শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মাত্র ৩৪ সেকেন্ডে বন্ধ হবে রক্তঝরা

সাপের বিষের আঠায় উচ্ছ্বসিত ডাক্তাররা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

ক্ষতস্থান থেকে দ্রুত রক্ত বের হওয়া বন্ধে সাপের বিষ থেকে তৈরি হচ্ছে ওষুধ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই ওষুধকে বলা হচ্ছে ‘সুপার গøু’। আর এতেই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি কমিয়ে অপারেশন থিয়েটারে বিপ্লব আনা সম্ভব বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
দক্ষিণ আমেরিকার ল্যান্সহেড স্নেক। এর বৈজ্ঞানিক নাম বোথ্রপস এট্রকস। এক ছোবলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। অথচ এই ভয়ঙ্কর সাপের বিষকে ব্যবহার করেই তৈরি করা হয়েছে এক জৈব আঠা। ক্ষতস্থান জুড়ে রক্ত বের হওয়া বন্ধ করতে যা সময় নেয় নামমাত্র। ইঁদুরের কাটা লেজ ‘সুপার গøু’ ব্যবহারে মাত্র ৩৪ সেকেন্ডে জোড়া লেগেছে।
অপরদিকে লিভারের দু’টো অংশ জোড়া লাগতে সময় নিয়েছে ৪৫ সেকেন্ড। তবে শুধু ক্ষতস্থান বা কেটে যাওয়া অংশে আঠা দিলেই হবে না। ক্ষতস্থানে জোরাল আলোও ফেলতে হবে। আলোর সঙ্গে মিশে কাজ করবে এই ‘সুপার গøু’। মশারির মতো জালিকা বানিয়ে রক্ত বের হওয়া বন্ধ করবে।

বর্তমানে অপারেশন থিয়েটারে সার্জনরা যে আঠা ব্যবহার করেন, তা রক্ত বের হওয়া বন্ধে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় নেয়। ‘সুপার গøু’ সে কাজই করবে মাত্র ৩৪ থেকে ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে। এমন মহৌষধের সন্ধান পেয়ে চিকিৎসকমহল স্বাভাবিকভাবেই আশাবাদী।
বর্তমানে চালু বিভিন্ন ‘গøু’ নিয়ে অন্য সমস্যাও রয়েছে। এগুলো মূলত পলিইথিলিন গøাইকল এবং সায়ানো এক্রিলেটসের মতো কৃত্রিম রাসায়নিক দিয়ে তৈরি। শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক, তাই বেশি প্রয়োগের উপায় নেই। অনেক সময় প্রয়োগস্থানে প্রবল জ্বালা-যন্ত্রণাও হয়। আবার প্রাকৃতিক অন্যান্য আঠার কার্যকারিতা নিয়ে বিবিধ প্রশ্ন রয়েছে। বেশি রক্ত বের হওয়া বন্ধে সেগুলোর ক্ষমতা নেই।

এমন অবস্থায় নিরাপদ ও কার্যকর একটি জৈব আঠার সন্ধানে ল্যাবরেটরিতে দিন-রাত কাজ করছিলেন কানাডা ও চীনের একদল বিজ্ঞানী। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল মিলেছে ল্যান্সহেড সাপের বিষে। এই সাপের মধ্যে হদিস মিলেছে ব্যাকট্রোসোবিন বা রেপটিলেজ এনজাইমের, যে উৎসেচকটি রক্ত জমাট বাঁধার আসল কারিগর। ল্যান্সহেডের কামড়ের পর নির্গত বিষ রক্তনালির ভিতরকার রক্ত জমাট বাধিয়ে দেয়।
‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ সায়েন্স গোষ্ঠীর একটি বিশ্ববন্দিত জার্নালে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ল্যান্সহেড সাপের বিষে রয়েছে রেপটিলেজ নামক উৎসেচক বা এনজাইম। এটি সহজেই রক্তের ফাইব্রিনোজেন প্রোটিনকে ভেঙে সুতোর আকারে ফাইব্রিন প্রোটিন তৈরি করে। যা জালকের মতো কাজ করে রক্তকণিকাদের আটকে দেয় ও রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় ইন্ধন জোগায়।

এই স্বাভাবিক অথচ ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক ঘটনাকে ভিত্তি করে একদল গবেষক এমন একটি জৈব আঠা তৈরিতে উৎসাহিত হয়েছিলেন, যা দ্রæত রক্তক্ষরণ ঠেকাতে সক্ষম। প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন কোলাজেন সংগ্রহ করে প্রথমে তা থেকে জিলাটিন প্রোটিন তৈরি করা হয়। রাসায়নিকের সাহায্যে তাকে সামান্য পরিবর্ধন করে পাওয়া যায় মিথাইল অ্যাক্রিলেট জিলাটিন।

আপাত নিরীহ এই তরল বস্তুটি আলোর সংস্পর্শে এলে একটা ‘ক্রশ লিঙ্কড প্রোডাক্ট’ পাওয়া যায়, যা আদতে মজবুত বুননের একটি মশারির জালির মতো। একে কাজে লাগিয়েই গবেষকদল এই জৈব আঠা তৈরি করেছেন। যাতে রয়েছে রেপটিলেজ ও মিথাইল অ্যাক্রিলেট জিলাটিন। তা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে টর্চের আলো ফেললে ক্ষত জায়গায় জিটালিন ক্রস লিংকিংয়ের জন্য চাদর তৈরি হবে এবং রেপটিলেজ এনজাইমের উপস্থিতিতে ফ্রাইব্রিন তৈরি হয়ে রক্তকণিকার চারপাশটা বেঁধে ফেলবে।

এই সুপার গ্ল প্রাথমিক চিকিৎসাতেও গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাদের অনুমান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির রক্তঝরা ঠেকাতেও এই আঠা বড় ভূমিকা নিতে পারে। সূত্র : বিজনেসইনসাইডার, মেডিক্যাল ডেইলি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
রকিবুল ইসলাম ২৯ জুলাই, ২০২১, ৩:০২ এএম says : 0
খুবই ভালো খবর
Total Reply(0)
উজ্জল ২৯ জুলাই, ২০২১, ৩:০৩ এএম says : 0
চিকিৎসকদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন