রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

এবার ঘরই তার ‘অলিম্পিক’ ভেন্যু!

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

অলিম্পিক গেমস এলেই বাক্স-পেটরা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তেন ভিনদেশের উদ্দেশ্যে। যে করেই হোক ‘ম্যানেজ’ করতেন অবসর, ভিসা, টিকিটসহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্রাদি। গত ৩০ বছরে প্রতিটি গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের সাক্ষী কোইয়োকো ইশিকাওয়া। ভেন্যুতে বসে খেলা দেখেছেন ইভেন্টগুলো। অথচ, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। এবার অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে দেশের মাটিতে আয়োজিত হচ্ছে অলিম্পিকের আসর। কিন্তু ৫১ বছর বয়সী এই নারীর আজীবনের আক্ষেপ হয়েই যেন থাকতে চলেছে আসরটি! করোনার কারণে এবারের অলিম্পিক গেমসে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে পারবেন না কোনো দর্শকই!
তবে বসে থাকার পাত্রী যে নন তিনি! ভেন্যুতে যেতে না পেরে বলতে গেলে এবার ইশিকাওয়ার নিজের ‘উঠোনে’ বসাতে চলেছেন অলিম্পিক গেমস। নিজ বাড়িকে ছোটখাটো একটা অলিম্পিক ‘ভেন্যু’ বানিয়ে ফেলেছেন ইশিকাওয়া। বাড়ির সামনে বানিয়েছেন টোকিও অলিম্পিকের লোগো। ঘরভর্তি সাজানো টোকিও অলিম্পিকের জার্সি, টি-শার্ট। দুই হাতে জাপানের পতাকা। কপালে বাঁধা টোকিও অলিম্পিকের হেড ব্যান্ড। টোকিওতে নিজ বাড়ির সামনে চিরায়ত জাপানি পোশাকে রেফারিদের মতো বাঁশি বাজিয়ে ব্যতিক্রমী উদযাপন শুরু করে দিয়েছেন ইশিকাওয়া।
সেই ১৯৯২ সালের বার্সেলোনা অলিম্পিক থেকে এ পর্যন্ত সব অলিম্পিক গেমসে দর্শক হিসেবে থাকা ইশিকাওয়ার সব গেমসের বিভিন্ন টিকিট, স্যুভেনির, পতাকা, টুপি থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ঘরে। অলিম্পিক গেমসের ‘মহাভক্ত’ ইশিকাওয়া বাধ্য হয়েই এবার বাড়িতে টেলিভিশনে বসে খেলা দেখবেন। তাই বলে সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের দর্শক, সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ কি থেমে থাকবে? মোটেও না। ইশিকাওয়া পরিকল্পনা করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দর্শকের সঙ্গে সরাসরি টেলিকনফারেন্স করবেন।
এই করোনা মহামারির মধ্যেও যেসব দর্শক একসঙ্গে ভিন্ন উপায়ে বসে খেলা দেখতে পারেন, সেটার নানামুখী পরিকল্পনাও করেছেন তিনি। ইশিকাওয়া এমন একটা বিশেষ উপলক্ষকে রাঙিয়ে নিতে চান নিজের মতো করে, ‘অলিম্পিক একটা বিশেষ উপলক্ষ এবং আপনার জীবনের যেকোনো বিশেষ উপলক্ষেই সবার সঙ্গে আনন্দ করতে চাইবেন। আমিও তা করতে চাই। পদ্ধতিটা যেমনই হোক না কেন, উদযাপনের মৌলিক নীতিটা তো বদলাবে না।’
অবশ্য এত কিছুর পরও কুস্তি দেখার টিকিট কিনেছেন ইশিকাওয়া। আশা করছেন বদ্ধ ঘরে দর্শকছাড়া খেলা দেখানোর নিয়মটা তুলে নেবেন আয়োজকেরা। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে অবশ্য তিনি চাইলেও ভেন্যুতে বসে খেলা দেখতে পারবে না। করোনার কারণে দর্শকদের জন্য এমন নিষেধাজ্ঞা তার জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। ইশিকাওয়া মানচিত্রের মাধ্যমে এবং বই পড়ে বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। গেমসের সময় সারা বিশ্বের অ্যাথলেটরা কেমন খাবার খান, কেমন পানীয় পান করেন— সেগুলোর একটা ধারণাও নেবেন তিনি।
এবারের গেমসকে অন্য রকম অলিম্পিক গেমস মনে হয়েছে ইশিকাওয়ার, ‘এটা একটা অন্য রকম অলিম্পিক গেমস। যদি আপনি বিভিন্ন ভেন্যুতে ঘোরাঘুরি করেন, এক দিনে সর্বোচ্চ তিনটি ইভেন্ট দেখতে পারবেন। কিন্তু টেলিভিশনে এক দিনে সহজেই ১০-১৫টা ইভেন্ট দেখা যাবে। আর এভাবে আপনি অপ্রচলিত খেলাধুলা সম্পর্কেও জানার অনেক সুযোগ পাবেন এবং আরও অনেক দেশ সম্পর্কে জানতে পারবেন, যাদের সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণাই ছিল না আগে। এমন অস্বাভাবিক অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে আমি সারা বিশ্ব সম্পর্কে আরও বেশি কিছু জানতে চাই।’
৩০ বছর আগে প্রথম যেদিন অলিম্পিক গেমসের ভেন্যুতে বসে খেলা দেখেছিলেন ইশিকাওয়া, এখনো সেই অনুভূতি থাকলেও বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন ইশিকাওয়া, ‘এক দিক দিয়ে ভাবলে অবশ্যই আমি গেমসটা মাঠে বসে দেখতে চাই। কিন্তু অন্য দিকে, আমি এটা ভেবে আনন্দিত, যেভাবেই হোক নিরাপদেই অলিম্পিক গেমসটা হচ্ছে। সবার আগে আমাদের নিরাপত্তা জরুরি এবং বিশ্বের সবার জীবনের নিরাপত্তা দরকার।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন