স্পোর্টস রিপোর্টার : অনেকটা অগোছালো এবং অব্যবস্থাপনার মধ্যেই শুরু হলো অনুর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট। গতকাল বিকালে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলো চরম বিশৃঙ্খলা। অব্যবস্থাপনার শুরুটা টুর্নামেন্টের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড তৈরী নিয়ে। কার্ডটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) লোগো থেকে নেয়া বাঘের ছবি ছাপা হয়েছে অনুর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকির অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে। সাধারণত বিসিবি’র লোগো হিসেবেই এটি স্বীকৃত। এছাড়া কার্ডে যে লোগো ছাপা হয়েছে, তা আইস হকির লোগো। এতে বুঝা যায় দেশের হকিতে কতটা পেশাদারিত্ব এসেছে! ম্যাচের সংবাদ সংগ্রহ করতে এসে বিপাকে পড়েছেন সাংবাদিকরাও। হকির প্রেসবক্স এমনিতেই বেশ ছোট। সেখানে সাংবাদিকদের বসার জন্য স্থানসংকুলান না হলেও সব সময় সংবাদকর্মীরা যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন।
অনুর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে কাল ছিলো স্বাগতিক বাংলাদেশ ও শক্তিশালী ভারতের মধ্যকার খেলা। গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচের খবর সংগ্রহের জন্য অধীক সংখ্যক সংবাদকর্মী প্রেসবক্সে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা স্বস্তিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। সাংবাদিকদের নির্ধারিত স্থানে বহিরাগতদের আনাগোনা ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়দের দেখা গেছে প্রেসবক্সে। বসার জন্য ছিলো না পর্যাপ্ত চেয়ার। ফলে অনেক সাংবাদিককেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ম্যাচ দেখতে হয়েছে। ছিলো না প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ। ফোর-জি’র যুগেও ইন্টারনেট ব্যবস্থা ছিলো না থাকার মতই। ওয়াই ফাইয়ের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি ঘন্টার পর ঘন্টা। যদিও নিশ্চিত করা হয়েছিল প্রেসবক্সে সাংবাদিকদের কাজের জন্য থাকবে উন্নতমানের ইন্টারনেট ব্যবস্থা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচ শুরুর পনের মিনিট পর পাওয়া গেল খেলোয়াড় তালিকা। আর ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও হকি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। ক্রিকেটের মতো নতুনত্ব আনতে গিয়ে সাউন্ড সিস্টেমের হযবরল অবস্থা হয়েছে। খেলোয়াড়রা টাফে নামার পরও বিরতিহীন বেজেছে বাদ্যযন্ত্র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অযথাই নাচের আয়োজন করা হয়েছে। যা ছিলো দৃষ্টিকটু। নারী নৃত্যশিল্পিদের ডিজে শো দেখে অনেকটা বিরক্তই হয়েছেন দর্শকসহ অন্যরা।
তবে চরম অব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় উদাহরন হলো খেলা চলাকালিন সময়ে মাঠের পার্শ্বে ফেডারেশনের বিভিন্ন কর্তাব্যাক্তির অবস্থান, আনাগোনা এবং টিভি মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দেয়া। বিশ্বের কোথাও এমন নজির আছে কিনা তা হয়তো কারো জানা নেই। আরো একটি মজার ব্যাপার হলো টুর্নামেন্টের মিডিয়া কমিটির সদস্যদের মাঝে ছিলো সমন্বয়ের অভাব। এই কমিটির চেয়ারম্যান ও সম্পাদকের মাঝে ছিল না কোন যোগসুত্র। তারপরও উদ্বোধনী দিন চমৎকার জয় পেয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দিনের শেষ ম্যাচে তারা ৫-৪ গোলে হারায় ভারতকে। প্রথম ম্যাচে চীন ৬-০ গোলে হংকং চায়নাকে এবং পাকিস্তান ৬-১ গোলে চাইনিজ তাইপেকে হারায়।
উদ্বোধোনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, এমপি, হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার মার্শাল আবু এসরার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক। বাংরাদেশ-ভারত ম্যাচ শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মিডিয়াকে জানান, বাংলাদেশ হকির সঙ্গে সবসময় তাকবে বিসিবি। তিনি বলেন, ‘স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে আজ (গতকাল) ছেলেরা ভারতকে হারিয়ে সত্যিই প্রসংসার দাবিদার। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা থাকলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের হকি বিশ্বমানে পৌঁছাবে। ক্রিকেটের পরই দেশে জনপ্রিয় হকি খেলা। আমরা সবসময়ই এই খেলাটির সঙ্গে থাকবো।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন