মনে পড়ে, ইতালি সবশেষ কবে হেরেছিল? মনে না থাকারই কথা। সেই ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। উয়েফা নেশন্স লিগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের কাছে। এবারের ইউরোতেও সেই অপরাজিত থাকার দৌড়ে আরও তিন ধাপ এগিয়ে গেছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দলটি ইউরোর গ্রুপপর্বে হারিয়েছে সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক ও ওয়েলসকে। গ্রুপের সবগুলো ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলতে উঠেছে আজ্জুরিরা। আজ রাতে ‘সি’ গ্রুপের রানার্সআপ অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে রাউন্ড অব সিক্সটিনে মাঠে নামবে ১৯৬৮ সালের ইউরোপ সেরা দলটি। কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে জয়ের বিকল্প নেই ২০১৮ বিশ্বকাপে জায়গা করতে না পারা দলটি।
একই দিনে শেষ ষোলর ম্যাচে মাঠে নামবে ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের ডেনমার্ক। তাদের প্রতিপক্ষ গ্যারেথ বেলের ওয়েলস। গ্রুপ ‘বি’-তে রানার্সআপ হয়ে নকআউট নিশ্চিত করেছিল ড্যানিশরা। শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান দলটি। অন্যদিকে ওয়েলসও গ্রুপ ‘এ’-তে রানার্সআপ হয়েই জায়গা নিশ্চিত করেছিল নকআউট পর্বে। তাই এ ম্যাচটি নিয়েও দর্শকদের আগ্রহ কম নয়।
গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচে সাত গোল করেছে ইতালি। গোল খায়নি একটিও। এই আসরে গ্রুপপর্বে এ সাফল্য আছে আর শুধু ইংল্যান্ডের। বর্তমানে তারা অপরাজিত টানা ৩০ ম্যাচ, গত ১১ ম্যাচ ধরে প্রতিপক্ষ একবারও জালে বল জড়াতে পারেনি।
চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এবার নিজেদেরই রেকর্ড ভাঙার পথে। অপরাজিত থাকার নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আজ অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোল খেলবে তারা। শেষবার তারা টানা ৩০ ম্যাচ অজেয় ছিল ১৯৩০ এর মাঝামাঝি সময়ে।
১৯৩৫ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত আজ্জুরিরা এই কীর্তি গড়েছিল কোচ ভিত্তরিও পোজ্জোর অধীনে। ওই সময়ে তারা জিতেছিল তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি (১৯৩৮) ও অলিম্পিক স্বর্ণপদক (১৯৩৬)। ইতালির মতোই বর্তমানে লম্বা সময় ধরে অপরাজিত থাকা দল আলজেরিয়া। বর্তমান আফ্রিকান নেশনস কাপ চ্যাম্পিয়নরা টানা ২৭ ম্যাচ হারেনি।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি টানা ৩৫ ম্যাচ অজেয় থাকার রেকর্ড ব্রাজিল ও স্পেনের। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত ছিল আর্জেন্টিনা। এবার নিজেদের রেকর্ড ভেঙে আলবিসেলেস্তেদের পাশে বসার দোরগোড়ায় ১৯৬৮ সালে একমাত্র ইউরো জয়ী ইতালি।
অন্যদিকে এবারের ইউরোর শুরুতেই বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় এরিকসেনের মাঠেই জ্ঞান হারানোর ঘটনা। ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে বিরতির ঠিক আগে ডেনমার্কের এ তারকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন তিনি। মাঠে তার সতীর্থদের তৎপরতা ও উপস্থিত বুদ্ধি ছিল প্রশংসনীয়। এরিকসেনের জীবন-মৃত্যুর লড়াইকে উজ্জীবনী শক্তি বানিয়ে তারা এখন নকআউটে। এই ম্যাচে ডেনমার্ক গোটা বিশ্বের সমর্থন পাবে মনে করছেন প্রতিপক্ষ ওয়েলস ডিফেন্ডার কনোর রবার্টস।
এরিকসেনকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ডেনমার্ক মাঠে নেমে হেরে যায় ফিনল্যান্ডের কাছে। বেলজিয়ামের কাছেও পরাজিত হয় তারা। কিন্তু রাশিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে রূপকথা লিখে শেষ ষোলোতে ওঠে দলটি। এই তিন ম্যাচেই মাঠে না থেকেও দলের সঙ্গে ছিলেন এরিকসেন। গোটা বিশ্ব ছিল তার পাশে।
রবার্টসের বিশ্বাস, শেষ ষোলোতেও এর ব্যতিক্রম কিছু হবে না। আজ আমস্টারডামে মুখোমুখি হবে ওয়েলস ও ডেনমার্ক। এই ম্যাচের আগে সোয়ান সিটি ফুল ব্যাক বললেন, ‘সত্যিই কঠিন হতে যাচ্ছে ম্যাচটি, কিন্তু আশাবাদী আমরা পারবো (জিততে)। আমার মনে হয় পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ মানুষ ডেনমার্ককে সমর্থন দিতে যাচ্ছে।’
গত ইউরো দিয়ে প্রথমবার বড় টুর্নামেন্টে খেলার স্বাদ পায় ওয়েলস। সবাইকে চমকে দিয়ে ওঠে সেমিফাইনালেও, হেরে যায় পর্তুগালের কাছে। টানা দ্বিতীয় আসরে খেলতে নেমে আন্ডারডগ হিসেবে পরিচিত পাচ্ছে গ্যারেথ বেলের দল। আরেকটি চমক দিতে চাইলে পেরোতে হবে শেষ ষোলর বাধা। রবার্টস বললেন, ‘ম্যাচটা কঠিন হবে কিন্তু আমরা ভালো দল। দলে ভালো খেলোয়াড়দের পেয়েছি, ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে আমরা কিছু মুহ‚র্ত তৈরি করেছি। ডেনমার্কও ভালো দল, তারা অনেক সমর্থন পেতে যাচ্ছে সত্যি। কিন্তু আমরা যখন মাঠে পা রাখবো, তখন শুধু আমাদের সর্বোচ্চটা দিতে হবে।’
যেভাবে শেষ ষোলতে
ইতালি
তুরস্ক ০-৩ ইতালি
ইতালি ৩-০ সুইজারল্যান্ড
ইতালি ১-০ ওয়েলস
ডেনমার্ক
ডেনমার্ক ০-১ ফিনল্যান্ড
ডেনমার্ক ১-২ বেলজিয়াম
রাশিয়া ১-৪ ডেনমার্ক
অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়া ৩-১ মেসেডোনিয়া
নেদারল্যান্ডস ২-০ অস্ট্রিয়া
ইউক্রেন ০-১ অস্ট্রিয়া
ওয়েলস
ওয়েলস ১-১ সুইজারল্যান্ড
তুরস্ক ০-২ ওয়েলস
ইতালি ১-০ ওয়েলস
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন