নতুন নামকরণ নিয়ে দীর্ঘ তিন দশক পর ফের চালু হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) পুরস্কার। এবার এ পুরস্কারের নামকরণ হয়েছে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে, ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শহীদ শেখ কামালের নামে এই পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) চারবারের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, স্বর্ণজয়ী আরচ্যার রোমান সানা, স্বর্ণজয়ী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা ও ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্তরা।
বৃহস্পতিবার ছিল শহীদ শেখ কামালের ৭২তম জন্মদিন। এদিন সকাল ১১টায় এনএসসি’র শেখ কামাল মিলনায়তনে পুরস্কারপ্রাপ্তরা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেনের হাত থেকে চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টোকিও অলিম্পিক থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ক্রীড়া সচিব আখতার হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনএসসির সচিব মো. মাসুদ করিম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না। পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধক্রমে ক্রীড়া সচিব পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার হস্তান্তর করেন। সাত ক্যাটাগরিতে ১০ জন ব্যক্তি ছাড়াও দু’টি প্রতিষ্ঠান শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার পেয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের দেয়া হয়েছে ১ লক্ষ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র।
প্রথমেই পুরস্কার গ্রহণ করেন তিন ক্রীড়াবিদ আরচ্যার রোমান সানা, সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা ও ভারোত্তালক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। এরা তিনজনই সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের স্বর্ণজয়ী খেলোয়াড়। এরপর উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হিসেবে পুরস্কার নেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আকবর আলী, ক্ষুদে দাবাড়– ফিদে মাস্টার ফাহাদ রহমান ও উঠতি নারী ফুটবলার উন্নতি খাতুন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের ও কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কৈ শ্য ল হ্ন। সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কার নিতে উপস্থিত থাকতে পারেননি দেশের বর্ষিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন জিকরুল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পেয়েছে সেরা ক্রীড়া সংস্থার পুরস্কার। বিসিবির পক্ষ থেকে এ পুরস্কার নেন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। পৃষ্ঠপোষক ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন ওয়ালটনের উর্ধতন কর্মকর্তা এফ এম ইকবাল বিন আনোয়ার ডন। সবশেষে পুরস্কার গ্রহণ করতে মঞ্চে আসেন আজীবন সম্মাননা পাওয়া দেশের ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি বাফুফের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন।
নিজ ক্যারিয়ারে অনেক পুরস্কারই পেয়েছেন সালাউদ্দিন। দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পদকও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কারকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন তিনি। পুরস্কার গ্রহণ শেষে উচ্ছসিত সালাউদ্দিন বলেন, ‘অন্য সব পুরস্কারের চেয়ে আমার কাছে এই পুরস্কারের গুরুত্ব ও মাহাত্ম সবচেয়ে বেশি। আমি খুব আনন্দিত যে এই পুরস্কার পেয়েছি।’
এই পুরস্কারের পেছনে ভিন্ন ধরনের আবেগ জড়িত রয়েছে সালাউদ্দিনের। তিনি প্রয়াত শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। শেখ কামালের সঙ্গে তার ছিল দারুণ ঘনিষ্ঠতা। প্রিয় বন্ধুকে স্মরণ করে সালাউদ্দিন বলেন, ‘শেখ কামাল এত অল্প বয়সে এত অল্প দিনে যা করেছে তা সত্যিই অসাধারণ। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
শিলং-গৌহাটি এসএ গেমসে রেকর্ডসহ দুই স্বর্ণপদক জয়ী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা বলেন, ‘ক্যারিয়ারে অনেক পুরস্কারই পেয়েছি। তবে এই পুরস্কারটি একটু ভিন্ন ধরনের। যিনি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের পথিকৃৎ। তার নামে পুরস্কার পাওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তা গ্রহণ করা আসলেই স্মরণীয় একটি বিষয়।’ টানা দুই এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলেন, ‘আমরা ক্রীড়াবিদরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে চাই। এ রকম সম্মাননা, পদক আমাদের ভালো কিছু করতে সামনে উদ্বুদ্ধ করে।’ সদ্যই টোকিও অলিম্পিক থেকে ফিরেছেন আরচ্যার রোমান সানা। অলিম্পিক থেকে ফেরার পরপরই এই পুরস্কার পেয়ে তিনিও বেশ উচ্ছ্বসিত। তার কথায়, ‘আমি খুব খুশি। খুবই ভালো লাগছে এই পুরস্কার পেয়ে। অলিম্পিক থেকে ফেরার পর এ পুরস্কার আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন