প্রতিটি মানুষের জীবনে শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের সময়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সে সময়টিকে আমরা বয়ঃসন্ধিকাল বলি। সাধারণত ৯ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের শারীরিক এবং মানসিক ব্যাপক পরবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন হওয়ার পিছনে মূল যে কারণ তা হলো হরমোন। ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টেস্টেরন হরমোন আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরণ হরমোনের প্রভাবে এই মনোদৈহিক পরিবর্তন সাধিত হয়। ছেলেমেয়েরা এ বয়সে বিভিন্ন মনোদৈহিক চাপ অনুভব করে এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পরে। ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের ভেতর যৌনানুভূতি জাগ্রত হতে শুরু করে। ছেলেরা মেয়েদের প্রতি এবং মেয়েরা ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
এই বয়সটা হলো যৌন বিষয়ে সচেতনতা এবং যৌনাঙ্গ প্রকাশিত হওয়ার সময়। এই সময়ে উভয় লিঙ্গ পরিস্ফুটিত হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৯-১৪ বছর বয়সের মধ্যে বক্ষের আকার গঠন পরিপূর্ণ হতে শুরু করে। শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুততর হয়। যৌনাঙ্গে ও বগলে প্রথম কেশ জন্মানো শুরু করে। ভেতরের যৌনাঙ্গ যেমন জরায়ু, গর্ভাশয় এবং যোনির স্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে থাকে, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হতে থাকে। ব্রণ জন্মাতে শুরু করে, মাসিক চক্র শুরু হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে ১১-১৫ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন পরিবর্তন হতে শুরু করে। যেমন-এ সময় পেনিস ও অন্ডকোষ বড় হতে থাকে, বগলে, বুকে ও যৌনাঙ্গে কেশ জন্মাতে শুরু করে, মুখে দাড়ি, গোঁফ গজাতে শুরু করে, শরীরে ব্রণ জন্মাতে থাকে, কণ্ঠস্বর গম্ভীর হতে থাকে, স্বপ্নদোষ শুরু হয়।
এই বয়সে ছেলেমেয়েরা তাদের শরীর নিয়ে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা করে থাকে। অনেকে মনে করে তার নিজের যৌন অঙ্গগুলো অন্যের তুলনায় ঠিকভাবে বাড়ছে না। ছেলেমেয়েদের বুঝতে হবে যে, তাদের যদি শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে তাদের শরীর যেভাবে বাড়ছে সেটা স্বাভাবিকই আছে। কারণ কারো কারো বয়োসন্ধিকাল একটু আগে শুরু হয়, আবার কারো কারো সামান্য পরে শুরু হয়। মেয়েরা তাদের স্তন এবং মাসিক নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করেন। এ সময় মা, খালা, বড় বোন, ভাবি এদের কাছে থেকে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে পারেন। এই বয়সে স্বপ্নদোষ অনেক ছেলের মনে ভীতির সঞ্চার করে। মনে রাখা দরকার, স্বপ্নদোষ অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি শরীর ভিক্তিক ব্যাপার। প্রতিটা পুরুষের জীবনে এটি হবেই, অন্তত একবার হলেও হবে। এটি নিজস্ব কোনো দুর্বলতা নয়। তাই এই বয়সে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই তাদের শরীর সম্পর্কে অযথা মনে কোনো ভয়-ভীতি পোষণ করবেন না। আপনজনদের কাছে নিজের সমস্যার কথা বলে তা সমাধান করতে পারেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
ডা. গৌতম কুমার দাস
মোবাইল-০১৭১৪-৮৯৪৯৮২
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন