স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়ার বয়সসীমা প্রথমে ছিল ৪০ বছর। সেখান থেকে কমিয়ে দ্বিতীয় দফায় করা হয়েছে ৩৫। এবার টিকা নেয়ার জন্য বয়স আরও কমিয়ে ১৮ বছর করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
গতকাল মহাখালীস্ত বিসিপিএস ভবনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ সম্প্রসারণ এবং ওপিডি উদ্বোধন করে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি টিকার জন্য নিবন্ধনের বয়সসীমা ১৮ বছর পর্যন্ত করার সুপারিশ করেছে। আমরা চিন্তা করছি, টিকার জন্য বয়সসীমা আরও কমিয়ে আনা যায় কিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল নাগরিককে ক্রমান্বয়ে টিকার আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। উনারও একটা নির্দেশনা আছে। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটিও আমাদের জানিয়েছে ১৮ বছর এবং তার ঊর্ধ্বে টিকা দেয়া যায় কিনা। জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজে পাঠাতে চাই। শিক্ষকদের টিকা দিচ্ছি, এখন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যারা আছে, তাদেরও টিকার আওতায় নিয়ে আসবো। তাদেরকে স্কুল-কলেজে যাওয়ার সুযোগ করে দেবো। কারণ, তাদের জীবনের একটা বছর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য, জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে গত ২৬ জানুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়। শুরুতে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকরা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারতেন। গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ৩৫ বছর হলেই টিকার জন্য নিবন্ধন করা যাবে। তবে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সম্মুখ সারিতে কাজ করছেন, তাদের জন্য এই বয়সসীমা প্রযোজ্য নয়।
জাহিদ মালেক জানান, দেশে এখন ৪৫ লাখ ডোজ টিকা মজুত আছে। চীনে আরও দেড় কোটি ডোজ টিকার অর্ডার দেয়া আছে। এ মাসের শেষে সেখান থেকে কিছু টিকা পাওয়া যাবে। এছাড়া কোভ্যাক্স থেকেও অ্যাস্ট্রেজেনেকার ২৯ লাখ ডোজ বরাদ্দ রয়েছে। দেশে যারা ১ম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে ২য় ডোজের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা এই অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন থেকে ২য় ডোজ নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি ফাইজারের ভ্যাকসিনও আগামী মাসে আসবে। সুতরাং বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন এনে তা ভালোভাবে রেখে বন্টন করতে কোন সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে প্রায় তিন কোটি ডোজ টিকা সংরক্ষণ করার সক্ষমতা আছে। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রাখা যায়, এমন প্রায় দেড় কোটি, মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখার সুযোগ আছে ২০ লাখ ডোজ। বিএডিসিতে প্রায় ১ কোটি ডোজ টিকা রাখা যাবে। এই দুটি জায়গা হিসাব করলে প্রায় তিন কোটির কাছাকাছি টিকা রাখার সুযোগ আছে আমাদের। বেসরকারি আরও কয়েকটি জায়গায় আমরা ১০-১৫ লাখ ডোজ টিকা রাখতে পারবো।
স্বাসস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আরও কিছু ফ্রিজার কেনার। এ বিষয়ে ডিজি হেলথকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় নতুন করে আরো ২০০০ চিকিৎসক ও ৪০০০ নার্স নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি টেকনোলজিস্ট নিয়োগের কাজও চলমান রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ঢাকা মেডিকেলে নতুন করে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ১৩টি আইসিইউ বেড, ১টি ডায়ালাইসিস সেন্টার ও ৪টি ভেন্টিলেটর স্থাপন বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ঢাকা মেডিকেলের ৪টি ভ্যান্টিলেটর উপহার হিসেবে প্রদান করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মাসুদ রানা।
স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, সমালোচনা হওয়া উচিৎ যারা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তি করে তাদেরকে নিয়ে, যারা মুখে মাস্ক পড়ে না তাদেরকে নিয়ে। দেশে এখনো খাদ্যের অভাব নেই, শিল্প বন্ধ হয়নি, স্বাস্থ্যসেবা চলমান রয়েছে তাহলে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কেন এত চক্রান্ত? এই চক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে ম্লান করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর (ডা.) কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মাসুদ রানা প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন