শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র-২০২১ বিল পাস করেছে একাদশ জাতীয় সংসদ। কর্মজীবী ও পেশাজীবী মায়েদের শিশুর জন্য মানসম্মত উপযুক্ত স্থানে নিরাপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার লক্ষ্যে শিশুর দিবাকালীন অবস্থানের জন্য ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র-২০২১’ বিলটি পাস করা হয়। বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা।
গতকাল বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে এর উপর জনমত যাচাই ও সংশোধনী প্রস্তাব দেন বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য। তাদের প্রস্তাবের পক্ষে আলোচনা করলেও জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। এর আগে গত ৩ এপ্রিল বিলটি উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা। পরে বিলটি অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদে পাস হওয়া বিলটি ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১’ নামে অভিহিত হবে। উত্থাপিত বিলে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই আইন প্রবর্তনের পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত শ্রেণির কেন্দ্র স্থাপন করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, সরকারি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান পরিচালিত কোনো কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নিবন্ধন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
বিলে কর্তব্যে অবহেলার দ্বন্দ্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তির কর্তব্য অবহেলার কারণে কেন্দ্রে অবস্থানকালে কোনো শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি হলে বা স্বাস্থ্যহানি ঘটলে সেটা হবে একটি অপরাধ। এবং ওই অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি কেন্দ্রে শিশুর সঙ্গে নির্ধারিত নিষ্ঠুর আচরণ করলে হবে একটি অপরাধ। এবং ওই অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন্য দুই মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কেন্দ্র থেকে শিশু নিখোঁজ বা হারিয়ে যাওয়ার দণ্ডে বলা হয়েছে- কোনো কেন্দ্র হতে কোনো শিশু নিখোঁজ বা হারিয়ে গেলে সেটা হবে একটি অপরাধ। এবং ওই অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিলে অভিভাবকের সঙ্গে মতবিনিময় সম্পর্কে বলা হয়েছে- কেন্দ্র পরিচালনাকারী ব্যক্তি প্রতি তিন মাসে অন্যূন্য একবার করে সেবাগ্রহণকারী অভিভাবকের সঙ্গে নির্ধারিত পদ্ধতিতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যৌথ পরিবার প্রথা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, বাড়ছে একক পরিবারের সংখ্যা। দেশে দিন দিন কর্মজীবী ও পেশাজীবী মায়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিকে দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে অবস্থান করতে হয়। ফলে পরিবারের শিশুর জন্য মানসম্মত উপযুক্ত স্থানে নিরাপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার লক্ষ্যে শিশুর দিবাকালীন অবস্থানের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। সেই পেক্ষাপটে শিশুদের মানসম্মত পরিচর্যার জন্য বিশ্বস্ত সহায়ক সেবাকারীর অভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১’ আইনটি প্রণয়ন করে। বর্তমান সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিলটি সংসদে পাস হলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন