করোনা সংক্রমণ রোধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত তিন মাস তিন দিনে চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে ফিরেছেন ৭ হাজার ৪১ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী। নিজ খরচে হোটেলে অবস্থান করতে অর্থকষ্টে ভালো নেই চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা। গত বছর সরকারি খরচে কোয়ারেন্টিন পরিচালনা হলেও এ বছর ফেরত আসা যাত্রীদের নিজ খরচে হোটেলে অবস্থান করতে হচ্ছে। যশোরে গাজীর দরগা নামে একটি মাদরাসায় একেবারে অসহায় যাত্রীদের রাখা হচ্ছে।
ভারত ফেরত পাসপোর্টধারী যাত্রীদের আরটিপিসিআরের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও তাদের বাধ্যতামূলক বাংলাদেশে প্রবেশের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হচ্ছে। তবে যারা ভারতে প্রবেশ করছে তাদের আরটিপিসিআরের সনদ থাকলে ভারত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে নিজ গন্তব্যে যেতে পারছেন। সেখানে কোয়ারেন্টিন নিয়ম প্রথম থেকেই নেই। বেনাপোল সিটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা সত্তরোর্ধ্ব পাসপোর্ট ধারী যাত্রী হারান চন্দ্র ধর জানান, তার স্ত্রী জটিল রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনেক কষ্টে তিনি স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতে তিনি মারা যান। তার লাশ দেশে আনার মতো খরচ তার পক্ষ্যে বহন করা কষ্টকর ছিল। অবশেষে ভারতীয় দূতাবাসে আবেদন জানিয়ে স্ত্রীর সৎকার ভারতেই সেরে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে তাকে কোয়ারেন্টিন মানতে আবাসিক হোটেলে থাকতে হচ্ছে। মেয়ে-জামাই যদি খরচ না দিত তাহলে তার কষ্টের শেষ থাকত না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। চৌধুরী আবাসিক হোটেলে থাকা ভারত ফেরত চাঁদপুরের পাসপোর্ট যাত্রী মৃত্যুঞ্জয় ও গোপালগঞ্জের কৃপাসিন্দু রায় বলেন, তারা দেশের স্বার্থে কোয়ারেন্টিন নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে ফিরে হাতে আর খরচের টাকা থাকে না। এরপর আবার হোটেলে থাকতে-খেতে কেমন বেকায়দায় পড়তে হয় বুঝতেই পারছেন।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব জানান, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে বাধ্যতামূলক ভারত ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন শুরু হয়েছে। গত ১০০ দিনে ভারত থেকে ফিরছে ৭ হাজার ৪১ জন। বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার যাত্রীরা ভারত থেকে ফিরতে পারবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র থাকলে প্রতিদিন যাওয়া যাবে ভারতে। ভারত থেকে ফিরতে প্রয়োজন হচ্ছে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের ছাড়পত্র ও আরটিপিসিআরভিত্তিক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করা করোনা নেগেটিভ সনদ। শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলীফ রেজা জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভারত ফেরত যাত্রীদের নিজ খরচে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। তবে যাত্রীদের খরচ সাশ্রয়ে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর মধ্যে যাত্রীদের হোটেল ভাড়া পূর্বের চেয়ে অর্ধেক এবং যানবাহন ভাড়া নির্দিষ্ট হারে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোয়ারেন্টিন শেষে কারো যদি বাড়ি ফেরার অর্থ না থাকে বা খাদ্য কষ্টে ভোগেন তবে আবেদন করলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন দেখবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন