আল্লামা মুফতি ছাঈদ আহমদ
॥ শেষ কিস্তি ॥
তবে এই দ্বিতীয় গ্রুপকেও ঢালাওভাবে কাফের বলা যাবে না। কারণ তারা না বুঝে ভ্রান্ত পক্ষ গ্রহণ করেছে। তাই রাজনৈতিক ভুলের ভিত্তিতে কোন রাজনৈতিক দলের উপর বোমা ইত্যাদি দ্বারা হামলা করা জায়েয হবে না। তবে যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তথা নাস্তিক, তাদের দলকে সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়া এবং তাদের বিচার করা সরকারের কর্তব্য। এ ধরনের লোকের বিচার না করায় জে. এম. বিরা সুযোগ পায়।
উপরে উল্লিখিত হাদীসের চাহিদানুযায়ী ওলামায়ে কিরামের দায়িত্ব হল, পাবলিক এবং সরকার সবার সামনে কোরআন হাদিসের আলোকে ইসলামী শাসন এবং ইসলামী হুকুমতের সৌন্দর্য সর্বদা তুলে ধরা। কৌশলে ও হিকমতের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করা। আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোরআন মাজীদে বলেছেন, আপনি মানুষকে আল্লাহর দিকে সুকৌশলে, সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করবেন (দাওয়াত প্রদান করবেন)। ওলামায়ে কিরাম উক্ত কোরআনী উসূলের ভিত্তিতে দাওয়াতী ও হিদায়াতী কাজে সামনে অগ্রসর হতে হবে। নতুবা কোন কাজে কামিয়াব হওয়া সম্ভব নয়। ইসলাম সুচরিত্রের বলেই বিশ্বের আনাচে-কানাচে বিস্তার লাভ করেছে। হ্যাঁ যে সমস্ত কাফের মুসলমানদের উপর হামলা করে- যেমন বর্বর ইস্রাইলি ইয়াহুদির দল। তাদের মুকাবালাতে জিহাদ করে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। তদ্রƒপ যে সমস্ত শিয়া ও রাফেজীর দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবায়ে কেরাম রা. কে বিশেষ করে তিন খলীফাকে মুরতাদ এবং কাফের বলে, তাদের মুকাবালাতে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মুসলমানদের জিহাদ করা ফরয। কারণ তারা মুসলমান নয় বরং মুনাফেক এবং সন্দেহাতীতভাবে কাফের। বর্তমানে কেউ কেউ জিহাদ ও সন্ত্রাসকে এক মনে করে। অথচ জিহাদ হচ্ছে সন্ত্রাস নির্মূলকারী। বর্তমানে সৌদি আরব ও যে সমস্ত মুজাহিদরা ইয়ামান ইত্যাদিতে তাদের মুকাবালাতে জিহাদ করছেন, সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রকে তাদের সমর্থন দেয়া এবং সম্ভাব্য সহযোগিতা করা জরুরী।
তদুপরি বোমাবাজদের আক্রমণে অনেক মহিলা, ছোট বাচ্চা, বৃদ্ধলোক ও অনেক মাজুর লোকও আহত নিহত হয়ে যায়। সূরা বাকারার ১৮৯নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় তথা তার দীন কায়েম ও প্রচার প্রসার করার ব্যাপারে ঐ সমস্ত কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেষ্টা করে। আর তোমরা সীমালঙ্ঘন করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পাক সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না। মা‘আরেফুল কোরআন ৪৬৯ পৃঃ তে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে, উক্ত আয়াতে মুসলমানদেরকে শুধু ঐ সমস্ত কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে আসে। আয়াতের শেষভাগে বলা হয়েছে, তোমরা সীমালঙ্ঘন করবে না। অর্থাৎ ঐ সমস্ত লোক যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে না যেমন, ঐ সমস্ত মহিলা যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না, ছোট বাচ্চাগণ, দুর্বল বৃদ্ধলোকগণ এবং ঐ সমস্ত ধর্মগুরু যারা তাদের উপাসনালয়ে বসে উপাসনায় রত থাকে- যেমন পাদ্রীগণ, প্রতিবন্ধী, মাজুর এবং ঐ সমস্ত লোক যারা কাফেরদের অধীনে চাকুরীরত কিন্তু মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে আসেনি। এ ধরণের লোকদের হত্যা করা জায়েয নাই। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে হাদীস বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুজাহিদদের বিদায়ী হেদায়াতে মহিলা এবং বাচ্চাদের হত্যা করতে নিষেধ করতেন। আবু দাউদ শরীফে আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুজাহিদদেরকে বিদায়ী হেদায়াতে বলতেন, তোমরা আল্লাহর নামে বের হবে। তাঁর পয়গম্বরের মাধ্যমে আনীত ধর্মের প্রচারের জন্য জিহাদ করতে বের হবে। কোন দুর্বল বৃদ্ধলোক, বাচ্চা এবং মহিলাদের হত্যা করবে না। হযরত আবু বকর রা. হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফিয়ানকে শাম (সিরিয়া) দেশে যুদ্ধের সেনাপতি বানিয়ে পাঠানোর সময় হেদায়াত দেন, যে সমস্ত পাদ্রী গির্জায় উপাসনায় লিপ্ত এবং কাফেরদের অধীনস্থ কর্মচারীগণ যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদেরকে হত্যা করবে না। মোদ্দাকথা, যে সমস্ত কাফের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না বরং যুদ্ধ করা থেকে নিজেদের বিরত রাখে তাদের হত্যা করা জায়েয হবে না।
উল্লিখিত কোরআন ও হাদীসের দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে যারা কা-জ্ঞানহীনভাবে বোমাবাজি করে নির্দোষ মানুষ হত্যা করে তাদের এই কাজ সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী কাজ। হক্কানী ওলামায়ে কিরাম এবং কওমী মাদরাসার ওলামায়ে কিরাম উক্ত কাজ সমর্থন করে না বরং অত্যন্ত ঘৃণার সাথে তার নিন্দা প্রকাশ করে আসছে। ১৭ আগস্ট ২০০৫ ইং জে. এম. বি এর বাংলাভাই ও শেখ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশের শহরগুলোতে যে বোমাবাজি হয়েছে, আমি ঐ দিন তাদের এই অপতৎপরতার স্পষ্ট নিন্দা জ্ঞাপন করে বিবৃতি প্রদান করি যা ১৮ আগস্ট ২০০৫ ইং দৈনিক ইনকিলাবে এইভাবে তুলে ধরা হয়েছেঃ
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানায়, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ফেনী জেলা শাখার আমীর পীরে কামেল আল্লামা মুফতি ছাঈদ আহমদ দা. বা. এক নিন্দা বিবৃতিতে বলেন, গতকাল (বুধবার) ফেনীসহ দেশ ব্যাপী বিভিন্ন জেলায় বোমা বিস্ফোরণ যারা ঘটিয়েছে নিঃসন্দেহে তারা দেশ জাতি ও ইসলামের শক্র, দেশে বিশৃৃৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই তাদের উদ্দেশ্য।
তেমনিভাবে ৩০ নভেম্বর ২০০৫ ফেনীর তানযীমুল মাদারিসিল কাওমিয়্যাহর পক্ষ থেকে ৮ জন বিশিষ্ট আলেম বোমাবাজির বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছেন। সেই ৮ জনের মধ্যে আমিও ছিলাম। তা দৈনিক ইনকিলাব ৩০ নভেম্বর ২০০৫ ইং ১৭ নং পৃঃ তে “বোমবাজরা দেশের শক্র ইসলামের দুশমন যৌথবিবৃতিতে ফেনীর ৮ আলেম” এই শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে।
তদ্রƒপ ফেনী পৌরসভার বিরিঞ্চি এলাকায় অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া ফারুকীয়া মাদরাসার বার্ষিক সভায় ২১ ডিসেম্বর ২০০৫ ইং রোজ বুধবার মাদরাসার মাঠে আমি কোরআন ও হাদীসের আলোকে বোমাবাজদের ব্যাপারে এক সারাগর্ভ আলোচনা পেশ করি। যা ফেনীর সাপ্তাহিক জাতীয় বার্তা ২৬ ডিসেম্বর ২০০৫ ইং প্রথম পৃষ্ঠায় “বোমাবাজরা ইমলামের শত্রু, দেশ ও জাতির শত্রু, তারা জাহান্নামী” এই শিরোনামে প্রকাশ করা হয়। অনুরূপভাবে ঐ তারিখে দৈনিক আমার ফেনী, সাপ্তাহিক ফেনীর বার্তা, সাপ্তাহিক ফেনীর রবি ইত্যাদি পত্রিকায় একই শিরোনামে বোমাবাজদের বিরুদ্ধে আমার আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য কাওমী মাদরাসার কর্ণধারেরা বোমাবাজির বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে, লিখিতভাবে, বিভিন্ন মাহফিলে, জনসভায় এবং বিভিন্ন পত্রিকায় জোরালোভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, এখনও জানাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাসমূহের কেন্দ্র দারুল উলুম হাটাজারী মাদরাসা থেকে জে. এম. বি এর বিরুদ্ধে একটি ফতওয়া প্রকাশ করা হয়েছে যাতে লক্ষাধিক আলেমের দস্তখত ও সমর্থন রয়েছে। তাতে আমারও দস্তখত রয়েছে।
বর্তমানে সরকারকে সর্বস্তরের জনসাধারণকে বিশেষ করে ওলামায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে বোমাবাজদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরী মনে করি।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের উপর অটুট রাখুন এবং সবাইকে হেদায়াত দান করুন। শরীয়তবিরোধী কাজ থেকে বিরত রাখুন। সরকারকে শরীয়ত মত কাজ করার এবং সর্বদা ন্যায় বিচার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
উত্তরদাতা
দু‘আ প্রার্থী
ছাঈদ আহমদ
খাদেম, জামিয়া ইসলামিয়া সোলতানিয়া
লালপোল, ফেনী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন