দুই দিনের টানা প্রবল বৃষ্টিপাতে উখিয়া-টেকনাফে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবে ছয় রোহিঙ্গাসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পৃথক ঘটনায় তাদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এসময় আহত হয়েছেন আরো ৫ জন।
জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে পাহাড় ধসে মারা যায় উখিয়ার ক্যাম্প-১০ এর বøক-জি/৩৭ এর বাসিন্দা শাহ আলমের স্ত্রী দিল বাহার ও ছেলে শফিউল আলম। এ সময় শাহ আলমের মেয়ে নুর ফাতেমা ও ছেলে জানে আলম গুরুতর আহত হয়। একই সময় ক্যাম্প ১০ এর বøক জি/৩৮এ আরো ৩ জন নিহত হয়েছেন। তরা হলেন ইউসুফের স্ত্রী, ছেলে আব্দুর রহমান ও মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা। ১৬ এপিবিএন অধিনায়ক এসপি মো. তারিকুল ইসলাম তারিক এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণের কারণে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ক্যাম্পগুলোতে ধসের ঘটনা ঘটেছে। আহতরা চিকিৎসাধীন আছেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। মো. তারিকুল ইসলাম তারিক জানান, ঘটনার বিষয়ে ক্যাম্প-১০ এর সিআইসিকে অবগত করা হয়েছে। পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। এ বিষয়ে পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পে জিডি করা হয়েছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মু. শামসুদ্দৌজা বলেন, ভারী বর্ষণে ১০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫ জন ও ক্যাম্প ৮ ইস্টে পানিতে ডুবে আরও একজন শিশু মারা গেছে ৷ আহতদের উদ্ধার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে পাহাড় ধসে রকিম আলী নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি মনিরঘোনা গ্রামের মৃত আলী আহমদের ছেলে। বাড়িতে অবস্থানকালে হঠাৎ পাহাড় ধসে তিনি আহত হন। উদ্ধার করে বালুখালি তুর্কি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী, হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী ও হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ি আইসি এসআই মাহামুদুল হাসান মাহবুব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পাহাড় ধসের ঘটনার সত্যতা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. পারভেজ চৌধুরী। তিনি জানান, নিহতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। পাশাপাশি ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে কক্সবাজার জেলার উপক‚লীয় এলাকা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে তলীয়ে গেছে হাজারো ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কমপক্ষে দেড় লক্ষাধিক মানুষ। ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ওদিকে টেকনাফের হ্নীলা এলাকায় নয়াবাজার সোজা চাংগ্রী খাল এলাকায় ৬নং ¯øুইস গেইটের নাফ নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে দুই থেকে তিন শত চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া ও পেকুয়া সহ উপক‚লীয় এলাকার হাজারো বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে চিংড়িঘের ফসলি জমি দোকানপাট ও রাস্তাঘাট। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। প্রবল বৃষ্টিপাতে এবং পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শেড। পানিবন্দি হয়ে আছে কমপক্ষে লক্ষধিক রোহিঙ্গা। উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পৃথক তিন জায়গায় পাহাড় ধসে প্রান হারিয়েছে ৬ রোহিঙ্গা সহ ৭ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন