করোনা মহামারির কঠোর ‘বিধি-নিষেধ’ এর মধ্যেও দেশব্যাপী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শনে নামছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক টিম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, আজ থেকে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে ভাগ করে পরিদর্শন শুরু করবে পাঁচটি টিম।
পরিদর্শনকারী টিমগুলোকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কিনা তা যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উচ্চ পর্যায়ের পাঁচটি টিমের একটিতে নেতৃত্ব দেবেন আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন নিজেই। ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্মিত ঘরগুলো পরিদর্শন করবে এসব টিম।
যেকোনো পরিস্থিতিতে এই পরিদর্শন কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রতিটি কেসই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন জড়িত। এজন্যই এরকম একটি মহামারি পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিদর্শনে নামছি।
মাহবুব হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় মানবিক প্রকল্প। এ প্রকল্পের অনিয়ম বা গাফলতি নিয়ে আমাদের অবস্থান শুরু থেকেই জিরো টলারেন্স। ইতোমধ্যে যেসব জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে সেসব জায়গায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। একই সঙ্গে আমরা যেসব বাড়ি নির্মাণ নীতিমালা অনুযায়ী হয়নি সেসব বাড়ি সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণে যা যা প্রয়োজন সব কিছু করে দেবো।
তিনি বলেন, অনেক জায়গায় অতিবৃষ্টি, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সেসব জায়গায় পুনরায় বাড়ি নির্মাণ অথবা সংস্কার করে দিচ্ছি। তবে এই মানবিক প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর ড্রিম প্রজেক্টকে বিতর্কিত করতে একটি সংঘবদ্ধ মহল এটা নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত আছে যেটি কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওপর আস্থা রাখুন। ভূমিহীন-গৃহহীন সবাইকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণের কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া নির্মাণে ত্রæটির কারণেও বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ত্রæটির বিষয়টি সামনে আসতেই নড়ে চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও অর্থ আত্মসাতকারীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ¯েøাগান হলো- ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এর সঙ্গে আমাদের সবার আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ক্রটিবিচ্যুতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শৈথিল্যের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। অনিয়ম ও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তি পেতেই হবে। কাউকেই বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমিসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এবং জমি আছে ঘর নেই অথবা অত্যন্ত জরাজীর্ণ ঘর এরকম ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে বাড়ি নির্মাণ করে দেবে সরকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন