শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

সুধীবৃন্দের সংলাপে মেয়র কেসিসি’র উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ কমেছে

প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনিছুর রহমান বিশ্বাস সুধীবৃন্দের সংলাপে বলেছেন, কেসিসির উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ কমেছে। খুলনাবাসীর উন্নয়নে আগামীতে সরকারি বরাদ্দ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। আশার কথা হচ্ছে- আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এডিবি ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সাতশ/আটশ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বাজেটে কেসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবুও পারছি না। বাজেটের পুরো অর্থ দিয়েও নগরীর ময়লা পরিষ্কার করা সম্ভব নয়; যদি না নগরবাসী সচেতন না হোন।
গতকাল শনিবার সকালে খুলনার সেন্ট জোসেফস স্কুলের মিলনায়তনে ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নগর কর্তৃপক্ষ, টেকসই উন্নয়নের অন্যতম শর্ত’ শীর্ষক এ সংলাপে উপরোক্ত কথা বলেন তিনি। খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি এ্যাড. শামীমা সুলতানা শীলু।
স্বাগত বক্তৃতা করেন সনাকের সদস্য অধ্যাপক জাফর ইমাম।
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রথমেই ‘প্রথম আলো’র খুলনা প্রতিনিধি উত্তম কুমার মন্ডল প্রশ্ন করেন, পাঁচ হাজার ইজিবাইক নির্ধারণের পরিকল্পনা নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি কেন? ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে কার্যকর কি পদক্ষেপ নিচ্ছে কেসিসি?
মেয়র বলেন, ইজিবাইকের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ কেসিসি’র একারপক্ষে সম্ভব নয়। কেসিসি হোল্ডিং ও লাইসেন্স বাতিল করেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মালিক সরকার, মানে জেলা প্রশাসক এগুলোর নিয়ন্ত্রক। জেলা প্রশাসন পূর্বের বরাদ্দ বাতিল করছে না। ফলে সমন্বয়হীনতার কারণেই খুলনা মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জাবেদ ইকবাল জানতে চেয়েছেন, শহীদ হাদিস পার্কের সামনে যানজট মুক্ত করা যায় কি না?
জনৈক মোঃ হাসিবুল হাসান বললেন, পার্কের পুকুরে দু’টি ডলফিন ছাড়া যায় কি না?
মেয়র উত্তরে বলেন, হাদিস পার্কের সামনে গাড়ী পার্কিংয়ের স্থানটি কেসিসি লীজ দিয়েছিল। সে ব্যক্তি আবার আরেকজনকে লীজ দিয়েছে। সেখানে অস্থানীয় খাবারের দোকান বসানোর কারণে যানজট হচ্ছে। ভবিষ্যতে আর ওই স্থানটি লীজ দেয়া হবে না। পার্কের পুকুরে ডলফিন আনা না হলেও দৃষ্টিদন্দন বৃদ্ধিতে কাজ চলছে। ভবিষ্যতে হাদিসপার্কের পুকুরে টিকেট দিয়ে মাছ ধরতে দেয়া হবে না। মাছ বড় করা হবে। এটা হবে নগরবাসীর এ্যকোরিয়াম।
জনৈক আইনুল ইসলামের প্রশ্ন- নগরীর অধিকাংশ সড়কে সৃষ্ট গর্তের সংস্কার করা হচ্ছে না কেন? পার্কের মধ্যে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে কেসিসি কি উদ্যোগ নিচ্ছে?
মেয়র বললেন, বৃষ্টির জন্য রাস্তার সংস্কার কাজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টি শেষ হলেই সড়ক সংস্কার করা হবে। অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে চিঠিতে অনুরোধ করা হবে।
চ্যানেল ২৪ এর ক্যামেরাপার্সন জাকারিয়া হোসেন তুষার জানতে চান, টপবক্স ক্রসিংয়ে জলাবদ্ধতা বাড়াবে কি না? জনৈক মিনতী রায়ের প্রশ্ন- নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নয় কেন? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইলাক্স ইউনির্ভাসিটির অধ্যক্ষ এমএ কাইয়ুম প্রশ্ন করেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কেসিসি কি পরিকল্পনা আছে?
মেয়র উত্তরে বললেন, এমনিতেই তো জলাবদ্ধতা রয়েছে, তবে ক্রসিংয়ের কারণে পানিবদ্ধতা বাড়বে বলে মনে হয় না। খুলনার নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো আমার পাশে থাকলে আগামী তিনঘন্টার মধ্যে ফুটপাত দখলমুক্ত করবো। কোন রাজনৈতিক দলকে আমার পাশে চাই না। তবে খুলনাবাসীকে আমার সাথে থাকতে হবে।
জনৈক সেজান প্রশ্ন করলেন, নগরীর ৩০ও ৩১নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তীস্থানের খালটিতে নির্মাধীন ড্রেনের কাজ কবে শেষ হবে? ড্রেনের দু’পাশে সড়কটি অত্যন্ত খারাপ অবস্থার সংস্কার হবে কি না? শিপইয়ার্প রোডের সংস্কার কাজ হবে কবে?
মেয়র বললেন, শিপইয়ার্ড রোডটি কেডিএ এ্যাকোয়ার করতে চাওয়া কেসিসি সংস্কার করা থেকে দুরে ছিল। কিন্তু সে প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ায় আগামীকালই শিপইয়ার্ড রোডের টেন্ডার আহŸান করা হবে।
খুলনা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রসু আক্তারের প্রশ্ন- শহরের বর্জ্য পড়ছে নদীতে। এব্যাপারে কেসিসি’র সতর্কতা কি? বস্তিগুলোর উন্নয়নে কেসিসির কি এখন কোন প্রকল্প নেই?
ভারপ্রাপ্ত মেয়র উত্তরে বললেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শহরের ৭০ শতাংশ ময়না বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেসিসি সংগ্রহ করতে পারবে। তখন নদীতে ময়রা পড়া অনেকাংশে রোধ হবে। আর বস্তির উন্নয়নে কাজ করা প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। তবে খুব শিঘ্রীই ইউপিআর ও জার্মানীর জিওআইজেড প্রকল্প শুরু হবে। তখন বস্তির উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হবে।
নাসিম কবির জানতে চাইলেন, বাড়ি ভাড়া নির্ধারণে কেসিসির কোন নীতিমালা আছে কি না?
মামুনুর রশীদের প্রশ্ন- নগরীর ফেরীঘাট মোড়ের একটা সুন্দর নামকরণ করা যায় কি না? আর শহীদ হাদিস পার্কের দুর্জয় ভাস্কর্যটি নেই কেন?
ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, বাড়িভাড়া নীতিমালা শুধু কেসিসি’র নয়, সারাদেশের কোথাও আছে বলে জানা নেই। সৌন্দর্য্যবর্ধনের পরে ভাস্কর্য আর দেয়া হয়নি।
সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নকর্মী শাহীন জামান পনের প্রশ্ন- দৌলতপুর শহীদ মিনারটি সংস্কারে কি কেসিসি’র কোন পরিকল্পনা নেই?
মেয়র উত্তরে বললেন, আপনি যেদিন বলবেন- সেদিনই আমি সরেজমিনে গিয়ে সংস্কার কাজ শুরু করবো।
চ্যানেল ২৪ এর ক্যামেরাপার্সন মোঃ খায়রুল আলমের প্রশ্ন- নগরীতে হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নগরবাসী। নিয়মিত চাঁদাবাজি বন্ধ করে অন্য পেশায় কাজ দেবার কোন পরিকল্পনা কি কেসিসির আছে?
মেয়র বললেন, আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নগরীতে অন্তত ৪০০কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। হিজড়াদের আহŸান জানিয়েছি কেসিসির কর্মী হিসেবে যোগ দিতে। তারা চাইলে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করতে পারেন।
জনৈক আব্দুল্লাহ আল মুহিত নগরীতে যত্রতত্র পোস্টার-প্যানাসাইনের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন- মহানগরীতে পোস্টার-প্যানায় ছেঁয়ে গেছে। কেসিসি কি দেখে না?
মেয়র বললেন, ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় একটু দেরি হয়েছে। এখন তিনি এসেছেন। খুব শিঘ্রীই অভিযান চালানো হবে।
শিক্ষার্থী মোঃ আকরাম হোসেন বলেন, নগরীর মশক নিধনে কি করছেন?
মেয়র বললেন, মশার তেল ক্রয় নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম হয়েছে। দুর্নীতি রোধে নিজেরাই মশার তেল তৈরির কাজ চলছে।
ব্যবসায়ী মোঃ আতিয়ার রহমান জানতে চান, পিটিআই ও নিরালা মোড়ের ময়লা অপসারণ করার সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্য সময়ে ময়লা অপসারণ করা যায় না?
উত্তরে রাতে ময়না সংগ্রহের কাজ আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু করার প্রতিশ্রæতি দেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র।
ওয়াল্ড ভিশনের কর্মী প্রলয় কুমারের প্রশ্ন- জলবায়ু পরিবতনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেসিসি কোন পরিকল্পনা কি আছে? কেসিসিতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে কী কাজ করছেন?
ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনিসুর রহমান বললেন, নগরবাসীর সেবায় ও জবাবদিহিতা-স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে খুব তাড়াতাড়ি ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারটি অত্যাধুনিকভাবে চালু করা হচ্ছে। এখানে সব সেবা পাবেন নগরবাসী। প্রশ্নোত্তর পর্বে ২৩জন নাগরিক প্রশ্ন করেন।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিজের বক্তব্যে বলেছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ইজিবাইকের বিষয়ে সিদ্ধান্তের পরেই সিটি কর্পোরেশন ব্যবস্থা নিবে। নগরীতে ‘স্পীড হাম’ তৈরি করা হচ্ছে পথচারী ও প্রতিবন্ধীদের পারাপারের উদ্দেশ্যে।
এতে কোন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ হবে। শিপইয়ার্ড সড়ক স¤প্রসারণে আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই ভাঙা হবে। এ জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। জনগণের হয়রানি লাঘবে নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নগর ভবনের নীচ তলায় ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ জন কর্মচারীকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
খুলনা মহানগরীর উন্নয়নে ও কেসিসি পরিচালনায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিসুর রহমান বিশ্বাস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন