বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হাদিসের আলোকে জুমার দিনের আমল

নাজমুল হাসান সাকিব | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২১, ১২:০৬ এএম

জুমু’আর দিনের শ্রেষ্ঠত্ব: হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দিন সমূহের মধ্যে জুমু’আর দিন সর্বোত্তম। এই দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে বেহেশতে দাখিল করা হয়েছে এবং এই দিনে তাকে বেহেশত থেকে বের করে (পৃথিবীতে পাঠিয়ে) দেওয়া হয়েছে এবং জুমু’আর দিনই কেয়ামতত কায়েম হবে। (সহিহ মুসলিম; হাদিস নাম্বারঃ ৮৫৪)।

জুমু’আর দিন গোসল করা: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমু’আর নামাজে যায় সে যেন গোসল করে।
(সহিহ বুখারি; হাদিস নাম্বারঃ ৮৭৭, সহিহ মুসলিম; হাদিস নাম্বার ৮৪৪)।
জুমু’আর দিন সুগন্ধি ব্যবহার ও মিসওয়াক করা: হাদিসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমার দিন যেন প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি গোসল করে, মেসওয়াক করে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী সুগন্ধি ব্যবহার করে। (সহিহ বুখারি; হাদিস নাম্বার ৮৮৮, সহিহ মুসলিম; হাদিস নাম্বার ৮৪৬)।
জুমু’আর নামাজের ফজিলত : হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন, জুমু’আর দিন এলে ফেরেশতাগণ মসজিদের প্রত্যেক দরচায় বসে যান। তারা একের পর এক আগমনকারীর নাম লিপিবদ্ধ করেন।যখন ইমাম (মিম্বরে) বসে পড়েন তখন তারা নথিপত্র গুটিয়ে আলোচনা শোনার জন্য চলে আসেন। মসজিদে সর্বপ্রথম আগমনকারী ব্যক্তি উট দানকারীর সমতুল্য, তারপপর আগমনকারী গরু দানকারীর সমতুল্য, তারপর আগমনকারী ব্যক্তি মেষ দানকারীর সমতুল্য, তারপরের জন মুরগী দানকারীর সমতুল্য এর পরের জন ডিম জানকারি সমতুল্য (সাওয়াব লাভ করেন)।
(সহিহ মুসলিম; হাদিস নাম্বারঃ ৮৫০)।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন ফরজ গোসলের মতো ভালো ভাবে গোসল করলো এবং নামাযের জন্য আগমন করল, সে যেন একটি উট সদকা করল। যে ব্যক্তি দ্বীতিয় পর্যায়ে আসলো, সে যেন একটি গাভি সদকা করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি সিং বিশিষ্ট দুম্বা সদকা করল। যে চতুর্থ পর্যায় আগমন করল, সে জন্য একটি মুরগি সদকা করল। প্রঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি ডিম সদকা করল। এরপর যখন ইমাম খুতবা প্রধানের জন্য বের হন, তখন ফেরেশতাগণ খুতবা শোনার জন্য হাজির হয়ে যান। (সহিহ বুখারি; হাদিস নাম্বারঃ ৮৮১)।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু একটি লম্বা হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ইমাম খুতবা দেওয়া শুরু করলে যে ব্যক্তি চুপচাপ বসে শোনে সে দুটি বিনিময় প্রাপ্ত হয়। আর যে ব্যক্তি এত দূরে বসে যে, ইমামের খুতবা শুনতে পায় না, তবুও চুপ থাকে এবং অনর্থক কথা বা কাজ করে না, সে একটি বিনিময় প্রাপ্ত হয়। আর যে ব্যক্তি এমন স্থানে বসে যেখানে থেকে ইচ্ছা করলে ইমামের খুতবা শুনতে এবং তাকে দেখতে পায়, তবুও অনর্থক কথা বা কাজ করে এবং চুপ না থাকে, সে গুনাগার হবে। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমনই বলতে শুনেছি। (সুনানে আবু দাউদ; হাদিস নাম্বারঃ ১০৫১)।
জুমু’আর দিনে ছয়টি আমলের বিশেষ ফজিলত: হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর নামাযের উদ্দেশ্যে ভালোভাবে গোসল করবে, ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে (আজানের অপেক্ষা না করে) মসজিদে যাবে, পায়ে হেঁটে যাবে, বাহনে আরোহন করবে না, ইমামের কাছাকাছি হয়ে বসবে, মনযোগ দিয়ে খুতবা শোনবে,( খুতবা চলাকালীন) কোন কথা বলবে না বা কাজ করবে না, সে জুমার নামাজের (যাওয়া-আসার) পথে প্রতি কদমে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের নফল নামাজের সওয়াব পাবে। (সহিহ ইবনে খুযাইমা ;হাদিস নাম্বারঃ ১৭৫৮, জামে’ তিরমিযী; হাদিস নাম্বারঃ ৪৯৬, সুনানে আবু দাউদ; হাদিস নাম্বারঃ ৩৪৫, সুনানে নাসায়ী; হাদিস নাম্বার ১৩৮৪)
জুমু’আর নামাযে গোনাহ মাফ হয়: হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বরেন, যে ব্যক্তি গোসল করে জুমু’আর নামাযে এলো, তাওফিক অনুযায়ী নামায আদায় করল, ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকল, এরপর ইমাম সাহেবের সাথে জুমু’আর নামায আদায় করল, তার দুই জুমু’আর মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ মুসলিম; হাদিস নম্বার ৮৫৭)। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায, এক জুমু’আ থেকে আরেক জুমু’আ পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অন্য রমযানের মধ্যকার সমস্ত গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে যদি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।
(সহিহ মুসলিম;হাদিস নাম্বার ২৩৩)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোজাম্মেল ২ জুলাই, ২০২১, ১০:৪২ পিএম says : 0
মাশাআল্লাহ
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন