শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

আবাহনীর অর্জনে কলঙ্কের কালিমা

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ট্রফি ধরে রেখে শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিকের গৌরব অর্জন করেছে আবাহনী লিমিটেড। এই নিয়ে হলো তৃতীয় হ্যাটট্রিক। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটি আবাহনীর চতুর্থ শিরোপা জয়। লিগের ৪৩ আসরে সর্বোচ্চ ২১বার তারা নিয়েছে শিরোপার স্বাদ। আর কেউ নেই তাদের ধারে কাছে। এর পরই ৯ বার শিরোপা উল্লাস করতে পেরেছে চীরপ্রতিদ্ব›দ্বী মোহামেডান। কিন্তু এবার আবাহনীর অর্জন যেন কিছুটা ¤øান করে দিয়েছে কিছু উত্তার না পাওয়া প্রশ্নের কারণে। যার একটি, তারাই যোগ্য বিজয়ী তো?
প্রশ্নটি উঠছে লিগ জুড়ে নানা বিতর্কের কারণেই। যেসবের অনেকগুলোতেই জড়িয়ে আবাহনীর নাম। ক্রিকেট ম্যাচে ৫০-৫০ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলার সুযোগ থাকে কমই। তবে আবাহনীর পক্ষে এবারের লিগে কয়েকটি সিদ্ধান্ত বারবারই এসেছে আলোচনায়। এর বাইরেও কিছু বাড়তি সুবিধা ছিল আবাহনীর। বেশির ভাগ ম্যাচ তাদের ছিল মিরপুরে, ঠাসা সূচির লিগে ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের সাভার বিকেএসপিতে ভ্রমণের ধকল তাই তাদেরকে নিতে হয়নি খুব একটা। সেই ম্যাচগুলির প্রায় সবকটি তারা খেলেছে দুপুর বেলায়, যখন কন্ডিশন সবচেয়ে ভালো থাকে। মিরপুরে সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় টস হয়ে যায় অনেক ভাইটাল। দুপুরের ম্যাচে আগে-পরে ব্যাট করা দু দলই সমান সুযোগ পেয়ে থাকে।
তবে বরাবরের মতো এবারও খালি চোখে দেখা গেছে দলটির হয়ে আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব।
যার একটি প্রথম পর্বে মোহামেডানের বিপক্ষে। ঘটনা ১১ জুনের। সেদিন মোটা দাগে চোখে পড়েছে আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব। মর্যাদার এই লড়াইয়ে যেন আবাহনীকে জেতাতেই মাঠে নেমেছিলেন তারাও। সেটি করতে গিয়েই আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের রচনা করলেন আম্পায়াররা। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে আগে ব্যাট করা মোহামেডানের ১৪৫ তাড়া করতে নামে আবাহনী। সাদামাটা লক্ষ্য নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো শিবিরের বোলিংয়ের শুরুটাও ছিল দারুণ। মাত্র ২১ রানে আবাহনীর ৩টি উইকেটও তুলে নিয়েছিল সাকব আল হাসানের দল। বৃষ্টির আগে আরেকটি উইকেট পেলে ডি/এল পদ্ধতিতে জয়ের ব্যপারে নির্ভার থাকতে পারতো মোহামেডান। উল্টোদিকে নিশ্চিত পরাজয় যেনেই কি-না আম্পায়াররাও দেখতে শুরু করলেন আবাহনীর স্বার্থ।
আর একটি উইকেটের জন্য যখন মরিয়া হয়েই খেলছিল মাঠের লড়াইয়ে নামা ‘নতুন’ মোহামেডান। দায়িত্ব নিয়েই যে ক্লাবটির চেহারা পাল্টে দিয়েছেন নতুন কমিটির সদস্যরা। আর তার সুফলও পেতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী দলটি। আকাশে তখন ঘন কালো মেঘ। দ্রæতই বলগুলো করছিলেন সাকিব। একটি উইকেট পেলেই হয়তো পাঁচ বছর চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীদের বিপক্ষে জয়টা পেতে পারে তারা। পঞ্চম ওভারের শেষ বলটি দারুণ করেছিলেন সাকিব। ওই প্রান্তে ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ঠিকভাবে লাগাতে পারেননি। এলবিডবিøউর জোরালো আবেদন করে পুরো দলই। খালি চোখেও মনে হয়েছিল আউটই ছিল। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া না দিলে এক মুহ‚র্ত অপেক্ষা না করে আক্ষেপে লাথি মেরে উইকেটই ভেঙে ফেলেন সাকিব। এরপর আম্পায়ার ইমরান পারভেজের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন দেশের ক্রিকেটের এই ‘পোস্টারবয়’। পরে সতীর্থরা তাকে শান্ত করে নিয়ে যান। তখন আবাহনীর সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ২১ রান।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি মাথায় রেখেই পরের পাঁচ বলে ১০ রান যোগ করতেই নামে বৃষ্টি। এ সময়ে মিডঅফে ফিল্ডিং করছিলেন সাকিব। দৌড়ে এসে তুলে নেন স্ট্যাম্প। এরপর আছাড় মারেন। সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। কিছু একটা বলতে শুরু করায় তার সঙ্গেও তর্কে লিপ্ত হন মেজাজা হারানো মোহামেডান অধিনায়ক। এক পর্যায়ে সতীর্থরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। বৃষ্টির বেগ বাড়তে থাকায় মাঠ ছেড়ে সবাই তখন ফিরছেন ড্রেসিং রুমে। সাকিবের এমন আচরণে আবাহনী ড্রেসিং রুম থেকে তেড়ে এসেছিলেন আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও। তবে তাকে মোহামেডান ক্রিকেটার শামসুর রহমান শুভ গিয়ে শান্ত করেন।
বিগত কয়েক বছর ধরেই ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে বরাবরই আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের সুবিধা নেয় প্রভাবশালী ক্লাব আবাহনী। একটি মহল এই ইস্যুটিকে রাজনৈতিকভাবেও ব্যাবহার করার চেষ্টা করছে। কথিত আছে, আবাহনী বর্তমান সরকারের মদদপুষ্ট ক্লাব, তাদের জেতাতে পারলেই সরকারের উপর মহলের শুভদৃষ্টিও পাওয়া যায়। আর সে কারণেই ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে রেফারি কিংবা আম্পায়াররাও উঠে-পড়ে লাগেন ম্যাচে তাদের সুবিধা দিতে। অথচ এটি সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্ত ধারণা, মিথ্যা প্রচার। শুধুমাত্র, নিজেদের স্বার্থ আদায়ের উদ্দেশ্যেই আবাহনীর মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের ভাবমর্যাদা ববহার করে সরকারের উপরের মহলের বাহবা পেতেই এই অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল।
শুধু মোহামেডানই নয়, কোনো আসরে শিরোপা জয়ের বাধা হয়ে দাঁড়ালে অন্য যে কোনো ক্লাবের বীপরিতেও চলে আবাহনীর হয়ে নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব। সেই ধারাবাহিকতা ছিল প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও। দুই দলেরই পয়েন্ট ও জয়সংখ্যা সমান থাকায় পয়েন্ট তালিকার সেরা দুই দলের লড়াই হয়ে গিয়েছিল অঘোষিত ফাইনাল।
ম্যাচের প্রথম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে আবাহনীর লিটন দাসের নিশ্চিত এলবিডবিøউ দেননি আম্পায়ার তানভির আহমেদ। শেষ ওভারে যখন প্রাইম ব্যাংকের প্রয়োজন ১৬ রান, আবাহনীর শহিদুল ইসলামের প্রথম বল ছিল অলক কাপালির কোমর উচ্চতার ওপরে। তবুও বিমারে ‘নো’ বল ডাকেননি আম্পায়ার। এবারও লেগ আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন সেই তানভিরই। ম্যাচের একদম শেষ সময়ে গিয়েও একটি সিদ্ধান্ত পক্ষে গেছে আবাহনীর। শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে ১৬ রান দরকার ছিল প্রাইম ব্যাংকের। শহিদুল ইসলামের প্রথম বলটি ছিল অলক কাপালির কোমরের উঁচুতে। কিন্তু আম্পায়ার বিমারে নো বল ডাকেননি। প্রাইম ব্যাংকে পরে ৮ রানে হারিয়ে উৎসবে মাথা আবাহনী।
পুরো ম্যাচই মাঠে বসে দেখেছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। আম্পায়াদের ভুল সিদ্ধান্ত ক্রিকেটে বিরল কিছু নয়। তবে এবারের লিগে অনেক সিদ্ধান্তই আবাহনীর পক্ষে গেছে বলে প্রশ্ন উঠছে, এসব ¯্রফে ক্রিকেটীয় ভুল কিনা। তবে বিসিবি প্রেসিডেন্ট, যিনি আবাহনীরও বড় কর্তা, সেসব সমালোচনায় কান না দিয়ে লিগ নিয়ে জানালেন নিজের সন্তুষ্টির কথা, ‘খেলাগুলো দেখুন, ছোট দল-বড় দল বলে কোনো কথা নেই। কে জিতবে, এটা বোঝার কোন পথ ছিল না। কাগজে-কলমে আবাহনী প্রায় জাতীয় দল ছিল। লিটন, নাঈম, আফিফ, মুশফিক, সাইফ উদ্দিন, মোসাদ্দেক, ওরা তো জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং টি-টোয়েন্টি দলেই খেলে। তারপরও আবাহনীকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। এমন না যে অটো জিতে গেছে। আমরা মনে করলেও আসলে কোনো দল ছোট না। খেলাঘরের কাছেও আবাহনী হেরেছে। প্রাইম ব্যাংক, প্রাইম দোলেশ্বর খুব ভালো দল। সবচেয়ে ভালো বোলিং ছিল প্রাইম ব্যাংকের। মুস্তাফিজ, শরিফুল, রুবেল, এ ধরনের বোলাররা ছিল। কয়েকটা দল ভুগেছে, যেহেতু জাতীয় দলের কিছু তারকা খেলোয়াড় খেলেনি। ওরা খেললে কী হতো, চিন্তা করে দেখুন! অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা হয়েছে। এটাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
aslam ২৮ জুন, ২০২১, ২:৩৮ পিএম says : 0
আপনারাও ভুলে গেছেন এরশাদ সরকারের সময় আবাহনীর উপর জেল জুলুম অন্যায় অত্যাচার , কি ভাবে আশির দশকের কাল দিন ভুলে গেলেন ?
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন