামাজিক অসঙ্গতি থেকে দূরে রাখতে মসজিদগুলোকে কার্যকর স্থানে পরিণত করতে হবে। মসজিদ থেকে মানুষ যেন ইসলামের মূল কথা জানতে ও শিখতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন