বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে পাহাড় ধস

টানা বর্ষণে প্লাবিত বন্দরনগরী : পানিবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ নিহত ৪ আহত ১১

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রাম। গভীর রাতে পাহাড় ধসে দুই বোনসহ প্রাণ গেছে চারজনের। আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। অবিরাম বর্ষণ আর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা। গতকাল শনিবার ভোরে এবং গত শুক্রবার মধ্যরাতে নগরীর আকবর শাহ থানার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনা ও ফয়’স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকায় পৃথক এ দুটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাহাড় ধসে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রতিবছর বর্ষা আর ভারী বর্ষণ শুরু হতেই পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে লোকজনে সরিয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু হলেও বর্ষা শেষে আবার সবকিছু চলে আগের মতো। অক্ষত থেকে যায় পাহাড়ের কোলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে গড়ে উঠা বসতি। আর ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুরা। গত শুক্রবার রাত থেকে টানা বর্ষণ হতেই ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা।

নগরীর আকবর শাহ থানার বরিশালঘোনায় নিহতদের মধ্যে একটি পরিবারের দুই বোন রয়েছেন। তারা হলেন-মাইনুর আক্তার (২০) ও শাহীনুর আক্তার (২৪)। শাহীনুরের যমজ শিশুসন্তান দুর্ঘটনায় বেঁচে যায়। এই ঘটনায় আরো দুজন আহত হন। তারা হলেন- মাইনুর ও শাহীনুরের বাবা ফজলুল হক ও মা রানু বেগম। ফয়’স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন- লিটন (২৩) ও ইমন (১৪)। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টির সময় পাহাড় ধসে একটি পরিবারের সদস্যরা চাপা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। গতকাল শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত সেখানে উদ্ধার কাজ চলে। অন্যদিকে ভোরে ফয়’স লেক লেকসিটি আবাসিক এলাকায় অন্য এক পাহাড়ধসে লিটন ও ইমন নামের দুজনের মৃত্যু হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে আরো পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নগরীর লালখান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগরীতে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবিরাম এই বৃষ্টি সেই সাথে প্রবল জোয়ারে নগরীর নিচু এলাকায় পানি জমে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটু ও কোমর পানির নিচে তলিয়ে যায় নগরীর বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি। দোকানপাট, গুদাম আড়তসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে যায়। পানিবদ্ধতার কারণে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। নগরীর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর, হালিশহর, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ নগরীর নিচু এলাকায় পানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে।

সড়কে জমে থাকা পানিতে ডুবে যানবাহনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এসময় যানবাহন না পেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে কেউ কেউ গন্তব্যে যান। আবার অনেককে যানবাহনের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতেও দেখা যায়। আরো দুইদিন চট্টগ্রাামে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ভারী বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে। নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে ১৭২.৫ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে পতেঙ্গায় রেকর্ড হয় ২৭.৬ মিলিমিটার।

মেয়র রেজাউলের ঘরেও হাঁটু পানি : টানা বৃষ্টিতে নগরীতে পানিবদ্ধতার মধ্যে সিটি মেয়র এম রেজাউল কমির চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাড়িতেও পানি উঠেছে। গতকাল শনিবার সকালে বহদ্দার বাড়ি এলাকা ও মেয়রের বাড়ি সংলগ্ন মূল সড়ক থেকে বাড়ির ভেতর পর্যন্ত পানিবদ্ধতা দেখা যায়। পানিতে অর্ধেক ডুবে ছিল মেয়রের গাড়ি। বেলা আড়াইটার দিকে মেয়র সাংবাদিকদের জানান, আমাদের এলাকায় পানি উঠেছে। এমনকি আমার বাড়ির উঠানে এবং ঘরের ভেতরও এক হাঁটু পানি। পানি ডিঙিয়েই দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন বলেও জানান তিনি। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই ও ৩ আগস্টসহ কয়েক দফায় বর্ষায় ডুবেছিল সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১৯ জুন, ২০২২, ১২:৪১ পিএম says : 0
পানি জলবদ্ধতার শিরোনাম হচ্ছে এখন। দায়িত্বশীল মানুষের কাছে কখনো চট্টগ্রামের দায়িত্ব ছিল? দায়িত্বজ্ঞানহীন কাছেই ছিলো চট্টগ্রামের জলবদ্ধতার দায়িত্ব? একেবারেই বাপ মা ছাড়া এতিমখানা চট্টগ্রাম। কঠোরভাবে বলছি এই জন্যেই যে নগরীর নালা নদ্ধমা ভরপুর ময়লা আবজ্বনা বালি মাঠিতে। নগরীর খালতো চাকতাই খালএখন রোগ জিবানুর ইন্ডাস্ট্রিতেই পরিণত হয়েছে। দুষিত কালো গদ্ধ পানি আবজ্বনা ময়লাতেই ভরাট কোথাও খালের রিটার্নিং ওযাল হচ্ছে কোথাও ভেরিবাদ কোথায় ময়লার পাহাড়ের মত উচু। কেওনেই বলার। কোথাও আর্মির কাজ হচ্ছে ইত্যাদি মধ্যে জগাখিচুড়ি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বর্তমান মেয়র পর্ববক্তিদের পাওয়া কর্মকান্ডের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন। রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যা কিছু প্রযোজন দিচ্ছেন। আমরা চট্টগ্রামের মানুষের দুরভাগ‍্য আমরা সঠিকভাবে নেতৃত্ব পাচ্ছি না।নগরীর জলবদ্ধতার জন্যে পানি নিস্কাসনের জন্যে প্রযোজন ছিল। ওয়াটার লেভেলের মত মাষ্টার প্লান পরিকল্পনা। পানি নিস্কাষন পদ্ধতি ।কিভাবে চট্টগ্রামের পানি দ্রত নালা নর্দমা খাল ড্রেন দিয়ে কর্নফুলী নদীতে যাবেন। বর্ষা আসলে লিখালিখি সমালোচনা।সমালোচনা ইত্যাদি। বাস্তবতা হচ্ছে সিডিএ সালাম সাহেবের মত মানুষের বড়ই প্রযোজন চট্টগ্রাম বাসীর।চট্টগ্রামের মানুষের জলবদ্ধতার জন্যে। প্রযোজন নগর পিতার একক ক্ষমতা শক্তিশালী নেতৃত্ব বিভিন্ন প্রতিষ্টানের এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে শক্ত ভাবে মোকাবেলায় বর্তমান মেয়র এগিয়ে যাবেন। আশাবাদী।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন