শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নয় দিনেও অজানা কারণ

মগবাজারে বিস্ফোরণ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে বিভিন্ন সংস্থার গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলেছেন। তবে ঠিক কী কারণে এবং কোথা থেকে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে তা ঘটনার নয় দিনেও খুঁজে বের করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা। ধসে পড়া ভবনের ভেতরে তিতাস গ্যাস সংযোগের একটি পাইপ লাইনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা গ্যাস ডিটেক্টর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে ঘটনাস্থলে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতিও পেয়েছে। এসবের ওপর ভিত্তি করে ভবনের নিচে জমে থাকা গ্যাস থেকেই ভয়াবহ এমন বিস্ফোরণ হতে পারে বলেও জানিয়েছে তদন্ত কমিটিগুলো।

কিন্তু গতকাল সোমবার পর্যন্ত কেউই বিস্ফোরণের উৎপত্তিস্থল বা সূত্রপাত খুঁজে বের করতে পারেনি। গত ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেসগেট এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৬৭জন। এদের মধ্যে ২৭জন এখন ঢামেকসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তদন্ত কমিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ঘটনার পর পর বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, পুলিশ, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিউশন অ্যান্ড ড্রিস্টিভিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে পৃথক পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে উল্লেখ করে পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনাস্থলে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি আমরা পেয়েছি। গ্যাস থেকে এমন বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু বিস্ফোরণস্থল বা উৎস সম্পর্কে এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারেনি। আমরা এ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। সবদিক বিবেচনা করেই তদন্ত কার্যক্রম চলছে। সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার দুপুরে মগবাজারে বিস্ফোরণে ধসে পড়া রেখানীড় ভবনের ধ্বংসস্তূপ পর্যবেক্ষণ করতে যান পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিউশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গঠিত পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ঘটনাস্থলে তদন্তকারী সদস্যরা বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন। যদিও বিগত দিনে ঘটনার পর পর প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস দাবি করে আসছিল এ ভবনে তিতাসের কোনো গ্যাস পাইপ লাইনের সংযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবে ঘটনাস্থলে তিতাসের গ্যাস সংযোগ পাইপ লাইনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আকস্মিকভাবে গত রোববার ভবনের নিচ থেকে গ্যাস ও ধোয়া বের হতেও দেখা যায়। পরবর্তীতে তিতাসের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়ে টানা নয় ঘণ্টা চেষ্টার পর গ্যাস সংযোগ পাইপ শনাক্ত করে এবং তা সিলগালা করে লিকেজ বন্ধ করে দেয়। তিতাসের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রেখানীড় ভবনটি তার সীমানা থেকে সামনে ১৪ ফুট জায়গা বাড়িয়েছে। এদিকে গ্যাস পাইপ লাইনের যে উৎস বা অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তা ওই ভবনের নিচে শনাক্ত হয়েছে। তবে এখন সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে তিতাসের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পেট্রোবাংলার গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক জি এম শাহনেওয়াজ পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। তবে আমরা বিস্ফোরণের উৎস কোথায়? আশপাশের কোনো গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে এমন হয়েছে কিনা বা রাস্তার পাশে সুয়ারেজের কাজ চলছে সেখান থেকে হয়েছে কিনা বা ভবনে থাকা কোনো এসি বিস্ফোরণ থেকে হয়েছে কিনা এসব বিষয় মাথায় রেখেই কাজ করছি। তদন্ত শেষে পরবর্তীতে একটি সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে।

তিতাস গ্যাসের একটি সংযোগ পাইপ লাইনের সন্ধান পাওয়া গেছে, ওই লাইনে লিকেজের কারণে কোনো বিস্ফোরণ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। গ্যাস লাইনটি বৈধ না অবৈধ ছিল সে বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি। এ লাইনটি ভবনের নিচে কীভাবে গেল সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। ভবনের নকশার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে পরবর্তীতে এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় গত ২৯ জুন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে রমনা থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। ভবন মালিকের সার্বিক অব্যবস্থাপনা, অতি পুরোনো বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস ব্যবস্থাপনার কারণে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য থানা পুলিশের কাছ থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন