সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে গার্মেন্টস সহ শিল্প কারখানা চালু রাখায় নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২১, ৫:০৮ পিএম

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন চলছে।
এ সময় গার্মেন্টস সহ শিল্প কারখানা চালু রাখায় নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যানবাহন না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১ লা জুলাই) সকালে জেলা শহর ও. শহরতলীর ফতুল্লার বিভিন্ন সড়কে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রিকশা ও ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে গার্মেন্টস কর্মীরা রিকশায় না চড়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
লকডাউনের প্রথম দিনে কঠোর ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন৷ সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ৷ এদিকে পরিবহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন কারখানামুখী শ্রমিকরা৷ সরকারঘোষিত কড়া বিধিনিষেধের মধ্যেও পোশাক কারখানা খোলা রেখে পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা৷
বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে৷ লকডউন কার্যকরে জেলায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷ নারায়ণগঞ্জ ডিসিও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি বিধিনিষেধ কার্যকর করতে সেনাবাহিনীর ৫টি দল ও ৩ প্ল্যাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷ এছাড়া জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ২০ টিম ও জেলা পুলিশের ৩১ টিম কাজ করছে৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য রোভার স্কাউট ও রেড ক্রিসেন্টের স্বে”ছাসেবকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷


সকালে সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের মন্ডলপাড়া, ২ নম্বর গেট, চাষাড়া চত্ত্বর, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ সাইনবোর্ডসহ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ৷ এছাড়া অন্যান্য সড়ক-মহাসড়ক গুলোতেও রয়েছে পুলিশ--বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। সার্নসহ কয়েকটি রপ্তানীমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিকদেরজটলা৷ স্বা¯’্যবিধি না মেনে শ্রমিক পরিবহন না করায় শ্রমিকবাহী বাস থেকে থামিয়ে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
সদর উপজেলার সৈয়দপুরের ফকিরবাড়ি থাকেন জাকির হোসেন৷ চাকরি করেন সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলির পোশাক কারখানা নীট কনসার্নে৷ তিনি বলেন, ফকিরবাড়ি থেকে দ্বিগুন ভাড়ায় শহরের ডিআইটি আসতে ইজিবাইকে ওঠেন৷ পুলিশি বাধায় অর্ধেক রাস্তায় নেমে যেতে হয়৷ বাকি পথ হেঁটে এসে ডিআইটি থেকে কারখানার বাসে ওঠেন৷ তবে সেই বাস থামিয়ে দেওয়া হয় চাষাঢ়ায়৷ একই ¯’ানে সেন্সিবল গার্মেন্টসের যাত্রীবাহী তিনটি বাস থামিয়ে প্রায় দেড়শ’ শ্রমিককে নামিয়ে দেওয়া হয়৷
ক্ষুব্দ-বিরক্ত পোশাক শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরি খোলা রাখছে কিš‘ গাড়িগুলো কেন বন্ধ রাখলো? সব যখন বন্ধ তাহলে ফ্যাক্টরিও বন্ধ দিক৷ আমাদের এইভাবে হয়রানি করার কোনো মানে নেই৷ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, লকডাউনের নামে আমাগো মতো গরীবরে যেন কষ্ট না দেয়৷’
মডেল ডি ক্যাপিটালের শ্রমিক ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘কর্ম¯’লে না গেলে চাকরি থাকবে না, না খেয়ে মরতে ববে তখন৷ মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে বড়লোকরা তাদের প্রাইভেট কার দিয়ে যা”েছ৷ আমাদের তো প্রাইভেট করা নাই৷ এইযে আমরা পায়ে হেঁটে যা”িছ৷ এতে কি আমাদের হয়রানি হ”েছ না, ভোগান্তি হ”েছ না? প্রতিটি শ্রমিককে কর্ম¯’লে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের৷’
ফতুল্লার পাগলা এলাকায় বসবাসকারী বিসিক শিল্পনগরীর রপ্তানীমুখী একটি পোষাক তৈরী কারখানার নারী শ্রমিক রুপা আক্তার জানায়,কঠোর লকডাউনে যানবাহন বন্ধ রেখে গার্মেন্টস চালু রেখেছে। এতে করে চাকুরী বাচাতে বাধ্য হয়ে গাড়ী না পেয়ে পায়ে হেটে কর্ম¯’লে যেতে হ”েছ।বিশ টাকার ভাড়া সত্তর টাকা চাওয়া হ”েছ।এতো টাকা দিয়ে তার যাওয়া সম্ভব নয়।তাই পায়ে হেটে যা”েছন তিনি।তার মতো অনেককেই পায়ে হেটে নিজ নিজ কর্ম¯’লে যেতে দেখা গেছে।
চাষাড়ায় দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান ফারুক বলেন, সকাল ছয়টা থেকে আমরা দায়িত্বে আছে৷ জরুরি পরিষেবা, পণ্যবাহী গাড়িগুলো আমরা সহজে যেতে দিচ্ছি প্রতিটি মানুষ ও গাড়ি চেকিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
টহল দি্েচ্ছ সেনাবাহিনী, বের হলে সতর্ক করছে
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জে মাঠে কাজ করছেন সেনাবাহিনীর সদস্য। মূল সড়কে টহল দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করছেন তারা। বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজনদের সতর্ক করে দিচ্ছেন এবং স্বাস্থবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করছেন।বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহানের নেতৃত্বে দুই প্লাটুন সেনাবাহিনী শহরে টহল দেয়। পরে তারা চাষাড়া মোড়ে অব¯’ান করে বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করে।
সকালে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর সঙ্গে আলোচনা শেষে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় নামেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী সদস্যরা মাঠে কাজ শুরু করেন।
চাষাড়ায় ডিউটিরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান জানান, কঠোর বিধিনিষেধে নারায়ণগঞ্জে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুরো জেলায় ২০টি মোবাইল টিম কাজ করছে। প্রতিটি টিমে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছে। তাদেরকে নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন