সার্ভার ত্রুটি মেরামতে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকায় সার্ভার মেরামতের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে ঢাকা জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিসের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস রুপ কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে এ ঘোষণা দিয়েছেন। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের যথাযথ মনিটরিং এর অভাবে আজ রোববারও সউদী ও কুয়েতগামী শত শত কর্মী করোনা টিকা নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। সকাল থেকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকার নিবন্ধনের জন্য বিদেশগামী কর্মীরা জড়ো হয়ে চরম ভোগান্তির কবলে পড়েন। সারাদেশের ৫৩টি কেন্দ্রের চিত্রও একই। সার্ভার চালু হলে নিবন্ধন করে এক সপ্তাহের মধ্যে সউদী ও কুয়েতগামী টিকা নিশ্চিতকরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। বিএমইটির একাধিক সূত্র জানায়, টিকা নিবন্ধনের জন্য প্রবাসী মন্ত্রণালয় ২০০ টাকার ফি জমার দেয়ার লক্ষ্যে নগদ, বিকাশ ও রকেট কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। গত দু’দিনে নগদ কোম্পানীতে থেমে থেমে টিকা নিবন্ধনের ২০০ টাকা জমা নেয়েছে। এতে আজ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মাত্র দু’শতাধিক বিদেশগামী কর্মীর নিবন্ধন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। বিকাশ ও রকেটের সার্ভার বিকল থাকায় বিদেশগামী কর্মীরা এ দু’টির মাধ্যমে ফি’র ২০০ টাকা জমা দিতে না পারায় নিবন্ধন করতে পারছে না। কঠোর লকডাউনের মাঝে দূরদুরান্ত থেকে প্রবাসী কর্মীরা প্রবাসী কল্যাণ ভবনে জড়ো হয়ে নিবন্ধন করতে না পেরে অনেকেই নিরাশ মনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। সার্ভারে ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে তাদের টিকা গ্রহণের নিবন্ধন কার্যক্রম কার্যত ঝুলে গেছে। ফলে সারাদেশের হাজার হাজার বিদেশগামী প্রবাসী শ্রমিক চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সরোয়ার আলম সকাল ১১টার দিকে ব্রিফিং সেন্টারে মিডিয়া ও আগত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সার্ভার চালু হলেই আমরা কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করবো। তিনি কর্মীদের শান্তনা দিয়ে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সউদী-কুয়েতগামী কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। তার পরেই আপনার অ্যাপস এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করে টিকা দেয়ার সুযোগ পাবেন। ধামরাই থেকে আগত সউদীগামী প্রবাসী কর্মী ইসরাফিল হোসেন আজ ইনকিলাবকে জানান, আগামী ২৭ জুলাই আমার ছুটি শেষ হয়ে যাবে। এর মধ্যে টিকা দিয়ে সউদী যেতে না পারলে চাকরি হারানোর ঝুকি রয়েছে। টিকার নিবন্ধন করতে আসার একজন প্রবাসী কর্মী জানান, ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান অফিসের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস রুপা জড়ো হওয়া কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা বিদেশ থেকে পাসপোর্ট নবায়ন করে ছুটিতে দেশে এসেছেন তারা নিবন্ধন করতে পারবেন না। এতে উপস্থিত বিদেশগামী কর্মীদের কয়েকজন চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কী বিদেশি নাগরিক যে আমাদের নিবন্ধন হবে না ? বিদেশগামী কর্মীদের টিকা নিয়ে টালবাহানা করবেন না। দ্রুত টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করুন। কারণ প্রধানমন্ত্রী বিদেশগামী কর্মীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ রোববার টিকা নিবন্ধনের তৃতীয় দিনেও হাজার হাজার বিদেশগামী কর্মী টিকা নিবন্ধনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সার্ভার জটিলতার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশের ৫৩টি কেন্দ্রে প্রবাসীদের টিকা গ্রহণের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে অনেকের বিদেশযাত্রা। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিদেশগামী কর্মীরা টিকা নিবন্ধনের ফরম ও ফি’র ২০০ টাকার জমা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। ঢাকার মালিবাগের কুয়েত প্রবাসী আল মামুন বলেন, কুয়েত সরকারের নির্দেশনা দুই ডোজ টিকা দিয়ে দেশটিতে যেতে হবে। তার ইকামার মেয়াদ আর মাত্র দু’মাস আছে। তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সরোয়ার আলমের উদ্দেশ্যে দাড়িয়ে বলেন, স্যার টিকার সার্টিফিকেট হাতে পেতে ২৮ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। বিদেশগামী কর্মীদের টিকা দেয়ার তিন দিনের মধ্যে যাতে তাদের হাতে সার্টিফিকেট দেয়া হয়। না হয়ে যাদের ভিসার মেয়াদ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে তারা যথা সময়ে বিদেশ যেতে পারবে না। সহকারী সচিব এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বিদেশগামী কর্মীদের করোনা টিকা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধনকালে উপস্থিত অন্যান্য প্রবাসীরা টিকা না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বিক্ষুব্ধ এসব প্রবাসী শ্রমিকদের শান্ত করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ফাইজার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর দিনে এই দৃশ্য দেখা যায়। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রবাসী মন্ত্রীর কমিটমেন্ট অনুযায়ী আপনাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা টিকা দেয়ার যে ব্যবস্থা নিয়েছি, আজকে তার ছোট্ট একটা প্রতীকি উদ্বোধন হলো। সচিব বলেন, ‘আমরা বিদেশগামীদের সঙ্গে আছি। এই মন্ত্রণালয় আপনাদের জন্য কাজ করছে। ভ্যাকসিনের সঙ্কটের মধ্যেও আপনাদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ এ সময় প্রবাসীরা হট্টগোল শুরু করলে সচিব সবাইকে থামার অনুরোধ জানান। এই কর্মসূচির আওতায় শুধুমাত্র কুয়েত ও সউদী প্রবাসী কর্মীদের করোনা টিকা দেয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত হয়েছিলেন ইতালিসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন