শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সোহাগপুর বিধবাপল্লীর বিধবারা প্রথম কোরবানি দিলেন

শেরপুর জেলা সংবাদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০২১, ৪:২৬ পিএম

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী সোহাগপুর বিধবাপল্লীর বাসিন্দারা স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এবার নিজেরাই করলেন প্রথম কোরবানি। আর এ কোরবানির আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পবিত্র ঈদুল আজহায় স্মৃতিবিজড়িত সোহাগপুরের শহীদ পরিবারের বিধবাদের ঈদ উদযাপনের জন্য এ উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ ২০ জুলাই মঙ্গলবার সোহাগপুরের বিধবাদের কোরবানির জন্য একটি গরু উপহার দেন। আজ ২১ জুলাই ঈদের নামাযের পর ওই গরুটি কোরবানী দেন তারা।

নিজেরা গরু কোরবানি দিতে পেরে খুশি শহীদ পরিবারের বিধবা ও তাদের স্বজনরা। একই সঙ্গে ৮৭ শহীদ পরিবারের মাঝে সেমাই, চিনিসহ বিভিন্নসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিলো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

নজির আহমেদ নামে এক কলেজ শিক্ষক জানান, ‘আমার জানামতে একজন জেলা প্রশাসক পেলাম, যিনি বিধবাপল্লীর জন্য প্রথম কোরবানির ব্যবস্থা করেছেন। ধন্যবাদ স্যারকে।’

বিধবাপল্লীর বাসিন্দা হাফিজা বেওয়া বলেন, ‘৫০ বছর পর আমরা এবার নিজেরাই কোরবানি দিতে পাইরা আমরা খুব খুশি। প্রতি বছর আমরা মাইনসের দেহি, তাহাই থাকতাম। মানুষ দিলে কোরাবানির গোস্ত খাবার পাইতাম, তা-না হলে খাবারই পাইতাম না।’ আর এবার নিজেদের গরুর গোস্ত পেলাম।

বিধবাপল্লীর আরেক বাসিন্দা হাছান বানু বলেন, ‘আমাগো ডিসি স্যার এডা গরু দিছিল। ডিসি স্যার জন্যে ইবার আমরা নিজেরাই গরু কোরবানি দিবার পাইছি। আমরা খুব খুশি। আমরা দোয়া করমু ডিসি স্যার যেন মেলা দিন বাইছা থাহে।’

সোহাগপুর বিধবাপল্লী শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর বাসিন্দারা এবার নিজেদের করা কোরবানির মাংস খেতে পারতেছে। এই আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। অনেকেই অনেকভাবে সহায়তা করেছেন, কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসক এবারের ঈদে ৭৬ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কিনে দেয়ায় তার প্রতি শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের অসীম কৃতজ্ঞতা।

জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ বলেন, ‘যাদের আত্মত্যাগে আমরা এ স্বাধীন দেশ পেয়েছি, তাদের স্বজনদের ফেলে আমরা কি ঈদ করতে পারি? আমি কোরবানির গরুর ব্যবস্থা করেছি, একই সঙ্গে ঈদসামগ্রীরও ব্যবস্থা করেছি। ওনারা খুশি হয়েছেন জেনে আমারও ভালো লাগছে।’

শেরপুর নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের বেনুপাড়া এলাকায় ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকহানাদার বাহিনী নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ১৮৭ জন নিরীহ পুরুষকে হত্যা করে। হানাদার বাহিনীর ধর্ষণের শিকার হন ১৪ নারী। এরপর থেকে সোহাগপুর গ্রামটি বিধবাপল্লী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধের পর ৫৬ জন বিধবা বেঁচে ছিলেন। বর্তমানে বেঁচে আছেন ২৩ জন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন