চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা : কোনো প্রকার আইন-কানুন না মেনেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবাধে গড়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান। অতিরিক্ত লাভের আশায় বিভিন্ন হাটবাজারেও এসব দোকান দিনদিন বৃদ্ধি পেলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। মহাসড়কের নানা স্থানে অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা সমস্যায় পড়েছেন বৈধ ব্যবসায়ীরাও।
জানা গেছে, এসব দোকানে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিনসহ বিক্রি হয় সকল প্রকার জ্বালানি দ্রব্য। দোকান মালিকদের সাথে রয়েছে তেল চোরাকারবারীদের যোগসাজশ। ফলে রাত নামতেই পার্কিং করা গাড়ি থেকে চলে তেল চুরি। গাড়িগুলো থেকে এভাবে জ্বালানি তেল চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের চেয়ে লোকসানের ঘানি টানছে গাড়ির মালিকরা।
কয়েকজন গাড়ির মালিক জানান, মহাসড়কের পাশেই রয়েছে এসব অবৈধ তেলের দোকান। সামনে ঝুপড়ির মতো ছোট্ট একটি দোকান থাকে, কিন্তু পেছনে থাকে অনেক প্রকার ড্রাম। তেল চুরির পাইপসহ নানান সরঞ্জামই এই ব্যবসার পুঁজি। রাস্তার পাশে ওদের চোরাই সিগন্যাল হিসেবে একটি ড্রাম থাকে শুধুমাত্র। যারা চুরি করে তেল বিক্রি করবে ওরাই ওদের চেনে। গাড়ি থামাতেই ইশারায় কথা সেরে দ্রুত তেল চুরি ও লেনদেন সেরে চলে যায়। দূরপাল্লার ট্রাক ও পেট্রোলিয়াম ট্যাংকারগুলোই ওদের টার্গেট। এছাড়া তেল চুরির কারণে তেল সরবরাহকারী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানিসহ জ্বালানি খাতে ব্যাপক খরচ গুনতে হচ্ছে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। আবার একই সাথে অবৈধ দোকানের ভেজাল মিশ্রিত তেল-মবিল ব্যবহারের ফলে ইঞ্জিনে নানা ত্রুটি দেখা দেয় বলে জানান তারা।
জানা গেছে, গাড়িযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন তেলের পাম্পে জ্বালানি তেল পরিবহনের সময় চালকের যোগসাজশে চোর সিন্ডিকেট মালিকের অগোচরে তেল চুরি করে ড্রাম ভর্তি করে রাস্তার পাশের দোকান-টংঘরে রেখে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বিক্রি করে আসছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ দীঘিরপাড়, চিওড়া রাস্তার মাথা, আটগ্রাম রাস্তার উত্তর পাশে, পুলক সিনেমা হলের পাশে, আমানগ-া নতুন ও পুরাতন রোড, হাড়িসর্দার, বাঁকা বটগাছ, ধনুসাড়া রাস্তার মাথাসহ মহাসড়কের ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের কমপক্ষে ২০ পয়েন্টে মালিকের অগোচরে ট্যাংক লরি থেকে তেল নামিয়ে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে অকটেন ও পেট্রোলবাহী একটি গাড়ি চট্টগ্রাম থেকে হাড়িসর্দার দীঘির পাড়ে চোরাই তেলের ব্যবসায়ী আবদুল কাদেরের দোকানের সামনে আসে। রাতে চালকের যোগসাজশে কাদের তার সঙ্গী আবু বকর ও ইউসুফকে নিয়ে ওই গাড়ি থেকে পেট্রোল ও অকটেন নামিয়ে ড্রামভর্তি করার সময় জ্বলন্ত সিগারেট থেকে আগুন ধরে যায়।
মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে একটি তেলবাহী লরি, একটি মিনি ট্রাক, দু’টি দোকানঘর, বিপুল পরিমাণ তেল ও তেলভর্তি ড্রাম পুড়ে যায়। এতে আহত হয় চারজন। তারা হলেন- চৌদ্দগ্রামের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে আশিক মিয়া (২০) ও নোয়াপাড়া গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে পিয়াস উদ্দিন (১৩), নাঙ্গলকোট উপজেলার তপোবন গ্রামের জাকির হোসেন (২৮) ও মদনপুর গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মো. বাবু (১৯)।
এর আগের বছর ২৪ সেপ্টেম্বর জগন্নাথদীঘির পাড়ে একটি তেল দোকানে আগুন লেগে মালিক ও কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন; দোকান মালিক জগন্নাথ দীঘি ইউনিয়নের নারানকরা গ্রামের আবদুর রউপ (৬০) ও একই দোকানের কর্মচারী গুণবতী এলাকার হাসান (২৫)। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এসব চোরাই তেলের অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে স্ব স্ব এলাকার কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। অবৈধভাবে গড়ে উঠা তেল ব্যবসার দ্বারা অপরাধ বৃদ্ধি পেলেও প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। ফলে অবৈধ ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা পরিচালনায় কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা করছে না। বরং প্রসারিত হচ্ছে তাদের কর্মকা-। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই থেকে শুরু করে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক স্থানে গড়ে উঠা চোরাই তেলের অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মহাসড়ক এলাকার নিরাপত্তার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনেক অভিজ্ঞমহল মনে করেন।
জনৈক পিকআপ ভ্যানের মালিক বেলাল হোসেন জানান, চালকরা কম দামের ভেজাল তেল ক্রয় করে গাড়িতে ব্যবহার করায় প্রায় সময় ইঞ্জিনে কাজ করাতে হয়। এছাড়া চুরি করে তেল বিক্রি করায় গাড়ি ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে।
মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ আজম জানান, এটা আমাদের দায়িত্ব্ না। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বারাই সম্ভব অবৈধ তেলের দোকান বন্ধ করা।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, অবৈধ তেলের দোকানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন